১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি ও তাণ্ডব এবং তারপর by ফখরুদ্দিন আহমেদ

ফখরুদ্দিন আহমেদ ১৯৭৪ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি দায়িত্বে থাকার কারণে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার হোতাদের তত্পরতা তিনি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখানে তিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিবরণ তুলেধরেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল সকাল গুলির শব্দে আমরা জেগে উঠি। এই শব্দ সঙ্গে সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় ১৯৬৫ সালের ঘানার কথা। ঘানার রাজধানী আক্রাতে রাষ্ট্রপতি নত্রুদ্ধমার পতাকাশোভিত বাড়িটি থেকে আমাদের বাসা খুব একটা দূরে ছিল না। আক্রাতে ১৯৬৫ সালে মার্চের এক সকালে একদল নিম্নপদস্থ সামরিক অফিসার অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং নক্রুমার শাসনের অবসান ঘটে। নক্রুমা তখন রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে ছিলেন। ১৫ আগস্টের গুলির শব্দে আমার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে ঘানার সেই অভ্যুত্থানের ঘটনা। কিছুক্ষণ পর বেতারে তা নিশ্চিত করা হয়।
১৫ আগস্টের আগে একজনের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি আমার দেখা ১৯৬৫ সালের ঘানার কাছাকাছি। ব্যক্তি হিসেবে নত্রুদ্ধমা খুবই জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তাঁর একদলীয় ব্যবস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, আর তাঁর একান্ত সহচরেরা প্রকৃত অবস্থা তাঁকে অবগত করেনি। অন্যদিকে, আক্রাও অত্যন্ত ব্যস্ত ছিল কূটনৈতিক তত্পরতায় এবং তা বিবেচিত হতো আফ্রিকার স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে।
১৯৭৫ সালের আগস্টের আগে দেশের পরিস্থিতি অনেকটা ১৯৬৫ সালের ঘানার মতোই ছিল। বঙ্গবন্ধু একদলীয় ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে নিজে খুব তৃপ্ত ছিলেন বলে মনে হয় না। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে যেদিন সংবিধান সংশোধন হয় সেদিন আমি মহাপরিচালক মোর্শেদ ও মহাপরিচালক আবুল আহসানকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সভাকক্ষে সাক্ষাত্ করি। আধা ঘণ্টার বেশি সময় তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা অবাক হলাম আলোচনার তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের এত সময় দিলেন! তাঁকে কিছুটা বিমর্ষ মনে হলো। তাঁর চারপাশের নিত্যদিনের মানুষদের থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছিলেন বলে মনে হলো আমাদের। সংবিধান পরিবর্তন বিষয়ে তাঁর অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেননি। পরে আমার মনে পড়ল, সাংবিধান পরিবর্তনের পর মনোনীত জেলা গভর্নরদের সঙ্গে এক সভায় আমার দিকে লক্ষ করে উচ্চস্বরে ‘তুমি বাকশালে যোগদান করোনি’ বলে খোলামেলাভাবে হেসেছিলেন। তিনি জানতেন আমি সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের ধারণার বিরোধী ছিলাম। আমার অবস্থানকে তিনি মূল্য দিয়েছিলেন বলে আমার বিশ্বাস। এ নিয়ে তিনি কোনো বিরক্তিও প্রকাশ করেননি।
অন্য একদিন পররাষ্ট্র দপ্তরসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার সময় তাঁকে বিষণ্ন মনে হলো। হঠাত্ বলে উঠলেন, দুই বছর পর তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন ও একটি বিরোধী দল গঠন করবেন। এটা স্পষ্ট ছিল যে একদলীয় ব্যবস্থা তাঁরও মনঃপূত ছিল না, এমনকি তাতে তিনি বিশ্বাসও করতেন না। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এ পদ্ধতি গ্রহণে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পোল্যান্ডের মতো দেশ একদলীয় ব্যবস্থায় ব্যাপক অথনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে। আমার ধারণা, তাঁর ওপর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ মনির প্রচণ্ড প্রভাব ছিল (১৫ আগস্ট বিদ্রোহীদের হাতে ইনিও নিহত হন)। তবে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি বাংলাদেশের থেকে আলাদা ছিল। দুঃখজনকভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের উত্তম বিচারবোধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন।
১৫ আগস্টের দুই সপ্তাহ আগে আমি সুইডেনের গণমাধ্যমের কিছু কাটা অংশ (ক্লিপিংস) নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত্ করি। এতে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতরে অসন্তোষ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন এবং সেনা কর্মকর্তাদের অভ্যুত্থান পরিকল্পনার বার্তা। এই বার্তার গুরুত্ব খারিজ করে দিয়ে তিনি আমাকে জানান, সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে ফোন করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।
গুলির শব্দ শোনার কিছুক্ষণ পর যখন অন্যতম বিদ্রোহী মেজর ডালিম প্রচারিত ‘শেখ মুজিব হত্যার’ কথা জানলাম, স্বভাবতই মর্মাহত হলাম। পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে আমি জানি বিদ্রোহীরা আমাকেও খুঁজবে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে সার্কিট হাউসে অবস্থান করছিলাম। সকাল আটটার কিছু পর জান্তার প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকজন সামরিক সদস্য আমাকে তুলে নিতে সার্কিট হাউসে এলো। সেখানে পুলিশের মহাপরিদর্শক নুরুল ইসলামকে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। আমাকে বলা হলো বেতারকেন্দ্রে আমার উপস্থিতি জরুরি। প্রস্তুতির জন্য কয়েক মিনিট সময় চাইলাম। মাথার পেছনে বন্দুক তাক করে আমাকে জিপে তোলা হলো, আমি যেন ভয়ঙ্কর কোনো সন্ত্রাসী। সার্কিট হাউসের অন্য বাসিন্দারা ভাবল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো আমাকেও হত্যা করা হবে, তারা আমার স্ত্রীকে সান্ত্বনা জানাতে এল। কিন্তু আমার স্ত্রী সাহসিকতার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন যে, আমার কিছু হতে পারে না। বেতারকেন্দ্রের পথে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তৌফিক ইমামের বাসভবনে জিপটি থামল এবং তাঁকেও তুলে নিল।
বেতারকেন্দ্রের ভেতরে খন্দকার মোশতাককে দেখলাম। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ প্রিয়ভাজন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে দেখে চরমাশ্চর্য হলাম। তাঁদের পাশে সদ্য ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তাঁদের কয়েকজনকে উদ্দেশ করে খন্দকার মোশতাক জানতে চাইলেন, আলাদা কক্ষে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন কি না। তাঁকে ত্বরিত বলা হলো, ওই কক্ষের এক কোনায় কথা বলতে। তাঁদের ওপর খন্দকার মোশতাকের যে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তা স্পষ্ট হলো। প্রথম যে প্রশ্নটি তিনি করলেন তা হলো, ভারত বাংলাদেশে আক্রমণ করবে কি না। আমার স্পষ্ট মূল্যায়ন জানতে চাইলেন। ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে আমি আমার সংশয়ের কথা জানালাম। আমি তখন বললাম পরিস্থিতির মূল্যায়ন আরও বিস্তারিতভাবে করতে এবং আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে চাই। আমি আরও বলি, বেতার ঘোষণার মাধ্যমে বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা ও জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া উচিত এবং পুলিশ-পাহারা আরও জোরদার করতে বলা উচিত। জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি আমাকে বিকেলে ব্রিফ করতে বলেন, যে বক্তৃতা নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর সন্ধ্যায় প্রচারিত হবে। যে জিপটি সার্কিট হাউস থেকে আমাকে নিয়ে আসে, সেই জিপেই পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্দেশে রওনা হই। এবার আমার দিকে কোনো বন্দুক তাক করা ছিল না। আমি এবার অনেকটা শঙ্কামুক্ত। পররাষ্ট্র দপ্তরে যাওয়ার আগে আজিমপুরে এক বেতার প্রকৌশলীকে নামাতে হতো, তাই জিপটি ঘোরাপথে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তেমন কোনো মানুষ বা রাজনৈতিক আলোড়নের লক্ষণ চোখে না পড়ায় আশ্চর্য হলাম। তাজ্জব ব্যাপার, বাকশাল বা আওয়ামী লীগের সমর্থকরা রাতারাতি উধাও এবং এমনকি যেখানে সামরিক সদস্যদের উপস্থিতি নেই, সেখানেও হত্যাযজ্ঞ ও অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বা প্রতিবাদ সংগঠিত করার কোনো চেষ্টা হয়নি।
মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে আমার সহকর্মীদের ডাকলাম ও পরিস্থিতির মূল্যায়ন করলাম। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ফোন পেলাম। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি ফোন করেন।
বিকেলে আমাকে বঙ্গভবনে ডাকা হলো। ক্ষমতার কেন্দ্রীয় ব্যক্তিটি কে তা স্পষ্ট ছিল না। আমি দেখলাম ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কিছুটা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রথমে ভাবলাম তিনিও অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু শিগগিরই বুঝলাম তিনি তাঁর নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। মাহবুব আলম চাষী সেই দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছালেন এবং তত্ক্ষণাত্ রাষ্ট্রপতি মোশতাকের মুখ্য সচিব নিযুক্ত হলেন। আসলে তিনি মোশতাকের ঘনিষ্ঠ পরামর্শক ছিলেন। এর কিছুক্ষণ আগে সেই সন্ধ্যায়ই খন্দকার মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন। তাঁর নির্দেশে চিফ অব প্রটোকল নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্যকে কড়া সশস্ত্র প্রহরায় নিয়ে আসতে যান। না এলে তাঁদের হত্যা করা হতে পারে, এই ভয়ে অধিকাংশই আসেন। যে কয়জন আসতে রাজি হননি পরবর্তী সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ড. কামাল হোসেন বিদেশে ছিলেন। খন্দকার মোশতাক লন্ডনে তাঁকে বার্তা পাঠান তাঁর মন্ত্রিপরিষদে যোগ দিতে। ড. কামালের পরিবার ঢাকায় ছিল। আর তাই সোজাসুজি প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি তিনি নিতে পারলেন না। তিনি হাইকমিশনের মাধ্যমে বার্তা পাঠান, যেহেতু তিনি চিকিত্সারত তাই তাঁর পক্ষে দেশে ফিরে আসা সম্ভব নয়। কয়েক সপ্তাহ পর জেনারেল ওসমানীর হস্তক্ষেপে কামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ড. কামাল হোসেন লন্ডনে তাঁদের নিরাপদ যাত্রার পর খন্দকার মোশতাকের সমালোচনা শুরু করেন।
পরদিন সকালে (১৬ আগস্ট ১৯৭৫) আমি বঙ্গভবনে থাকাকালে রাষ্ট্রপতি মোশতাক আমাকে ডেকে পাঠান। আমি যদি ভুল না করে থাকি, মাহবুব আলম চাষী ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ছাড়া জেনারেল সফিউল্লাহ ও জিয়াউর রহমানসহ সামরিক কর্মকর্তা ও নবীন অভ্যুত্থানকারীরা বঙ্গভবনের মন্ত্রণা কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে খন্দকার মোশতাক আমার কাছে জানতে চান, শেখ মুজিবকে কীভাবে কবর দেওয়া উচিত এবং তাঁর মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে। আমি দ্বিধাহীনভাবে বলি, যথাযথ মর্যাদা সহকারে তাঁকে কবর দেওয়া উচিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর ফল ইতিবাচক হবে। তখন দেশের ভেতর তাঁর মৃত্যুতে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে জানতে চান। আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের দিকে ইঙ্গিত করে বলি, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি ভালো জানেন। মোশতাক গম্ভীরভাবে বলেন, ‘আমি কৌশলী জবাব দিয়েছি।’
ড. কামাল হোসেন হয়তো বাংলাদেশে ফিরবেন না—এটা বুঝতে পেরে খন্দকার মোশতাক এই সময়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। খন্দকার মোশতাকের কাছ থেকে বিচারপতি চৌধুরী প্রথম যে নির্দেশনা পান তা হলো, জার্মানির বন থেকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া ও তাঁকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা। আমার পরামর্শে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী যেকোনো উপায়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করতে সম্মত হন। পছন্দমতো বিষয়টি মোকাবিলার ভার তিনি আমার ওপর ছেড়ে দেন। যেকোনো মুহূর্তে দেশ ছাড়ার জন্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী খুব উদগ্রীব ছিলেন। তবে খন্দকার মোশতাক সেই মুহূর্তে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দিতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না এবং ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরের শুরুতে লিমাতে অনুষ্ঠেয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আবু সাঈদ চৌধুরী থাকুন সেটাও চাননি। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ যেন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব না দেন সে ব্যাপারে আমি জোর সুপারিশ করি। মোশতাক শেষ পর্যন্ত তাতে সম্মত হন।

আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী অবস্থা
মাহবুব আলম চাষী আমাকে প্রথমদিকে যেসব প্রশ্ন করেন তার অন্যতম ছিল বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভ্যুত্থান কী প্রভাব ফেলবে। এই প্রশ্ন তিনি করেন ১৭ আগস্ট বিকেলে, আমার অফিসে। সেদিন সকালে বঙ্গভবনে তাঁর মুখ্য সচিব এর দপ্তর বসানো হয়। জ্যেষ্ঠ অনেককে পাশ কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু আমাকে পররাষ্ট্রসচিব করায় আমাকে সরিয়ে দেওয়ার জোর গুজব ছিল। আমি চাষীকে বললাম, আমি এই পদ ছেড়ে যেতে প্রস্তুত এবং এখনই তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারি। চাষী প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন এবং আভাস দিলেন যে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি অকপটে তাঁকে বললাম, ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ইতিবাচক ছিল। অভ্যুত্থান সব বদলে দিয়েছে। আমি আসলেই জানতাম না বাংলাদেশ কীভাবে তার অবস্থান ফিরে পাবে।
১৯৭৪ সালে ১২ জন রাষ্ট্রনেতা ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেন। তাঁরা হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নরম্যান কির্ক, যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি টিটো, মিসরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, বার্মার রাষ্ট্রপতি নে উইন, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি লিওপোল্ড সেনঘর, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গঘ হুইটলেম, ভুটানের রাজা, মালয়েশিয়ার রাজা, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি হৌয়ারি বুমেদীন এবং জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জারসহ বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন। ১৯৭৪-এর প্রথমদিকে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট জাপানের শীর্ষস্থানীয় শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী অর্থনৈতিক মিশন বাংলাদেশ সফর করে। এই সময়ে সোনারগাঁও হোটেল প্রকল্পও শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাপান সফরে যান এবং তাঁর অনুরোধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের ভবিষ্যত্ অংশগ্রহণের মূল্যায়ন করতে একটি উচ্চস্তরের জাপানি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসে।
অভ্যুত্থানের প্রধান নেতা মেজর ফারুক ও মেজর রশীদ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট আমার কাছে বারবার শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের হত্যায় বিদেশি প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। মনে হলো, নারীদের ও শেখ মুজিবের অল্পবয়সী সন্তানকে হত্যার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তারা আসলেই উদ্বিগ্ন ছিল। শেখ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত না ভুল করে ঘটা, তখনো আমার কাছে তা স্পষ্ট ছিল না। মোশতাকের পছন্দের এক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো দৈবক্রমে ঘটেছে বলে এসবকে তিনি জায়েজও করতে চেয়েছেন। তাদের দাবি, তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগ পর্যন্ত জিম্মি করে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দেহরক্ষীদের প্রচণ্ড সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা গুলি করতে বাধ্য হয় এবং এভাবে ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিহত হন।
যে আলোকচিত্রী পরবর্তী সময়ে ছবি তুলেছিলেন তিনি আমাকে বলেছেন, তাঁদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং এর উদ্দেশ্য ছিল তাঁর পুরো পরিবারকে নির্মূল করা। ফারুক ও রশীদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন সেনারাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়, তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের কিছুই জানানো হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করার জন্য দলে দলে ভাগ করে ছড়িয়ে দেওয়ার আগে ফারুক সেনাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলে, শেখ মুজিবের সরকার ভারতের সঙ্গে মিলে দেশকে হিন্দু কর্তৃত্বাধীন করবে, তাই বাংলাদেশে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে। এখন যদি তারা আক্রমণ না করে তবে বাংলাদেশ হিন্দুদের দ্বারা শাসিত হবে। এই বিপর্যয় ঠেকাতে তিনি জওয়ানদের ইসলামের নামে সচেষ্ট হতে বলেন। তার মতে, সেনারা দ্বিধাহীনভাবে হাত উঁচু করে আক্রমণে যোগ দিতে সম্মতি জানায়।
সেনাদের মনোভাব বিষয়ে নিঃসন্দেহে আগে থেকেই গোয়েন্দা জরিপ করা ছিল। ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ ও একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা দেয়। ভুট্টোর সফরের পর পাকিস্তানপন্থী অনুভূতি আশঙ্কাজনকভাবে ফিরে আসতে থাকে। তখন পাকিস্তানের সামরিক চক্র একাত্তরের পরাজয়ের লজ্জার প্রতিশোধ নিতে চাইল। একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর শেখ মনির উত্থান দেখে মার্কিনিরা খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তে শেখ মুজিবের ওপর বেশ প্রভাব ছিল শেখ মনির। শেখ মনি ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি বিশ্বস্ত। দক্ষিণ ভিয়েতনামের পতনের পর বাংলাদেশে মার্কিনবিরোধী মনোভাবকে সিআইএ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত গভীর শঙ্কার সঙ্গে দেখেন। এ থেকে বোঝা যায়, মার্কিন মিশন অভ্যুত্থানের আগাম ধারণা পেলেও কেন তা বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি জানাতে চায়নি। ল্যাটিন আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চলে এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলার অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় সিআইএ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূল্যায়ন করেন যে, এ দেশে বাকশালবিরোধী মনোভাবের তীব্রতা শেখ মুজিবের শাসনের অবসানকে অভিনন্দন জানানো হবে। তবে কখনোই জানা যাবে না যে, সরকার উচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে—এমন কথা তাঁরা জানতেন কি না। অন্যদিকে আসন্ন অভ্যুত্থান সম্পর্কে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দারা জানত না, এটা অবিশ্বাস্য।
অভ্যুত্থানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভুট্টো নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিতে সৌদি আরব ও চীনকে তারবার্তা পাঠান। স্টেনলি ওলপোর্টের মতে, ‘ভুট্টো দুই বছর ধরে কয়েকটি মুজিববিরোধী দলের কাছে গোপন তহবিল পাঠিয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের আগস্ট শেষ হওয়ার আগেই সেই তার সেই বিনিয়োগ বিপুলভাবে লাভের মুখ দেখে।’
মাহবুবুল আলম চাষীর সঙ্গে আমার প্রথম বৈঠকেই তিনি স্পষ্ট করেন যে, নতুন সরকারের কাছে (পাকিস্তানের কাছ থেকে) সম্পদ ফেরত আনা ও বিহারিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের মধ্যস্থতার ফলে এসব বিষয়ে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থান অর্জন সম্পর্কে আমি তাঁকে অবহিত করি। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবকে আমাদের পক্ষে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলাম। নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভুট্টোর ত্বরিত তারবার্তা ইঙ্গিত দেয় খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলম চাষী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও সামরিক জান্তার ওপর ভুট্টোর পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ছিল। খন্দকার মোশতাক বঙ্গভবন থেকে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে চেয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বিলম্বের জন্য অন্যদের সামনে আমাকে ভর্ত্সনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আপনাকে নষ্ট করেছে।’ কিন্তু আমাকে স্বীকার করতেই হবে, খন্দকার মোশতাক পেশাদারি দক্ষতার মূল্য দিতেন। আর এ জন্যই তাঁর সঙ্গে আমার বড় ধরনের মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাকে পদে বহাল রেখেছিলেন। পীর মুহসিনউদ্দীন আহমদ দুদু মিয়া (হাজী শরীয়তউল্লাহর পুত্র) নামের এক ব্যক্তিকে খন্দকার মোশতাক লন্ডন হয়ে পাকিস্তানে প্রেরণ করেন। সেই সময় আমি জানতাম না যে তিনি খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে যাচ্ছেন। বিহারি প্রত্যাবাসন ও সম্পদের সন্তোষজনক সমাধান পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সঙ্গে জড়িত করা যেতে পারে—এমন ইঙ্গিতবাহী এক তারবার্তা আমি নিউইয়র্কে আমাদের মিশনে পাঠাই। আমাদের মিশন থেকে ত্বরিত উত্তর আসে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আজিজ আহমেদ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর মধ্যকার সভায় জানানো হয়, খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করার সময় বাংলাদেশ এই দুই শর্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আমাদের সবার কাছে এটি ছিল এক প্রচণ্ড ধাক্কা।
ফারুক ও রশীদ বঙ্গভবনে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু অন্যদিকে সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তখনই তাঁদের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট মনে হলো উভয়পক্ষের শক্তিপ্রদর্শন ঘটতে পারে। আর তা যদি ঘটত তাহলে ফারুক ও রশীদ হারিয়ে যেতেন। আমার স্মরণ আছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সেনানিবাসের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চান। জেনারেল ওসমানী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহায়তা করেন। সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে আর কোনো রক্তপাত ঘটুক তিনি তার দৃঢ় বিরোধিতা করেন। জেনারেল ওসমানী মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতেও রাজি হন। প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত তাঁর জানার কথা, কিন্তু শিগগিরই আমি দেখলাম তা হচ্ছে না। এই অভ্যুত্থানের দুই-তিন দিনের মধ্যে খন্দকার মোশতাক আমাকে বললেন, জেনারেল সফিউল্লাহ ও এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের জন্য দুটি রাষ্ট্রদূত মর্যাদার নিয়োগের স্থান খুঁজে বের করতে। জেনারেল ওসমানী পরে জানতে পারেন যে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে। ফারুক ও রশীদ পাকিস্তানে তাঁদের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির প্রহরীদের জন্য ফরাসি ট্যাঙ্ক কেনার জন্য সৌদি আরবের কাছে তহবিল চান। রাষ্ট্রপতির নিজস্ব প্রহরার নামে প্রেসিডেন্টস গার্ড রেজিমেন্টের নামে নতুন একটি বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করা হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করবে ফারুক ও রশীদ, আর তা সেনাবহিনীর চিফ অব স্টাফের এখতিয়ারের বাইরে থাকবে। নতুন ট্যাঙ্ক বঙ্গভবন ও দেশের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। সৌদিরা যখন ফ্রান্স থেকে চলতি দরপত্র পেতে চাইল, তখন ঢাকায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুসন্ধান করেন। এ ক্ষেত্রে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরোপুরি অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আমি প্রায় প্রতিদিন মধ্যরাতে বঙ্গভবনে যেতাম। সেখানে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল কীভাবে পুরো দেশ একগুচ্ছ তরুণ সেনা কর্মকর্তা দ্বারা চালিত হতো, যারা বন্দুকের জোরে পূর্ণ ক্ষমতা উপভোগ করত এবং বঙ্গভবন ও মোশতাকের সরকারের ওপর জারি রাখত শক্ত নিয়ন্ত্রণ। মেজর ফারুক ও রশীদ যখন সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্বে। তার মধ্যেই, ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। পাশাপাশি সেদিন খন্দকার মোশতাক চেষ্টা চালান জেনারেল ওসমানীকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করানোর জন্য। একই সময়ে ভারতে প্রশিক্ষণরত ব্রিগেডিয়ার এইচ এম এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের জায়গায় তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়। ফারুক ও রশীদের চাপের কারণেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে এরশাদকে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের পর এরশাদ বাংলাদেশের দিল্লি মিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে বার্তা পাঠান। ১৯৭৫-এর শুরুর দিকে ফারুক ও রশীদ সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে ভারতে ছিলেন। এরশাদের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি এটি অবিশ্বাস্য। স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, এরশাদ ১৯৭৫ সাল থেকেই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিলেন।
(ক্রিটিকাল টাইমস: মেমোয়ার্স অব এ সাউথ এশিয়ান ডিপ্লোম্যাট বই থেকে নেওয়া, বইটির প্রকাশকাল ১৯৯৪, প্রকাশক ইউপিএল, ইংরেজি থেকে অনূদিত)
ফখরুদ্দিন আহমেদ (১৯৩১-২০০১): সাবেক কূটনীতিক ও পররাষ্ট্রসচিব। ১৯৯১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।

No comments

Powered by Blogger.