মওদুদ আহমদের স্বস্তি-অস্বস্তির আত্মজীবনী by এম এম খালেকুজ্জামান
মওদুদ আহমদ হতে পারতেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘ভূমিপূত্র’। আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী, তারপর তাঁর সচিব, জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, এরশাদ আমলে উপরাষ্ট্রপতি—ঐতিহাসিক সংশ্লিষ্টতায় ঈর্ষণীয় এক ক্যারিয়ার তাঁর। কিন্তু রাজকাহিনিতে প্রিয় পুত্র যেমন ত্যাজ্যপুত্র হয়, তেমনি তাঁর কপালেও জুটেছিল প্রিয় থেকে অপ্রিয় হওয়ার ঘটনা। সম্প্রতি প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হওয়া মওদুদ আহমদের আত্মজীবনী চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা ১৯৯১ থেকে ২০১৯ বইটি এসবেরই এক অম্লমধুর ধারাবিবরণী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যক্ষদর্শীর এক মহাবিবরণী যেন তাঁর আত্মজীবনীর শেষ পর্ব। শুরুতে যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবিভক্ত ভারতের কলকাতার স্মৃতি পাওয়া যায়। খিদিরপুর ডকে দেবেন্দ্র ম্যানশনে থাকার সময় জাপানিদের বোমাবর্ষণের স্মৃতি আর বইটি শেষ করেছেন শেখ হাসিনার শাসনামলের বর্ণনা দিয়ে।
চিন্তাচর্চায় স্বতন্ত্র
মওদুদ আহমদের জীবন ও সমসাময়িক কাল ও স্থান সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণা ছিল এবং তা মেনেই তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেছেন। তাঁর এই অনুশীলনের কেন্দ্রে ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। অনেক রাজনীতিক ও আমলাকে দেখা যায়, অবসরে যাওয়ার পর তাঁরা লেখালেখিতে ব্যস্ত হন। আইন ও রাজনীতি পেশার অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য মেনে তিনি অবসর নেননি।
মওদুদ আহমদের প্রথম বইয়ের প্রকাশকাল বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পেশাজীবনের অভিজ্ঞতাকে লেখায় অনুবাদ করেছেন মধ্যজীবন থেকে। লেখালেখি তাঁকে অন্য রাজনীতিকদের চেয়ে পৃথক করেছে।
রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী মওদুদ আহমদ তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় সক্রিয় ছিলেন চিন্তাচর্চাকারী হিসেবে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জীবনব্যাপী যা কিছু লিখেছেন, তা বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে বলা যায় ‘বাংলাদেশের রাজনীতির ধারাভাষ্যকার’।
মওদুদ আহমদের একাধিক বইয়ের সঙ্গে অনুসন্ধানী পাঠক তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর শেষ বইটিকে আলাদা করতে পারবেন। কারণ, এখানে তিনি পাঠককে তাঁর একান্ত ব্যক্তিজীবন সম্পর্কেও জানাতে চেয়েছেন। এর আগে তাঁর অন্য লেখার প্রধান ক্ষেত্র ছিল রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতি। আর শেষ বইতে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে জড়িত ইতিহাসের ওপরও আলো ফেলেছেন।
আত্মজীবনীর ‘অস্বস্তি’
আত্মজীবনী কখনো কখনো অস্বস্তি উৎপাদন করে। যে কারণে অনেকেই জীবদ্দশায় এর প্রকাশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকেন না। অছিয়ত করে যান, মৃত্যুর পর প্রকাশের। মওদুদ আহমদ তাঁর এই বই প্রথমা প্রকাশনকে দেওয়ার আগে আরও দুটি প্রকাশনীর কাছে দিয়েছিলেন। ‘ঝুঁকি’ বিবেচনায় তাঁরা অপারগতা দেখায়; কিন্তু প্রথমা এ ব্যাপারে সাহসিকতা ও পেশাদারত্ব দেখিয়ে তা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে বিপুলায়তন বইটির নির্ঘণ্ট যুক্ত হলে তা আরও পূর্ণতা পেত।
২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় হয় মওদুদ আহমদের বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮ বইটি। এতে তিনি ‘এক-এগারো’র সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমনে প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের অভাব নিয়ে।
মওদুদ আহমদের এমন পর্যবেক্ষণে তাঁর দলেরই নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ বলেন, ‘সমস্ত বইয়ে চেষ্টা করেছি বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরতে। আমি তো এই বই বর্তমানের জন্য লিখিনি। এটা তো ভবিষ্যতের জন্য লিখেছি।’ (প্রথম আলো, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪)
এর আগে তাঁর লেখা আ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ বইটি নিয়েও ২০১৩ সালে তাঁর দলের মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মওদুদ আহমদ। ওই সময় বইটির অংশবিশেষ আলোচনায় এনে তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল দলের নিজের একটি অংশ।
অন্য অনেক রাজনৈতিক নেতার কপটতার বিপরীতে মওদুদ আহমদ তাঁর লেখালেখিতে অন্তত অকপট ছিলেন—রাজনীতিসচেতন পাঠকেরা এমনটাই বলে থাকেন। চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা ১৯৯১ থেকে ২০১৯ বইটিও ব্যতিক্রম নয়।
অখণ্ড সময়ের খণ্ড স্মৃতিচিহ্ন
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও লেখকদের একটি সাধারণ প্রবণতা হলো, আন্দোলন–সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, ঘটনা ও বিশ্লেষণে বিশেষ কোনো ব্যক্তি কিংবা নিজের ভূমিকাই প্রকট হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে আমরা কদাচ ভারসাম্য দেখি। আর আত্মজীবনী হলে আমিত্বকে দূরে রাখা যায় না; বরং সেটিই চালক হয়ে ওঠে। তবে মওদুদ আহমদ তাঁর এই ব্যক্তি ও সমষ্টির মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত সব বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে মওদুদ আহমদ অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছিলেন। এ ছাড়া একজন কৃতবিদ্য আইনবিদ ও সংবিধানবেত্তা হিসেবে তিনি সমকালীন বিশ্ব, সমাজ, রাজনীতি ও উন্নয়ন চিন্তা–সম্পর্কিত নানা বইয়ের নিয়মিত পাঠক ছিলেন তিনি। চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা ১৯৯১ থেকে ২০১৯ বইটি পড়লে পাঠকেরা সেগুলোর একটি দারুণ অভিজ্ঞতা পাবেন।
বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতোই জেলজীবন ও মুক্তজীবনের মধ্যে শাটল কর্কের মতো আসা-যাওয়া ছিল মওদুদ আহমদের। ১৫ বছর বয়সে প্রথম তিনি জেলজীবন বরণ করেন; সেটি ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অব্যবহিত পর একুশে ফেব্রুয়ারি কর্মসূচিতে পতাকা উত্তোলনের জন্য।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে জরুরি আইন ঘোষণার পর জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে গঠিত হয়েছিল কমিটি ফর সিভিল লিবার্টিজ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড। তিনি ছিলেন এ সংগঠনের সম্পাদক। পরিহাস হলো, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি নিজেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এরপর ১৯৯৬ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছাড়া ১৯৮২-৮৩, ১৯৯১, ২০০৭-০৮ ও ২০১৩-১৪ সালে নিজের কারাভোগকে মওদুদ আহমদ প্রতিহিংসামূলক, রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত বলে মনে করেন। তিনি এ বইয়ে লিখেছেন, সেসব কারাবরণে কোনো পাবলিক কজ ছিল না, কোনো গৌরব বা কোনো স্বপ্ন জড়িত ছিল না; বরং ছিল অপমান ও লাঞ্ছনায় ভরা।
মওদুদ আহমদের এই আত্মজীবনীর ব্যাপ্তি প্রায় আট দশক। তিনি তুলে এনেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চরিত্র ও ঘটনা। তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে ছিল রাজনীতি ও আইন পেশা। স্বভাবতই এই দুটি বিষয় তাঁর আত্মজীবনীর বেশ বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। অন্য বিষয়গুলো তিনি কেবল ছুঁয়ে গেছেন।
ফলে এ বইয়ে ইতিহাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খুঁজতে না যাওয়াই শ্রেয়; কিন্তু বিষয়-বর্ণনায় লেখকের নির্মোহ ও মানবিক দৃষ্টি আমাদের মুগ্ধ করে। তিনি কুশলী ন্যারেটরের মতো ঘটনার সত্যনিষ্ঠ বিবরণ দিয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে দু–একটি মন্তব্য করেছেন; নিজেকে ঘটনার আড়ালে না নিয়ে উপস্থিত রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। এ বইয়ে এটাই সম্ভবত তাঁর এক অসাধারণ শৈলী, যা আগের বইগুলোর চেয়ে ভিন্ন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মূল্যয়ন
মওদুদ আহমদ লিখেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মূলত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত ছিল, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো ব্যক্তিকে দলের কোনো পদে আসীন করা হবে না। সময়ের বিবর্তনে ও রাজনীতির চক্রখেলায় বিএনপি ক্রমে সেখান থেকে অনেক দূরে সরে আসে।
১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জিয়াউর রহমান নিজেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শাহ আজিজকে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। মওদুদ আরও লেখেন, সাত্তার ও শাহ আজিজদের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি একটি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে। (পৃষ্ঠা ৬০)
মওদুদ আহমদ আফসোস করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের পর বিএনপিকে জামায়াতের ‘স্থায়ী রাজনৈতিক পার্টনার’ হিসেবে প্রচার–প্রচারণা করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১১-১২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সময় তিনি অনেকবার ‘বিএনপির রাজনীতি কী’ এমন অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
মওদুদ আহমদ বিষয়টি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেনও। খালেদা জিয়া বিষয়টি অনুধাবন করলেও বিএনপি সেই সময় বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারেনি। জামায়াত প্রশ্নে বিএনপির এই দোদুল্যমানতায় নিদারুণ মনোবেদনায় ভুগছেন মওদুদ আহমদ।
মওদুদ আহমদ তাঁর নিজ দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চরিত্র চিত্রণে অকপট ছিলেন। তাঁর বৌদ্ধিক সততার ব্যতিক্রমী উদাহরণ রয়েছে আত্মজীবনীর পাতায় পাতায়। তিনি বলেছেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনৈতিকতা ও স্ববিরোধিতার চরম দৃষ্টান্ত হলো, রাজনৈতিক অঙ্গনে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবস্থান এবং স্বীকৃতি। (পৃষ্ঠা-৩২৭)
মওদুদ আহমদ আপাদমস্তক গণতন্ত্রী ছিলেন, যে স্বভাবের কারণে তিরি তাঁর নিজ দলের কাছেও অপাঙ্ক্তেয় ছিলেন এবং তা দলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। ঢাকার ড্যাফোডিল হোটেলে যুবদলের এক সম্মেলনে ‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে’ এমন কথা বলার পর তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। (পৃষ্ঠা ৫৪৬)
মওদুদ আহমদ তাঁর মেধা, যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সচিব থেকে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েছিলেন, আর এরশাদ তো তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর কেউ সঠিকভাবে মূল্যয়ন করেননি বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
১৯৭৪ সালে মওদুদ আহমদ কিছুদিন কারাগারে আটক থাকলেও শেখ মুজিবের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদারতা নিয়ে লিখেছেন কৃতজ্ঞচিত্তে। তবে শেখ হাসিনার শাসনামল যে চূড়ান্ত কতৃর্ত্বপরায়ণ সেটি বলেছেন নির্দ্বিধায়।
সম্ভাবনাকে পরিণতিতে রূপান্তর করতে না পারার ব্যর্থতা তাঁকে দারুণ পুড়িয়েছে। এখানে ইতিবাচক সমাজ রূপান্তরের সব শর্তই উপস্থিত ছিল বলে মনে করতেন মওদুদ আহমদ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাপোড়েনে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বপ্ন, সামাজিক ঐক্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয়েছে মনে করতেন তিনি।
বিচারপতিদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে ‘আক্ষেপ’
চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা ১৯৯১ থেকে ২০১৯ বইয়ের চতুর্দশ অধ্যায় আসলে বিচার বিভাগ নিয়ে মওদুদ আহমদের হতাশার সালতামামি। গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসনে বিচার বিভাগের ভূমিকা, রাজনীতি ও আইনের শাসন, বিচারিক সংস্কৃতির অবনতি—এই রকম কিছু বিষয় নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করতে আনা সংবিধান সংশোধনীর জন্য সব দায় তাঁর ওপর চাপানো অন্যায্য মনে করেন মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, নানা রাজনৈতিক হিসাব–নিকাশ করে বিএনপির জে্যষ্ঠ নেতারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জানিয়ে বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একরকম নিজেরাই নিয়েছিলেন।
শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কোন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন, সেই বিবেচনায় কেবল আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অবসরের বয়স বাড়ানোর চিন্তা করা হয়েছিল। মওদুদ আহমদ দাবি করেছিলেন, তিনি বরং উভয় বিভাগের (হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ) বিচারপতিদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখেন।
মন্ত্রিসভার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চতুর্দশ সংশোধনী পাস হয়েছিল। অথচ সব দোষ আর দায় তাঁর একার নিতে হয়েছে বলে আক্ষেপ করেছেন মওদুদ আহমদ। তাঁর আরও আক্ষেপ হলো, বিচারপতিদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানো হলেও তিনি নূ৵নতম ধন্যবাদও পাননি উপকারভোগীদের কাছ থেকে।
ইতিহাসের পথরেখায়
সুপ্রিম কোর্টের করিডরে মওদুদ আহমদকে বহুবার হেঁটে যেতে দেখেছি। মামলার শুনানিতে তিনি যখন জটিল আইনের সহজ ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরতেন, সেসব মুহূর্ত ছিল তরুণ আইনজীবীদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেন উচ্চ মার্গের।
মওদুদ আহমদের রাজনৈতিক আদর্শের কম্পাস বারবার দিক পরিবর্তিত হয়েছে—এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁর এই আদর্শিক দোদুল্যমানতা আমাদের প্রথাগত রাজনৈতিক দুরবস্থার একটি প্রতিফলন কি না, এমন প্রশ্নও করা যেতে পারে। সবকিছুর পরেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে দূরে কখনো সরে যাননি।
* এম এম খালেকুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
- মতামত লেখকের নিজস্ব

No comments