বৃটিশ লেবার পার্টিতে ভয়াবহ অস্থিরতা, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ
সূত্রটি আরও বলেছেন, আমরা কনজারভেটিভদের সময়েও দেখেছি, এমনকি গর্ডন ব্রাউনের ক্ষেত্রেও- জনগণ ঘৃণা করে যখন দলগুলো নিজেদের ভেতরে বসে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে ফেলে। যারা কিয়েরের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তারা ভালোভাবে ভেবে নিন।
মঙ্গলবার দিনভর বিশৃঙ্খল অবস্থার পর লেবারের ভেতরে ‘গৃহযুদ্ধ’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংকে দুর্বল করার চেষ্টা সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনক বলেন, ‘সরকার সম্পূর্ণ গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত।’ রিফর্ম ইউকে নেতা নাইজেল ফারাজ মন্তব্য করেছেন, ‘এটি দিকহীন, রাডারহীন এক সরকার। যত দ্রুত নির্বাচন হয়, দেশের জন্য তত ভালো।’
লেবার প্রধানের চিফ অব স্টাফ মর্গান ম্যাকসুইনিকে অনেকেই দায়ী করেছেন গোপন ব্রিফিংয়ের জন্য, যেখানে স্ট্রিটিংকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় অভিযুক্ত করা হয় এবং লেবার এমপিদের ‘পশুর মতো’ আখ্যা দেয়া হয়। এক সহযোগী বলেছেন, ‘হ্যাঁ, তিনি ১০০ শতাংশ এর পেছনে ছিলেন। এখন তিনি শেষ।’ ওয়েস স্ট্রিটিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যারা ব্রিফিং করছে, তাদের অপসারণ করা উচিত। ডাউনিং স্ট্রিটের এই বিষাক্ত সংস্কৃতি বদলাতে হবে।’
লেবার চেয়ারম্যান আনা টারলি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমন্সে বক্তব্যে স্টারমার বলেন, স্ট্রিটিংয়ের বিরুদ্ধে অননুমোদিত ব্রিফিং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমি কখনও মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন আক্রমণ অনুমোদন দিইনি। পরে তিনি স্ট্রিটিংকে ফোনে সমর্থন জানান ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তদন্তে জানা গেছে, এই ব্রিফিং ছিল একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছিল ২৬ নভেম্বর বাজেটের পর কিয়ের স্টারমারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হতে পারে, যখন অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস আয়কর বৃদ্ধি করে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন।
লেবারের জনপ্রিয়তা এখন ২০ শতাংশের নিচে, যা শত শত এমপির আসন হারানোর আশঙ্কা তৈরি করেছে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের এক সূত্র বলেছেন, কিয়ের জানেন, তিনি আসলে নেতৃত্বের যুদ্ধেই রয়েছেন। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না- তিনি লড়বেন। ওদিকে স্ট্রিটিং সাংবাদিকদের বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও আত্মঘাতী প্রচারণা। আমি কোনও নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করছি না। স্কাই নিউজকে তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘না, আমি কিয়েরকে সরাতে যাচ্ছি না- লর্ড লুকান কোথায় জানি না, শেরগার হারানোর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই, আর চাঁদে অবতরণ মিথ্যা বলেও বিশ্বাস করি না!’ তিনি আরও যোগ করেন, নিজ দলের এমপিদের ‘পশু’ বলা, কিংবা যারা সরকারের হয়ে কাজ করছে তাদের ‘হাঁটু ভেঙে দেয়া’- এসব আত্মবিনাশী আচরণ।
নাইজেল ফারাজ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কিয়ের স্টারমার পদে থাকবেন না। তিনি মনে করছেন, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও ইংল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচনে লেবার ও টোরি উভয়েই ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বে। একাধিক লেবার এমপি ক্ষোভে বলেন, ‘১০ নম্বর সম্পূর্ণ দিশেহারা। নিজেরাই সংকট তৈরি করছে।’

No comments