১২,০০০ বছর পর ইথিওপিয়ায় অগ্ন্যুৎপাত, বিষাক্ত ধোঁয়া-ছাই দিল্লিতে, পৌঁছে যাবে চীনেও

প্রায় ১২,০০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো উত্তর ইথিওপিয়ায় একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে রবিবার। ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া বাতাস সেই ছাইয়ের ধোঁয়াকে বহন করে বহু দেশে নিয়ে গেছে। ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও সেই ছাই ধোঁয়া পৌঁছে গেছে। এনডিটিভি বলছে, রবিবার দিবাগত রাতে দিল্লিতে দেখা গেছে এই ছাই ধোঁয়া। এতে বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়। ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরিটি রবিবার সকালে অগ্ন্যুৎপাত করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের বহু হাজার ফুট ওপরে উঠে যায় ছাই মেঘ। সেই ছাইয়ের স্তর প্রথমে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আকাশে দেখা যায়। তারপর সেগুলো ভেসে যায় রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের দিকে। এ নিয়ে এক্সে ড. ফান্ডজি বেনেডিক্ট রবিবার লিখেছেন-  ইথিওপিয়া: হাইলি গাবি আগ্নেয়গিরিটি আজ দশ হাজার বছরে প্রথমবারের মতো অগ্ন্যুৎপাত শুরু করেছে এবং ছাই ১৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উঠে গেছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানায়, এই ছাইয়ের মেঘ চীনের দিকে সরে যাচ্ছে এবং সোমবার সন্ধ্যা ৭:৩০টার মধ্যেই ভারতের আকাশ থেকে সরে যাবে। আইএমডি বলেছে, উচ্চস্তরের বায়ু ইথিওপিয়া থেকে ছাইয়ের মেঘকে লোহিত সাগর পার করে ইয়েমেন, ওমান এবং পরে আরব সাগর হয়ে ভারতের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের দিকে নিয়ে এসেছে।

ভারতের বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি উপদেশ জারি করে বলেছে, বিমানগুলোকে অবশ্যই আগ্নেয়গিরির ছাই-প্রভাবিত এলাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাইট-লেভেলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং সর্বশেষ সতর্কতার ওপর ভিত্তি করে রুট ও জ্বালানি পরিকল্পনা সমন্বয় করতে হবে। ডিজিসিএ এয়ারলাইনগুলোকে নির্দেশ দেয়, কোনো সন্দেহজনক ছাইয়ের সাথে সংঘর্ষ হলে তা অবিলম্বে জানাতে হবে। বিশেষ করে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া বা কেবিনে ধোঁয়া/গন্ধ পাওয়া গেলে। এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেটসহ একাধিক এয়ারলাইনে এর প্রভাব পড়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় উড়ে যাওয়া কিছু বিমানের সতর্কতামূলক পরীক্ষা করার জন্য তারা ১১টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে আছে- নিউওয়ার্ক-দিল্লি, নিউইয়র্ক-দিল্লি, দুবাই-হায়দরাবাদ, দোহা-মুম্বই, দুবাই-চেন্নাই, দাম্মাম-মুম্বই, দোহা-দিল্লি, চেন্নাই-মুম্বই, হায়দরাবাদ-দিল্লি ইত্যাদি। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সে লিখেছে- আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে যাওয়া এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে যাত্রীদের যে অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

ইন্ডিগো জানিয়েছে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব ধরনের সতর্কতা নিচ্ছে। তারা এক্সে বলেছে, ইথিওপিয়ার হাইলি গাবি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরে ছাইয়ের মেঘ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ভেসে আসছে। আমরা জানি এই খবর উদ্বেগ তৈরি করতে পারে এবং আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই- আপনাদের নিরাপত্তাই আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। একজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জানান, এই ছাইয়ের মেঘে মূলত সালফার-ডাই-অক্সাইড আছে। আর আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মাত্রা কম থেকে মাঝারি। ইন্ডিয়া মেট স্কাই ওয়েদার জানিয়েছে, গাবি আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মেঘ দিল্লি, এনসিআর, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে পৌঁছাতে আর ১০-৩০ মিনিট লাগবে। এতে মূলত সালফার ডাই অক্সাইড রয়েছে এবং মাঝারি মাত্রায় আগ্নেয় ছাই রয়েছে। বিশেষজ্ঞ আরও বলেন- এটি নেপালের পাহাড়ি অঞ্চল, হিমালয় এবং উত্তরপ্রদেশের টেরাই অঞ্চলে সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়াবে। কারণ মেঘের কিছু অংশ পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে পরে চীনের দিকে সরে যাবে।

ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে হাইলি গাবি আগ্নেয়গিরিটি অগ্ন্যুৎপাত করে ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত আকাশে ঘন ধোঁয়ার স্তম্ভ তুলেছে। তাতে বহু গ্রাম ছাইয়ে ঢেকে যায়। এই আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং রিফট ভ্যালি অঞ্চলে পড়ে। সেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয় এবং ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ অত্যন্ত প্রবল। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ঘন সাদা ধোঁয়ার স্তম্ভ উপরে উঠে যাচ্ছে।

আফার অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এবং এক বাসিন্দা বলেছেন তিনি একটি প্রচণ্ড শব্দ শুনেছেন যা একটি ‘শক ওয়েভ’-এর মতো লেগেছিল। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলকানিজম প্রোগ্রাম জানায়, হাইলি গাবি হোলোসিন যুগে, যা শেষ আইস এজের পরে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল, তারপর থেকে কোনো অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড নেই।

https://mzamin.com/uploads/news/main/191134_agn.webp

No comments

Powered by Blogger.