ট্রাম্প যুগের রাজনীতির প্রথম পরীক্ষায় ডেমোক্রেটদের ঝড়ো বিজয়
তবে এখনো মধ্যবর্তী নির্বাচন এক বছর দূরে। আর ট্রাম্পের যুগে এক বছর মানেই সামনে বড় একটি সময়। তাছাড়া এই নির্বাচন হয়েছে সেইসব রাজ্যে যেখানে থেকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়নি।
তিন ডেমোক্রেট প্রার্থীই অর্থনৈতিক ইস্যু, বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয়যোগ্যতা বা ‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’-কে প্রাধান্য দিয়েছেন। স্প্যানবার্গার ও শেরিল দলের মধ্যপন্থী ঘরানার হলেও, মামদানি ভাইরাল ভিডিওনির্ভর প্রচারণার মাধ্যমে নিজেকে স্পষ্টবাদী প্রগতিশীল ও নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেছেন। মামদানি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র। তিনি ৬৭ বছর বয়সী সাবেক গভর্নর অ্যানড্রু কুমো’কে পরাজিত করেছেন। ডেমোক্রেটিক মনোনয়ন হারানোর পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন কুমো। চার বছর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নরের পদ ত্যাগ করা কুমো মামদানিকে ‘চরম বামপন্থী’ বলে অভিযুক্ত করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন তার নীতিগুলো ‘অবাস্তব ও বিপজ্জনক।’ মামদানির প্রচারণা নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। নির্বাচনী বোর্ডের তথ্যমতে, ২০ লাখেরও বেশি ভোট (অগ্রিম ভোটসহ) পড়েছে- যা ১৯৬৯ সালের পর মেয়র নির্বাচনে সর্বাধিক।
রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যেই মামদানিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন ‘চেহারা’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। ট্রাম্প ভুলভাবে তাকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন- তার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ফলে শহরের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেন- তার নাম ব্যালটে না থাকা এবং চলমান ফেডারেল সরকার বন্ধ (শাটডাউন)-এর কারণেই তার দল পরাজিত হয়েছে।
ট্রাম্পের ছায়া নির্বাচনে বিরাজমান
ভার্জিনিয়ায় স্প্যানবার্গার রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসোম আর্ল-সিয়ার্স’কে হারিয়ে রিপাবলিকান গভর্নর গ্লেন ইয়াংকিন-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। নিউ জার্সিতে শেরিল রিপাবলিকান জ্যাক সিয়াতারেলি’কে পরাজিত করে ডেমোক্র্যাট ফিল মারফির জায়গা নেবেন। দু’জনই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেন, যাতে ট্রাম্পের অগোছালো শাসনের প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ কাজে লাগানো যায়। স্প্যানবার্গার বিজয় ভাষণে বলেন, আমরা বিশ্বকে বার্তা দিয়েছি- ২০২৫ সালের ভার্জিনিয়া দলীয় বিভাজনের বদলে বাস্তববাদকে বেছে নিয়েছে। আমরা বিশৃঙ্খলার ওপর আমাদের রাজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
ট্রাম্পের প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্ত এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রচারণায় শেষ মুহূর্তের ‘অস্ত্র’ হয়ে ওঠে। সরকারে শাটডাউনের সময় তিনি ফেডারেল কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিলেন- যা ওয়াশিংটনের সন্নিকটে অবস্থিত ভার্জিনিয়ার ভোটারদের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। এছাড়া তিনি নিউ জার্সির হাডসন নদীর নিচ দিয়ে চলা নতুন ট্রেন টানেল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বিলিয়ন ডলারের তহবিল স্থগিত করেন- যা সেখানে যাতায়াতকারী হাজারো নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার ভোটকেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার জানান, ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতিগুলোই তাদের মনে ছিল- বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ এবং বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ, যার বৈধতা এখন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ২৫ বছর বয়সী স্বাধীন ভোটার হুয়ান বেনিতেজ প্রথমবার ভোট দিয়েছেন। তিনি জানান যে, তিনি ভার্জিনিয়ার সব ডেমোক্রেট প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি ও শাটডাউনের বন্ধের প্রতিবাদে।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোটাররা মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন- ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাদের কি নতুনভাবে কংগ্রেসীয় আসনের মানচিত্র (রিডিস্ট্রিক্টিং) আঁকার ক্ষমতা দেওয়া হবে কিনা। এটি এক জাতীয় বিতর্কের অংশ, যা আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর প্রতিনিধি পরিষদ কোন দলের হাতে থাকবে তা নির্ধারণ করতে পারে।
ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনের ভুয়া দাবির অনুকরণে, এই ভোটকেও ‘প্রতারণা’ বলে আখ্যা দেন এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন- নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। রিপাবলিকানদের জন্য মঙ্গলবারের নির্বাচন ছিল এক পরীক্ষা- ২০২৪ সালে ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে যেসব ভোটার ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা কি ট্রাম্প ব্যালটে না থাকলেও দলকে সমর্থন করবেন?

No comments