যে মার্কিন জেনারেল একদিন গ্রেপ্তার করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দিলেন আল-শারা
গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন আহমেদ আল-শারা। ডিসেম্বরের ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের শাসনকালের অবসান হয়। এ বছর জানুয়ারিতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বিদ্রোহী নেতা আল-শারা।
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের সময় মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল পেট্রাউস। তাঁর ওই বাহিনীই আল-শারাকে ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার করে ২০১১ সাল পর্যন্ত কারাবন্দী করে রেখেছিল। আল-শারা মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে সে সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
পরে পেট্রাউস যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২০১২ সালে আল-শারা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। চার বছর পর আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি।
তার এক বছর পরে আল-নুসরা সিরিয়ায় আসাদ সরকারবিরোধী অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে একটি দল গঠন করেন। এ দলের নেতৃত্বও থাকে আহমেদ আল-শারার হাতে।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদার সঙ্গে অতীত সম্পর্কের কারণে হায়াত তাহরির আল-শামকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে চলতি বছরের জুলাইয়ে ওয়াশিংটন আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ার প্রতি নরম অবস্থান থেকে ওই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র আল-শারাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওই ঘোষণাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সময় ও স্থানের তাৎপর্য
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছান আহমেদ আল-শারা। প্রায় ছয় দশকের মধ্যে তিনিই প্রথম কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।
সেখানে প্রেসিডেন্ট আল-শারা এবং তাঁর বিশাল প্রতিনিধিদল বিভিন্ন বৈঠক করছেন। তাঁরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গেও বৈঠক করেন। সোমবার সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে একাধিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আল-শারা।
সেদিন আল–শারা সাবেক সেনা কর্মকর্তা পেট্রাউসের সঙ্গে ২০২৫ সালের ‘কনকর্ডিয়া অ্যানুয়াল সামিটে’ অংশ নেন। এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি বৈশ্বিক ফোরাম।
এই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা, ব্যবসায়িক নেতারা ও এনজিও প্রতিনিধিরা মিলিত হন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন।
আল-শারার ‘ভক্ত’ পেট্রাউস
অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল পেট্রাউস একই মঞ্চে আল-শারার সঙ্গে তাঁর জুটিকে খানিকটা অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে এই মঞ্চ ব্যবহার করে তিনি আহমেদ আল-শারার প্রশংসাও করেন।
দর্শকদের লক্ষ্য করে পেট্রাউস বলেন, ‘বিদ্রোহী নেতা থেকে তাঁর রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠার এই যাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ঘটা অন্যতম নাটকীয় রাজনৈতিক রূপান্তর।’
বাশার আল-আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরেয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন আল-শারা। নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে অক্টোবরে দেশটিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন তিনি।
গত সোমবার সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে আল-শারার শারীরিক অবস্থা নিয়ে পেট্রাউস উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আল-শারাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি পর্যাপ্ত ঘুমের সময় পান কি না।
মার্কিন এই অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বলেন, আল-শারার অনেক ভক্ত আছেন এবং তাদের মধ্যে তিনিও একজন।
পেট্রাউসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইতিহাস জানতে চাওয়া হলে মুখে হাসি টেনে আল-শারা বলেন, ‘একসময় আমরা যুদ্ধ করতাম, আর এখন আমরা সংলাপে প্রবেশ করেছি।’
আল–শারা আরও বলেন, ‘যাঁরা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছেন, তাঁরা শান্তির গুরুত্ব বোঝেন। আমরা যেমন অতীতকে আজকের নিয়ম অনুযায়ী বিচার করতে পারি না, তেমনি আজকের ঘটনাকেও অতীতের নিয়ম অনুযায়ী বিচার করতে পারি না।’
আল-কায়েদার একজন কমান্ডার হিসেবে তাঁর সময় কেমন ছিল, এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আল-শারা বলেন, ‘হয়তো আগে কিছু ভুল হয়েছিল।’
আল–শারা বলেন, তবে এখন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সিরীয় জনগণ এবং এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করা।
আল–শারা বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে করা অঙ্গীকারই আজ আমাদের এখানে (নিউইয়র্ক) নিয়ে এসেছে। আমরা সহকর্মী ও বন্ধুদের মধ্যে বসে আছি।’
![]() |
| সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারের শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত কনকর্ডিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত হন। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ছবি: এএফপি |

No comments