যেভাবেই হোক গাজাকে নিরস্ত্র করার অঙ্গীকার নেতানিয়াহুর, অস্ত্র সমর্পণ করবে না হামাস
হামাস শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার অধীনে জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি। তবে সেই প্রস্তাবে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অন্যান্য শর্ত নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহু ওই মন্তব্য করেছেন। শনিবার সকালে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার পর হামাস জানায়, ইসরাইল গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানায় তারা। এ অবস্থায় শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষের পরোক্ষ অস্ত্রবিরতি বিষয়ে আলোচনা সোমবার মিশরে শুরু হওয়ার কথা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যদি চুক্তি সম্পন্ন করতে দেরি করে, তিনি তা মেনে নেবেন না। নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, হামাসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে সব বাজি শেষ। চলো, দ্রুত শেষ করা যাক!
পরবর্তীতে তিনি জানান, ইসরাইল ‘প্রাথমিক প্রত্যাহারের সীমা’ মেনে নিয়েছে, যা সম্ভবত মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকাশিত ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্রগুলোর একটির প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। ট্রাম্প ২০ দফা পরিকল্পনায় যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসান ও হামাসের হাতে থাকা ২০ জীবিত ইসরাইলি জিম্মি, পাশাপাশি মৃতদের দেহাবশেষ, মুক্তির বিনিময়ে শত শত আটক গাজাবাসীকে মুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক্সে পোস্ট করে জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি বাড়ানোর নির্দেশ জারি করেছে এবং সেনাদের নিরাপত্তা তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
হামাস যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কিছু দিক মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা একধরনের ‘হ্যাঁ, তবে...’ এমন জবাব দিয়েছে। অর্থাৎ, তারা বাকি সব জীবিত ও মৃত ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি এবং গাজা হবে নিরপেক্ষ ‘টেকনোক্রেটদের দ্বারা পরিচালিত’ একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। তবে, নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে তারা কিছু বলেনি। এটাই ইসরাইলের প্রধান শর্ত। তবুও গাজা ও ইসরাইল- উভয় জায়গাতেই এখন একধরনের সতর্ক আশাবাদ কাজ করছে, হয়তো এবার সত্যিই একটি সমঝোতা হতে পারে। পার্থক্য হচ্ছে, এবার সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প নিজে। তিনি চান ইতিহাসে যুদ্ধের অবসান ঘটানো রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিত হতে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের ব্যর্থ চুক্তিগুলোর প্রধান বাধাগুলো এখনো রয়ে গেছে।
বিশেষ করে, হামাসের দাবি যে ইসরাইলকে সম্পূর্ণভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং জিম্মিরা মুক্তির পর যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা হবে না- এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। হামাস জানে, জিম্মিদের মুক্তির পর তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে, তাই তারা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবে। ওদিকে, দেশের ভেতর ও বাইরে অনেকেই অভিযোগ করছেন, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তি বিলম্বিত করছেন, যাতে যুদ্ধ চলতে থাকে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন। তাকে সমর্থন দিচ্ছেন কট্টর-ডানপন্থী মন্ত্রীরা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, হামাসের ‘সম্পূর্ণ পরাজয়’ ছাড়া যদি যুদ্ধ শেষ হয়, তারা জোট সরকার থেকে সরে যাবেন। এটা হলে সরকার পতনের কারণ হতে পারে। তবে আপাতত নেতানিয়াহু তুলনামূলক নিরাপদ অবস্থানে আছেন। দেশের অভ্যন্তরে জনমত জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইসরাইলি হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির পক্ষে। দেশটি এখন গভীরভাবে বিভক্ত, যুদ্ধ ক্লান্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা।
জিম্মিদের পরিবারগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে যে তারা আশাবাদী, খুব শিগগিরই তাদের প্রিয়জনরা ফিরবেন। ভিকি কোহেনের ছেলে নিমরদ গাজায় আটক ২০ জীবিত জিম্মির একজন। ভিকি বলেন, শনিবার সকালে জেগে ওঠার পর আমার মনে একধরনের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে ভয়ও- যদি কিছু ভুল হয়ে যায়? এটা খুবই নাজুক পরিস্থিতি, আমরা আর হতাশ হতে চাই না। তবু আশা করছি, শিগগিরই নিমরদকে দেখতে পাব, তাকে আবার জড়িয়ে ধরতে পারব।
ওদিকে, গত দুই বছরে গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র- কেউ আশাবাদী, কেউ গভীর সন্দেহে ভরা। ইব্রাহিম ফারেস গাজার এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, অতিরিক্ত আশাবাদে ভেসে যাবেন না। এখনো অনেক বিস্তারিত আলোচনা বাকি আছে- শয়তান সবসময় থাকে খুঁটিনাটিতেই। ট্রাম্প শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ইসরাইলকে তাৎক্ষণিকভাবে বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও শনিবার ভোরে ইসরাইলি বিমানবাহিনী আবারও গাজা সিটিতে তিনটি বিমান হামলা চালায়। তাতে কমপক্ষে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি অভিযানে আরও ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৬৭,০৭৪।

No comments