ছিনতাই ও মাদক মামলায় জামিন: আইনের শাসন ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি
প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগে যাঁরা আটক হয়েছিলেন, গত তিন মাসে তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ১০৮ জন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মাদক পাচারকারীকে আটকের পর মাত্র ৩১ ঘণ্টার মধ্যে তিনি জামিন পেয়েছেন। এ দুটি ঘটনাই আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
ছিনতাই রাজধানীবাসীর জন্য একটি অব্যাহত ভয়ের নাম। বাসে, রাস্তায়, এমনকি বাড়ির আশপাশেও মানুষ এখন নিরাপদ বোধ করে না। পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই এসব অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের খবর দেয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আদালতের দরজা পেরোতেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খুব সহজে জামিনে বেরিয়ে আসছেন। ফলে গ্রেপ্তার হওয়া ও দ্রুত জামিনে মুক্তি পাওয়ার এক অদ্ভুত চক্র তৈরি হয়েছে। এই চক্র আইনের শাসন ও জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
অপর দিকে মাদক দেশের সামাজিক কাঠামোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সমাজের তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এই অভিশাপে। অথচ একজন মাদক পাচারকারী গ্রেপ্তারের মাত্র ৩১ ঘণ্টার মাথায় জামিন পেলেন—এ খবর জনমনে নানা রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মাদক মামলায় জামিন এত দ্রুত মঞ্জুর হওয়া কি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নাকি এর পেছনে কোনো বিশেষ মহলের প্রভাব রয়েছে—এই প্রশ্ন এড়ানো যায় না।
বিচারপ্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনি অধিকার রক্ষা করা নিশ্চয়ই জরুরি বিষয়। তবে একই সঙ্গে জননিরাপত্তা ও অপরাধ দমনের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপ্রক্রিয়ায় যদি অপরাধীদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়, তবে তাঁরা আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবেন—এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
এ রকম বহু উদাহরণ আছে, যেখানে জামিনে মুক্ত আসামিরা আবারও একই অপরাধে ধরা পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচারব্যবস্থা যদি অপরাধীদের প্রতি এমন নমনীয়তা প্রদর্শন করে, তবে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হবেন। এর মানে জনগণকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে আর অপরাধীরা পাচ্ছেন পুনরায় অপরাধ করার সুযোগ।
এই পরিস্থিতিতে সরকার, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জামিন প্রক্রিয়ায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা জরুরি, বিশেষ করে ছিনতাই ও মাদক মামলার মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। নিয়মিত মনিটরিং, জামিনপ্রাপ্ত আসামিদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি এবং প্রয়োজনে জামিন বাতিলের প্রক্রিয়া দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
এ ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে হবে, যাতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের কোনো রকম সুবিধা না দেয়। মামলার তদন্ত দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হলে বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং আদালতের সিদ্ধান্তে আস্থা তৈরি হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া জরুরি।
ঢাকার মতো জনবহুল শহরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু অপরাধীরা যদি গ্রেপ্তারের পরপরই মুক্তি পেতে থাকেন, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। এসব ঘটনা শুধু রাজধানীর নিরাপত্তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সমগ্র বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকে নষ্ট করছে।
এখন সময় এসেছে বিচারব্যবস্থার ফাঁকফোকর চিহ্নিত করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা ভয়াবহ সংকটে রূপ নেবে। এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আদালত ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments