পৃথিবীর সব সরকারের ভেতরে সরকার থাকে -বিশেষ সাক্ষাৎকারে: আসিফ নজরুল

অধ্যাপক আসিফ নজরুল অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। এক বছরে সরকারের সাফল্য–ব্যর্থতা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, ঢালাও মামলা, গ্রেপ্তার, মব–সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ, সমাজে বৈষম্য, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কমিশন, নির্বাচন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ১ আগস্ট আইন উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আপনি কি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, সরকারের পতন আসন্ন?

আসিফ নজরুল: ধারণা করতে পেরেছিলাম। মিছিলে, সমাবেশে এমন পরিচিত মানুষদের দেখতে পারছিলাম, যাঁরা আগে কখনো আসেননি। তারপর শত নির্যাতনের পরও ছাত্রনেতাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় মানুষের ঢল, দ্রোহযাত্রা, সেনাসদরে সেনাপ্রধানের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, শেখ হাসিনা এবার আর টিকতে পারবেন না। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র–জনতার বিশাল সমাবেশে বলেছিলাম, জয় তোমাদের সুনিশ্চিত।

প্রথম আলো: সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কি আপনার সঙ্গে ৫ আগস্টের আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল? তারা কী বলেছিল?

আসিফ নজরুল: জুলাইয়ের একদম শেষ দিকে রাতের বেলায় সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে সিভিল ড্রেসে একজন এসেছিলেন আমাদের পাড়ায়।

আমাকে খুব সাবধানে থাকতে এবং রাতে বাসায় না ঘুমাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি আদৌ সেনাবাহিনীর কি না, তা নিয়ে তখন সংশয় ছিল। ভয়ে অবশ্য তাঁর পরিচয় ভেরিফাই করার চেষ্টা করিনি। এরপর ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার ফোন করে তাঁর পরিচয় জানিয়ে আমাকে ক্যান্টনমেন্টে আসার আমন্ত্রণ জানান। আমি রিজওয়ানা হাসান আর মির্জা ফখরুল ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার স্ত্রী খুবই ভয় পেয়েছিল। সে দোয়া পড়ছিল, সেনাবাহিনী যে গাড়ি পাঠিয়েছিল, সে সেটার ছবি তুলে রেখেছিল। তারা তাকে বারবার অভয় দিচ্ছিল। এরপর ৫ তারিখ সারা দিন যে অভিজ্ঞতা হলো, তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য।

প্রথম আলো: অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তিতে আমি আপনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তখন বলেছিলেন, মানুষের নিয়ত যদি সৎ হয়, দেশপ্রেম ও ইচ্ছাশক্তি থাকে, তাহলে যেকোনো কাজ করা সম্ভব। এখন এক বছর পূর্তিতে আমি জানতে চাই, সরকার আসলে কী করতে পারল, আপনার মন্ত্রণালয় কী করতে পারল?

আসিফ নজরুল: আপনাকে যেটা বলেছিলাম, তা অনেকাংশে সত্যি। যেকোনো কাজ করা সম্ভব না হলেও অনেক কিছু করা যায়। আমার মন্ত্রণালয় কী করেছে, তার একটা হিসাব দিয়েছি ৩১ জুলাই। আমরা ১৬-১৭টি আইন (নতুন ও সংশোধন) করেছি। দেওয়ানি ও ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করা, লিগ্যাল এইড সার্ভিসকে সম্প্রসারিত করা, অনলাইন বেল (জামিন) বন্ড দেওয়ার আইন করা, ডিজিটালাইজেশনের পদক্ষেপ—এমন অনেক কিছু আছে। কিছু কাজ আমরা করেছি, যেটা আগের কোনো সরকারের আইন মন্ত্রণালয়কে করতে হয়নি। আমরা ১৬ হাজারের বেশি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছি। এটা শুধু বৈঠক করে হয় না, মামলার নথি ধরে ধরে পর্যালোচনা করতে হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম নেই যে একটা মন্ত্রণালয় এক বছরে প্রায় পাঁচ হাজার সরকারি আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে, সেটি করেছি।

আমি মনে করি, সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্থনৈতিক খাতের শৃঙ্খলা আনা। আমরা শেখ হাসিনার আমলে শুনতাম, তিনি নিজেও বলেছিলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। অর্থনীতিতে ধস নামার লক্ষণ ছিল। সেটা ঠেকানো গেছে। আমি সব সময় শুনতাম যে এ রকম একটা পরিস্থিতিতে বিনিময় হার (ডলারের দাম) অত্যন্ত বেড়ে যায়। সেটা বাড়েনি, বরং এখন কমতির দিকে। আমাদের রিজার্ভ (বৈদেশিক মুদ্রার মজুত) বেড়েছে, ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আসছে, মানুষের আস্থা ফিরছে। রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য কিছু কিছু কম রাখা গেছে। হজ ব্যবস্থাপনার উন্নতি হয়েছে। অপচয় কমানো গেছে। ফাওজুল কবির ভাইয়ের (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান) হাতে যেসব মন্ত্রণালয় আছে, সেখান থেকে তিনি ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন। এটা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিয়ে করা হয়েছে।

বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে যে বিশৃঙ্খল একটা অবস্থা থাকে, সেটা যদি না থাকত, আরও বেশি কিছু করা যেত।

প্রথম আলো: নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আপনি ৩০ বছর বিভিন্ন সরকারের অন্যায় কাজের সমালোচনা করেছেন। এখন সরকারে আছেন। আসলে কী করতে পারেননি?

আসিফ নজরুল: আমাদের দুটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে ‘মব–সন্ত্রাস’ ও ঢালাও মামলা। মব–সন্ত্রাস দমন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, পুলিশ মোরাল (নৈতিক অবস্থান) ছিল না। যে পুলিশ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ ছিল, সেই পুলিশ যখন দেখে গণ-অভ্যুত্থানের দাবিদার বলে কিছু মহল মব করছে, তখন সেটা দমন করতে পারেনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অসহায় হয়ে মাঝেমধ্যে বলেন, ‘আপনারা আমাকে ক্লিয়ারলি (পরিষ্কারভাবে) বলেন কী করব, বল প্রয়োগ করব, নাকি করব না।’ আমরা পুলিশের ভয়াবহ বলপ্রয়োগের স্মৃতির পর সেটা করতে বলতে পারি না। দেখবেন, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ উল্টো মার খেয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে শৃঙ্খলা একটু কমে যায়। কারণ, তারা একটা অন্য রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট রেজিমের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। হঠাৎ করে সবাই সুশৃঙ্খল হয়ে যায় না। আপনি মহান মুক্তিযুদ্ধের পরের অবস্থা দেখেন, সেখানে তো একটা দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। তারপরও তো শৃঙ্খলা আনতে পারেনি। তবে আমরা বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।
প্রথম আলো: আপনি মুক্তিযুদ্ধের পরের কথা বললেন। সেটার মাশুল তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দিতে হয়েছে। তাঁর সরকার খুব দ্রুত অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি নৃশংস হত্যাকাণ্ডেরও শিকার হন।

আসিফ নজরুল: সেই সময় তো অনেক সন্ত্রাস হয়েছে সরকারের স্বার্থ পূরণের জন্য। যেমন রক্ষীবাহিনীর কর্মকাণ্ড বা সিরাজ শিকদারের মতো নেতাদের হত্যা। এখনকার সময়ে আপনি কী দেখেছেন, আসিফ নজরুল বা অন্য কোনো উপদেষ্টা মব–সন্ত্রাস করাচ্ছেন? কিংবা ক্ষমতায় থাকার জন্য আমরা বাহিনী লেলিয়ে দিচ্ছি। তখন এক দলের দুঃশাসন ছিল। এখন তো পার্সপেকটিভটা ডিফারেন্ট (পটভূমি ভিন্ন)।
প্রথম আলো: আসিফ নজরুলকে মব করাতে দেখিনি, তবে আমরা দেখেছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা মব দমন করতে চেয়েছেন। পরে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল: দু-একটা ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বার্থে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আপনি তো জানেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন কী রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে আরও ভালো জায়গায় (প্রত্যাহার করে) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা শাস্তি হিসেবে নয়।
প্রথম আলো:

ঢালাও মামলার কথা আপনি বলছিলেন।

আসিফ নজরুল: দেখেন, মামলা সরকার করেনি, করেছেন ভুক্তভোগীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে মামলা–বাণিজ্যের প্রত্যাশী একশ্রেণির আইনজীবী জুটে গেছেন।
প্রথম আলো: কিছু দলের কিছু নেতাও জড়িত।

আসিফ নজরুল: প্রশ্ন হলো, পুলিশ ফিল্টার (যাচাই করে আসামি করা) করতে পারে না কেন? প্রথম দিকে পুলিশকে আমরা বলেছিলাম। পুলিশ যখন ফিল্টার করতে গেছে, তখন তাদের বলা হয়েছে যে তারা সারা জীবন ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে। এখন সমস্যা কী? পুলিশের ওই নৈতিক মনোবলটাই নেই। সারা হোসেন (সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী) বললেন, ‘আপনারা পারছেন না কেন?’ আমি বললাম, আপনি আমাকে সলিউশন (সমাধান) দেন। আজকে তিন মাস হয়ে গেছে। তারপর আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি।
প্রথম আলো: দুঃখিত স্যার। আপনাকে থামিয়ে একটা প্রশ্ন করি। সেটা হলো, আপনি বলছেন সরকার একটা মামলাও করেনি। কিন্তু সরকারের পাবলিক প্রসিকিউটর, সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাগুলোয় জামিনের বিরোধিতা করছেন। কেউ হাইকোর্টে জামিন পেলে আপিল করে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এক মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

আসিফ নজরুল: মামলাগুলো হত্যার ঘটনার। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের লোকেদের সংশ্লিষ্টতা বা মদদ নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ কম। কিন্তু এর বাইরে যাঁরা নিরীহ সাধারণ মানুষ আছেন, তাঁদের অনেকে জামিন পাচ্ছেন। কয়েকজন নেতাও পেয়েছেন। আমি কয়েকটা নাম চট করে বলি, প্রফেসর আবদুল মান্নান জামিন পেয়েছেন, সাবের হোসেন চৌধুরী জামিন পেয়েছেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে গ্রেপ্তারই করা হয়নি। এ রকম কিছু উদাহরণ কিন্তু আছে।
প্রথম আলো: আমিও যোগ করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকও জামিন পেয়েছেন। এ রকম কয়েকটি ঘটনা আছে। কিন্তু সেটা সমালোচনা হওয়ার পর। এটাও বলা হয় যে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের তো হত্যা মামলায় আটকে রাখার কারণ নেই। তাঁদের দুর্নীতি বা অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখাই সমীচীন।

আসিফ নজরুল: বোধ হয় শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমার জানামতে, সাত-আটজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, মামলাগুলোর পেছনে সরকারের কোনো পক্ষের মদদ নেই। এখন আপনাকে বলি, ধরেন, যারা সাধারণ ভুক্তভোগী, তারা যখন দেখেছে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তখন কোনো সাংবাদিক যদি রক্তপিপাসু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনি যা করছেন ঠিক আছে। আমরা আপনার সঙ্গে আছি,’ সেটা কি মদদ নয়?
প্রথম আলো: সেটার বিচার তো ট্রাইব্যুনালে হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট হত্যা মামলায় তাঁদের আসামি করা কি যৌক্তিক?

আসিফ নজরুল: যাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে অভিযুক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে তো কমান্ড রেসপনসিবিলিটির ব্যাপার আসবে। কিন্তু তার বাইরে যেটা আছে, এই ইনস্টিগেশন করা (উসকানি দেওয়া), এটা কেউ কেউ করেছে। এটা তো গুরুতর অপরাধ।
প্রথম আলো: তাহলে আপনি কি বলছেন, বিচার যত দিন চলবে, তাঁরা কারাগারে থাকবেন?

আসিফ নজরুল: সেটা তো আমি বলতে পারব না। বিচার চলাকালে যদি বিচারক মনে করেন...এটা বিচারকের বিবেচনার বিষয়।

প্রথম আলো: বিচারক কি স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারেন? বলা হচ্ছে, বিচারালয়ে ভয়ের পরিবেশ আছে। ধরুন, আজকে বিচারক সাংবাদিক শ্যামল দত্তকে জামিন দিলেন। পরের দিন বিচারক মবের শিকার হবেন না, সেটা নিশ্চিত?

আসিফ নজরুল: আমি তো বিচারকের মানসিক অবস্থা বলতে পারব না। তবে আপনাকে একটা জিনিস বলি, ১৫ বছর বিচারকদের ভয়ের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করা হয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছে, কাকে জামিন দেবেন, কাকে দেবেন না। সেই বিচারকেরও নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে যে অতীতে আমি কী করেছি বা কীভাবে ইউজড (ব্যবহৃত) হয়েছি। ১৫ বছর ভয়ের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে এবং ওই রাজনৈতিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এখন হঠাৎ করে তাঁর মানসজগতে নিজের অতীত বিবেচনা বা বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনা উঠে যাবে, এটা সবার ক্ষেত্রে না–ও হতে পারে।
প্রথম আলো: কিন্তু স্যার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের তো একটা বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল ন্যায়বিচার।

আসিফ নজরুল: ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা কার কাছে কী? কমপক্ষে হাজার লোক মারা গেছেন, কমপক্ষে এক লাখ কোনো না কোনোভাবে আহত হয়েছেন, ১৫ বছরে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা থেকে বঞ্চিত হওয়া, গুমসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাঁরা যদি মনে করেন, এটাই (মামলায় আসামি করা) তো আমার এখন ন্যায়বিচার। আমাকে একটা আইন দেখান যে আমরা কাউকে মামলা করা থেকে বিরত করতে পারি। আপনাকে আবার বলি, পুলিশ কেন স্ক্রুটিনি (যাচাই-বাছাই) করে না। আগের আমলে পুলিশ এক পক্ষের মামলা নিত, আরেক পক্ষের নিত না। এখন পুলিশ মামলা নিচ্ছে। ১৫ বছরের যে অপরাধবোধ, যে সংস্কৃতি, সেই একই পুলিশ, একই বিচারালয়, রাতারাতি মুক্ত হয়ে যাবে, এটা এত সহজ না। আরেকটা কথা আপনাকে বলি, মামলা তো ভুয়া না। আপনি অভিযোগ করতে পারেন যে মামলায় অনেক লোককে জড়ানো হয়েছে, যাঁরা এই মামলায় জড়িত হওয়ার কথা নয় এবং এর মাধ্যমে বাণিজ্য করা হচ্ছে।
প্রথম আলো: মামলা ভুয়া, সেটা বলছি না। আগের সরকারের আমলে ছিল ‘গায়েবি মামলা’। এখন ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি।

আসিফ নজরুল: হ্যাঁ, বলতে পারেন। তবে পার্থক্য হলো, আগের সরকারের সময় সরকার মামলা করত। এখন ভুক্তভোগী মানুষ মামলা করছেন। আগের আমলে পুরো মামলাই ছিল গায়েবি, পুরোপুরি কল্পিত। এখন মামলার অভিযোগটা সত্যি, অনেক লোককে যে জড়ানো হচ্ছে, এটা হয়তো সত্যি নয় অনেক ক্ষেত্রে।
প্রথম আলো: কিন্তু স্যার, বিগত সরকারের আমলে মামলা দিয়ে দিনের পর দিন জেলে আটকে রাখা হতো, জামিন দেওয়া হতো না, এখনো আমরা সেটাই দেখি।

আসিফ নজরুল: পার্থক্য আছে। আগের সরকারের আমলে গায়েবি মামলা দিয়ে অনেক আসামি করা এবং প্রচুর আসামিকে ধরা হতো। আমরা পুলিশকে কড়াভাবে বলে দিয়েছি, প্রমাণ পেলেই কেবল আসামি ধরা যাবে। আমার ধারণা, আমাদের সরকারের সময় মোট আসামির বড়জোর ১০ শতাংশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম আলো: সর্বশেষ উদাহরণটি দেখি। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (খায়রুল হক), যাঁর বিরুদ্ধে চরম বিতর্কিত রায় দেওয়া, রায় পরিবর্তনের অভিযোগ আছে। কিন্তু হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা কি যৌক্তিক মনে হচ্ছে?

আসিফ নজরুল: ওনার বিরুদ্ধে তিনটা মামলা রয়েছে। পুলিশ তাঁকে আদালতে তুলেছে হত্যা মামলায়। পরে তাঁকে রায় পরিবর্তন–সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং রিমান্ডও এই মামলায় শুধু চাওয়া হয়েছে। আপনাকে একটা কথা বলি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চূড়ান্ত রায় যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন বিচারপতি লিখেছেন, বিচারপতি খায়রুল হক সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের ব্যত্যয় করেছেন। এটা তো আইনসিদ্ধ নয়। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা, রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন না।
প্রথম আলো: না স্যার, তাঁকে গ্রেপ্তার-রিমান্ড নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন, কেন রায় জালিয়াতির বদলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার?

আসিফ নজরুল: ১৫ বছর পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিবেচনা ছিল আওয়ামী লীগ করে কি না, অনেক ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ বাড়ি কি না। সেই পুলিশের সবাই আমাদের জন্য শতভাগ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করবে—এটা বোধ হয় একটু বেশি চাওয়া। পুলিশে দক্ষতার ঘাটতিও আছে। পুলিশে আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা দায়িত্বশীল ও আন্তরিক।
প্রথম আলো: জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বিচার কতটা এগোল?

আসিফ নজরুল: দুই জায়গায় বিচার হচ্ছে। একটা হলো সাধারণ আদালতে। অন্যটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা যথেষ্ট ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তদন্ত ও প্রসিকিউশন দলের কাছে প্রথম থেকে প্রত্যাশা ছিল, মামলা যেন যেনতেনভাবে পরিচালিত না করা হয়। শক্ত প্রমাণ যাতে থাকে এবং তা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে। আপিলের আদালতে রায় যেন টিকে থাকে। শেখ হাসিনার আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যে বিচার হয়েছিল, সেখানে টেলিফোনে-স্কাইপে রায় লিখে নিয়ে আসত। এখানে এ রকম কিছু হবে না। আমরা গত নভেম্বরে কাজ শুরু করেছি। আট মাসের মাথায় মামলার বিচার শুনানি পর্যায়ে চলে গেছে। আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট অগ্রগতি।

আমি জানি, আপনি প্রশ্ন করবেন যে আমি বলছি বিচার এত দিনে হয়ে যাবে। দেখেন, এ বিষয়ে আমি আমার ধারণা ও প্রত্যাশার ভিত্তিতে কথা বলি। যখন শহীদ পরিবারগুলো কাঁদতে থাকে, তখন খুব ইচ্ছা করে যে আমি নিজের ধারণার কথা বলি। প্রসিকিউশন টিমের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখি। আমি জানি, মামলা কোন জায়গায় রয়েছে। সেটার ভিত্তিতে অ্যানালাইজ করে (বিশ্লেষণ) বলেছি। প্রথমবার বিচারে যথেষ্ট অগ্রগতি ছাড়াই বলেছি, অক্টোবরের মধ্যে হয়তো রায় হবে। এখন বিচারের গতি দেখে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, অক্টোবরে না হলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে হবে। আমি যখন অক্টোবরের মধ্যে বলেছিলাম, তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারপতিরা আমাকে সতর্ক করেছিলেন। এটাই তো প্রমাণ যে আমাদের আদালত কতটা নিরপেক্ষ।
প্রথম আলো: বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের অগ্রগতি কতটা?

আসিফ নজরুল: পৃথক সচিবালয় মানে শুধু চেয়ার-টেবিল দেওয়া নয়। কয়েক দিন আগে একটা রুলস (বিধি) পাস হয়েছে, যেখানে বিচার বিভাগের পদ সৃজন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পদায়ন বিধিমালা হয়েছে। আরও কিছু বিধিমালা করতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের যে গতিপথ ও কর্মপরিকল্পনা রয়েছে, এটা (পৃথক সচিবালয়) ডিসেম্বরের আগে হয়ে যাবে।

প্রথম আলো: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে গণ-অভ্যুত্থান হলো। সমাজে যে আয়বৈষম্য ও বৈষম্য, সেটা কমাতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সারা জীবন দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে সরকারের কি আরও ভূমিকা রাখা উচিত ছিল? এই সরকার এক বছরে দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি কী করেছে?

আসিফ নজরুল: আমি আসলে অর্থনৈতিক বিষয়টা খুব কম বুঝি। কিন্তু আমি সব সময় দেখতাম, বলা হতো যাতে কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্য না বাড়ে। আর কর্মসংস্থান যেন বৃদ্ধি পায়। দুটি জিনিস উনি (অধ্যাপক ইউনূস) সব সময় বলতেন। এখন ধরেন দ্রব্যমূল্য তো অনেক ক্ষেত্রে সহনীয় রাখা গেছে।
প্রথম আলো: মূল্যবৃদ্ধি আগে হতো ১১-১২ শতাংশ, এখন সেটা ৮ শতাংশে নেমেছে।

আসিফ নজরুল: এটা সাকসেস (সফলতা) নয়?
প্রথম আলো: সফলতা নয়, সেটা বলছি না। বলছি, দরিদ্রদের জন্য এই মূল্যস্ফীতিও সহনীয় নয়।

আসিফ নজরুল: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, আমাদের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগপদ্ধতিতে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এখানে হয়তো আমাদের আরও কিছু করার ছিল।
প্রথম আলো: বাজেটে আমরা দেখলাম, দরিদ্র মানুষের ভাতা বেড়েছে ৫০ টাকা, কোনো ক্ষেত্রে ১০০ টাকা; যে হারে শেখ হাসিনাও বাড়াতেন। শ্রম কমিশনের প্রতিবেদন হিমাগারে পড়ে আছে।

আসিফ নজরুল: অনেকেই প্রশ্নটা তোলেন যে এই পাঁচটা কমিশন করা হলো কেন (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় না থাকা পাঁচ কমিশন—নারী, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রম ও স্থানীয় সরকার)। এসব কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ আমি নিজে স্যারের (অধ্যাপক ইউনূস) নির্দেশে দু-এক মাস আগে মন্ত্রণালয়গুলোয় পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, এটা ফলোআপ করার এখতিয়ার আমার নেই। তবে স্যার উপদেষ্টাদের সঙ্গে কিছুদিন পরপর বসছেন এবং জিজ্ঞাসা করছেন যে তাঁদের ক্ষেত্রে সংস্কারকাজের অগ্রগতি কী।
প্রথম আলো: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরিজীবীরা বিগত সরকারকে শেষ সময়েও অসহযোগিতা করেননি। আমলাদের হাতে রাখতে শেখ হাসিনা গাড়ি কেনা, ফ্ল্যাট কেনায় ঋণসুবিধা দিয়েছিলেন। আপনারা সেটা বাতিল করেননি। আপনারা এসে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়তি ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) দিলেন, এখন আবার বেতন কমিশন গঠন করা হলো। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো হোক, কিন্তু শ্রমজীবীদের জন্য কী করেছেন?

আসিফ নজরুল: বেতন কমিশনের বিষয়ে আমি আপনাকে ঠিক বলতে পারব না। কারণ, এটা জনপ্রশাসনের ব্যাপার। আর এই সরকারের প্রতি সবার (আমলাদের মধ্যে) লয়ালিটি (আনুগত্য) নিয়ে প্রশ্ন আছে, দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এখন হঠাৎ করে বলব, আপনার ব্যবহৃত গাড়ি-বাড়ি সব ফেরত দেন, এটা কি বাংলাদেশের বাস্তবতায় সম্ভব?
প্রথম আলো: প্রকল্পের যে গাড়ি সরকারের পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে আমলারা ব্যবহার করেন, সেগুলো তো ফেরত নিতে পারতেন।

আসিফ নজরুল: এটার ডিটেইল (বিস্তারিত) তথ্য আপনাকে দিতে পারব না। কিন্তু প্রকল্পের গাড়ির ক্ষেত্রে খুবই কড়া মনোভাব আমাদের রয়েছে।
প্রথম আলো: সরকারের ভেতরে কি কোনো সরকার আছে?

আসিফ নজরুল: আচ্ছা, পৃথিবীতে কোন দেশে সরকারের ভেতর সরকার থাকে না? পৃথিবীর সব সরকারের ভেতরে সরকার থাকে, যাকে ‘কিচেন কেবিনেট’ (যাঁদের প্রভাব বেশি) বলা হয়। তবে সরকারের বাইরের কেউ সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করে না।

প্রথম আলো: সরকারের এক বছর পূর্তি হচ্ছে ৮ আগস্ট। এখন কি পারদর্শিতা মূল্যায়ন করে কোনো রদবদলের সম্ভাবনা আছে? আপনি হয়তো স্বীকার করবেন যে কোনো কোনো উপদেষ্টা ভালো করেছেন, কেউ কেউ সেটা পারেননি।

আসিফ নজরুল: আমাদের অনেক সমালোচনা হয়, যেটা খুব নির্দয়। তো আমি যখন ইনডিভিজুয়ালি (ব্যক্তি ধরে) দেখি, আমাদের অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমাদের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ভাই, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ভাই, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ভাই ভালো করছেন। আমাদের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ভাই হজ ব্যবস্থাপনায় সেরা কাজ করেছেন। এ রকম আরও কারও কথা বলতে পারি। ব্যর্থতার কথা আমার বলা শোভনীয় নয়, এটা আপনাদের ব্যাপার।

স্যারের (অধ্যাপক ইউনূস) যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ (শরীরী ভাষা) থাকে, তাঁর যে কার্যপদ্ধতি, এটার মধ্যে কিন্তু আমরা প্রত্যেকে জানি, কার কাজের ব্যাপারে স্যারের মূল্যায়ন কতটুকু আছে।

প্রথম আলো: একটা সম্পূরক প্রশ্ন করে নিই। বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখতাম, যত সমালোচনাই হোক, শেখ হাসিনা কাউকে বদলাননি। কোনো সমালোচনাকে তিনি পাত্তা দেননি। এই সরকারের আমলেও কি সেটাই হবে?

আসিফ নজরুল: না, কিছু সমালোচনা তো খুবই নির্দয়। এ রকম সমালোচনার কারণে যদি কাউকে বাদ দিতে হয়, তাহলে তো সবার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হবে।

প্রথম আলো: যৌক্তিক সমালোচনা কি নেই?

আসিফ নজরুল: সে ক্ষেত্রে সামগ্রিক বিবেচনা করতে হয়। ধরেন, যৌক্তিক সমালোচনা মনে হচ্ছে, কিন্তু ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্টের (গোয়েন্দা প্রতিবেদন) ভিত্তিতে বা অন্য কোনো তথ্যের ভিত্তিতে স্যার (অধ্যাপক ইউনূস) যদি কনভিন্স (সামগ্রিক বিষয় অনুধাবন করে সম্মত হওয়া) না হন, তাহলে তো ব্যবস্থা নেওয়াটা তাঁকে ডিসকারেজ (নিরুৎসাহিত) করবে। আমাদের কারও কারও ক্ষেত্রে হয়তো অদক্ষতা, অনভিজ্ঞতার অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ শোনেন? একজন-দুজন সম্পর্কে হয়তো ক্যাম্পেইন (প্রচার) আছে, সেটা তো প্রমাণিত তথ্য নয়। আমরা অফিস করি না, এটা তো শোনেন না, স্বজনপ্রীতি করি, এটা শোনেন না।

প্রথম আলো: আমরা তো শুনি, কেউ কেউ বেলা দুইটার পরে অফিসে যান। আমরা তো দু-একজনের কথাই বলব। কেউ তো বলছে না, পুরো উপদেষ্টা পরিষদ চলে যাক।

আসিফ নজরুল: আমি এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে অবগত নই।
প্রথম আলো: উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, আলোচনার ক্ষেত্রে বাইরের কেউ জেনে যাবে, এই ভয়ে থাকেন কি না।

আসিফ নজরুল: আমার মনে হয় না।
প্রথম আলো: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনে বাধা আসার আশঙ্কা—এ দুই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে জানতে চাই, আপনারা কি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন তুলে আনতে পারবেন।

আসিফ নজরুল: অবশ্যই পারব।

প্রথম আলো: কেউ কেউ বলছেন, সেনাবাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হবে না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব আছে বলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে।

আসিফ নজরুল: মোটেও দূরত্ব নেই, এটা নিশ্চিত থাকেন। এগুলো সম্পূর্ণ বাইরের স্পেকুলেশন (অনুমান); বরং বাইরের শক্তিগুলো কেউ কেউ সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে কিছু ক্ষেত্রে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। আমি গণ-অভ্যুত্থানের মাঠে থাকা একজন কর্মী হিসেবে বলি, সেনাবাহিনী সরকারের একটি বাহিনী হয়েও সামগ্রিকভাবে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে যে ভূমিকা রেখেছে, সেটা সম্পর্কে সমাজের কিছু কিছু স্তরের শ্রদ্ধাবোধের অভাব আছে। ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্নভাবে সেনাবাহিনীর কেউ কেউ জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমার কথা হলো, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব নেই। তবে নির্বাচনের সময় আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়।
প্রথম আলো: নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি কি আপনাদের কোনো পক্ষপাত আছে? সরকারের দুজন উপদেষ্টা তাদের লোক বলে অনেকে বলে থাকেন।

আসিফ নজরুল: গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তে তো অবশ্যই ছাত্রদের নেতৃত্ব ছিল, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যখন আমাদের সরকার গঠিত হয়, তখন তো আমি সমালোচনা শুনেছি যে এত কম ছাত্র উপদেষ্টা কেন। ছাত্র উপদেষ্টাদের বন্ধুরা যখন দল গঠন করলেন, তখন কিছু ক্ষেত্রে মনে হতে পারে, সরকার এনসিপিকে প্রিভিলেজ (বিশেষাধিকার) দিচ্ছে। আসলে প্রিভিলেজ দিচ্ছে না। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকার কারণে এনসিপি খুব বেশি ‘ভালনারেবল’ (নাজুক)। সে জন্য গোপালগঞ্জ বা কোনো কোনো জায়গায় তাদের বাড়তি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি বা জামায়াত অনেক পুরোনো দল, অনেক সুসংগঠিত। এনসিপি সেটা নয়। তাদের ওপর যদি কোথাও হামলা হয়, কোনো ঘটনা ঘটে, কেউ কি আমাদের ক্ষমা করতে পারবে?

প্রথম আলো: এনসিপির নেতাদের কথায় কিন্তু মনে হয় না তাঁরা ‘ভালনারেবল’।

আসিফ নজরুল: আমার বিচারে একটা সদ্য ভূমিষ্ঠ দলের অনেক সমর্থক থাকতে পারে, কিন্তু তাদের তো বেশি কর্মী নেই, অভিজ্ঞতা নেই। আরেকটা কারণে তাদের সুরক্ষা দেওয়া দরকার; সেটা হলো, পতিত আওয়ামী লীগের প্রথম টার্গেট (নিশানা) হওয়ার কথা এনসিপির নেতারা।
প্রথম আলো: বিএনপির সঙ্গে আপনাদের দূরত্ব আছে, সখ্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে—এ বক্তব্যের জবাবে কী বলবেন? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি কথা বলেছেন। সেটি হলো, দক্ষিণপন্থীদের উত্থানে তিনি উদ্বিগ্ন।

আসিফ নজরুল: আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রচণ্ড অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে।
প্রথম আলো: অন্যায়-অবিচারের শিকার বিএনপিও হয়েছে।

আসিফ নজরুল: মধ্যপন্থী দলের মধ্যে বিএনপি, আর সংখ্যায় বেশি ধর্মভিত্তিক দল। তারা অসীম নির্যাতন, গ্রেপ্তার, গুমের শিকার হয়েছে এবং তারা এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। তাদের সঙ্গে তো আমাদের বসতে হয়।

প্রথম আলো: বৈঠক তো হবেই। বলছি, বিএনপির চেয়ে তাদের সঙ্গে সখ্য বেশি কি না।

আসিফ নজরুল: কেউ বলেন এনসিপির সঙ্গে আমাদের সখ্য, কেউ বলেন ধর্মীয় দলের সঙ্গে। লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর কেউ কেউ বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সরকারের সখ্য। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সচেতনভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো দলের পক্ষ অবলম্বন করা হয় না।
প্রথম আলো: কোনো কোনো সমাবেশে নাগরিক সমাজের কারও কারও ‘কল্লা ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দেওয়া হলো। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। কেন?

আসিফ নজরুল: আমার মনে হয় যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেই পুলিশ হয়তো ভাবছে, এটা জাস্ট ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ (রাজনৈতিক বক্তব্য)। ব্যবস্থা নেওয়া হলে উগ্রবাদকে উসকে দেওয়া হবে এবং ওনাদের নিরাপত্তার জন্য জিনিসটা ভালো হবে না। আমি তো হুমকির পরও কারও কর্মকাণ্ড কম দেখছি না। অনেক সময় রাষ্ট্র পরিচালনার সময় বিবেচনায় রাখতে হয়, ব্যবস্থা নিলে আরও উসকে দেওয়া হয় কি না।
প্রথম আলো: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ। বিচার শেষ হওয়ার আগে তাদের কার্যক্রম চালাতে না দেওয়ার পক্ষে অনেক মানুষ রয়েছেন। কিন্তু কারও কারও প্রশ্ন, নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম স্থগিত রেখে যদি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, সেই নির্বাচন নিয়ে বিদেশে প্রশ্ন উঠবে কি না?

আসিফ নজরুল: প্রশ্ন যারা তোলার, তারা তুলবে। কিন্তু দেখেন, আওয়ামী লীগের কারও মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই; বরং আওয়ামী লীগের নেত্রী ও অন্য নেতারা বলছেন, এই গণহত্যা নাকি আমরা করেছি এবং তাঁরা ফিরে এলে প্রতিশোধ নেবেন, আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাবেন। এ ধরনের কথাবার্তা যে দল বলে এবং যে দল সুযোগ পেলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা চালাতে দিলে আপনি দেশ চালাতে পারবেন? তাদের বিচার করতে পারবেন? অসম্ভব একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং মারামারি-খুনোখুনি করে বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করা হবে। বাংলাদেশে অন্যান্য যে অপশক্তি আছে, তাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরি করা হবে। এই আশঙ্কা সত্যি, যৌক্তিকভাবেই আমাদের মধ্যে আছে।

প্রথম আলো: কেউ কেউ বলছেন, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ না করে জনগণকে প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ দেওয়াই কার্যকর পন্থা হবে।

আসিফ নজরুল: এটা ঠিক, জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়া আরও বেশি ইমপ্যাক্টফুল (কার্যকর)। কিন্তু আমাদের তো সত্যি সত্যি আশঙ্কা আছে যে আওয়ামী লীগ নির্বাচন তো দূরের কথা, রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকলে দেশে কোনো দিন নির্বাচন করা যাবে না, দেশ পরিচালনা করাই যাবে না। আমাদের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট (গোয়েন্দা প্রতিবেদন) আছে যে সরকারের বিরুদ্ধে আনসারের বিক্ষোভসহ বিভিন্ন বিক্ষোভে আওয়ামী লীগের ইন্ধন ছিল। ক্রেডিবল এভিডেন্স (বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ) আছে সেখানে।
প্রথম আলো: সরকার ভারতে আম পাঠাল। ভারত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর চিকিৎসক পাঠাল। উপদেষ্টাদের মধ্যে ভারতবিরোধী বক্তব্য ইদানীং কম দেখছি। দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের কী অবস্থা?

আসিফ নজরুল: আমরা ভারতের শত্রু হতে চাই না, কিন্তু ভৃত্যও হতে চাই না। আমরা সমমর্যাদাভিত্তিক একটা সম্পর্ক চাই।
প্রথম আলো: তিস্তা প্রকল্প চীনা ঋণে করার জন্য দেশটিকে চিঠি দিয়েছে সরকার। এটা কি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে?

আসিফ নজরুল: মাঝে মাঝে উপদেষ্টা পরিষদে, মাঝে মাঝে কিচেন কেবিনেটে (কয়েকজন উপদেষ্টা) আলোচনা হয়, মাঝে মাঝে স্যার ডেকে নিয়ে কথা বলেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোনো উপদেষ্টা এককভাবে নেন না।
প্রথম আলো: আপনি বা আপনার সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কি ফেসবুকার বা ইউটিউবারদের দ্বারা প্রভাবিত হন, চাপে থাকেন? আপনি নিজেই বলেছিলেন, তদবির না শুনলেই অপপ্রচার চালানো হয়।

আসিফ নজরুল: সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ সারা পৃথিবীতেই কমবেশি আছে। এখন তো যা ইচ্ছা লিখে দেওয়া যায়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের প্রয়োগ নেই, গ্রেপ্তারের ভয় নেই, হুমকির ভয় নেই। তবে আমি নিজে ফেসবুক-ইউটিউব দেখে সিদ্ধান্ত নিই না। হতে পারে দু-একজন ফেসবুকে কোনো একটা নির্দিষ্ট প্রচারণা দ্বারা পীড়িত হন। সেটা দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়া বা সিদ্ধান্ত না নেওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রথম আলো: ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন খোলা হচ্ছে। কিন্তু আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আট মাস ধরে কোনো চেয়ারম্যান নেই।

আসিফ নজরুল: আপনি একটা ভালো সমালোচনা করেছেন। এখনকার যে মানবাধিকার কমিশন, তা প্রায় নখদন্তহীন বলতে পারেন। আইনের মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। অন্য অনেক সংস্কারকাজ করতে গিয়ে মানবাধিকার কমিশনের সংস্কার করা যায়নি। এই কমিশনের আইনে ব্যাপক সংস্কার করা দরকার, তারপর নিয়োগ। খালি খালি কাউকে চাকরি দিয়ে তো লাভ নেই। তবে এটা আমরা খুব দ্রুত দেব।

প্রথম আলো: কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে আসলে রিকনসিলিয়েশন বা পুনর্মিলন দরকার। আপনি রিকনসিলিয়েশন কমিশনের কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি ও আপনি দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিচার হয়েছে, পরস্পর পরস্পরের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমরা কি রিকনসিলিয়েশনে যাব, নাকি অনন্ত বিভাজন ও সংঘাতের মধ্যে থাকব?

আসিফ নজরুল: দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী সত্যি সত্যি অনুতপ্ত ছিল। অনুতপ্ত থেকে তারা রিকনসিলিয়েশন করতে চেয়েছিল। আমাদের যারা হত্যাকারী, তাদের মধ্যে আপনি কোনো অনুতাপ দেখেন? আপনি তাদের সঙ্গে কীভাবে রিকনসিলিয়েশন করবেন?
প্রথম আলো:

আপনি যাঁদের কথা বলছেন, তাঁরা তো বিচারের আওতায় চলে আসবেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের বিপুল নেতা-কর্মী রয়েছেন, সমর্থক রয়েছেন।

আসিফ নজরুল: সারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রিকনসিলিয়েশনের অনেকগুলো কনসেপ্ট আছে। একটা হচ্ছে ট্রুথ সিকিং (সত্য সন্ধান), সেটা আমরা করছি। দ্বিতীয়, মেমোরিয়ালাইজেশন (স্মরণ রাখার ব্যবস্থা)। সে জন্য জুলাই জাদুঘর করছি। তৃতীয়, ক্ষতিপূরণ। সেটা দেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ, জাস্টিস (ন্যায়বিচার)। এই চারটা প্রক্রিয়ার পর রিকনসিলিয়েশন হয়। জাস্টিসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটার পরে রিকনসিলিয়েশন করার পরিবেশ-পরিস্থিতি এলে আমাদের সরকার না হোক, পরবর্তী সরকার বিবেচনা করবে।
প্রথম আলো: রিকনসিলিয়েশন ছাড়া কি আমরা বিভাজন ও প্রতিশোধের চক্রে পড়ে থাকব?

আসিফ নজরুল: যেকোনো ক্ষেত্রে খুব ভালো কনসেপ্ট রিকনসিলিয়েশন। মুক্তিযুদ্ধের পরেই রিকনসিলিয়েশন দরকার ছিল। নব্বইয়ের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পর রিকনসিলিয়েশন দরকার ছিল। কিন্তু রিকনসিলিয়েশন করার একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি লাগে। আপনার যারা ক্ষতি করেছে, তাদের সঙ্গে আপনি সদ্ভাব কীভাবে রাখবেন, যদি তারা অনুতপ্ত না হয়।
প্রথম আলো: আমাদের তো একজন নেলসন ম্যান্ডেলা দরকার। অধ্যাপক ইউনূস ছাড়া এই নেতা কে হবেন?

আসিফ নজরুল: নেলসন ম্যান্ডেলাদের অপর দিকে তো ডি ক্লার্কের মতো নেতাও ছিলেন। আপনি ডি ক্লার্কের (এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক শ্বেতাঙ্গদের নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট) ভূমিকা দেখেন, নেলসন ম্যান্ডেলা তো একা একা সেটা (বর্ণবাদ বিলোপ ও রিকনসিলিয়েশন) করতে পারেননি। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোগের কথা জানছি। পরে একটা উদ্যোগ সম্ভবত প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। আলোচনাটা থাক সমাজে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

আসিফ নজরুল: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন আসিফ নজরুল
সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন আসিফ নজরুল। ছবি: জাহিদুল করিম

No comments

Powered by Blogger.