যেন আরেকটি নাকবা

এ যেন আরেকটা নাকবা। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে যেমন করে নিধন করা হয়েছিল, গত দু’বছরে যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। জাতিসংঘের ‘যথাযথ আবাসনের অধিকার’ বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক বালাকৃষ্ণন রাজাগোপাল গাজা পরিস্থিতিকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, গত দুই বছরে যা ঘটেছে, তা ইতিহাসে দ্বিতীয় নাকবার মতোই মনে থাকবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

ইসরাইলকে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র (ক্যারাভান) পাঠানোর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ। কারণ, উত্তর গাজার যে অংশগুলো থেকে ইসরাইলি বাহিনী সরে গেছে, সেখানে ফিরে আসা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা দেখছেন- তাদের ঘরবাড়ি ও পাড়াগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

বালাকৃষ্ণন রাজাগোপাল আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, উত্তর গাজায় মানুষ এখন শুধু ধ্বংসস্তূপই দেখতে পাচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ও মানসিক আঘাত অত্যন্ত গভীর। আর আমরা এখন সেটাই প্রত্যক্ষ করছি।

শুক্রবার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে দুই বছরের সংঘাত স্থগিত রাখার একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরাইলি সেনারা উত্তর গাজা থেকে সরে যায়। এরপর থেকেই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে শুরু করেছেন। ফিলিস্তিনজুড়ে মানুষ ইসরাইলি বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বাধ্য হয়ে তাঁবু বা অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন।

রাজাগোপাল জানান, এ বছরে শুরু হওয়া এক যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় তাঁবু ও ক্যারাভান পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ইসরাইলের কঠোর অবরোধের কারণে ‘প্রায় কিছুই ঢুকতে পারেনি।’ তিনি বলেন, এটাই এখন মূল সমস্যা। যতক্ষণ না ইসরাইল প্রবেশপথগুলোর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিচ্ছে, ততক্ষণ গাজার মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব নয়। এটি একেবারেই অপরিহার্য। রাজাগোপাল গাজাজুড়ে গৃহধ্বংসকে বর্ণনা করতে ‘ডোমিসাইড’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, গাজায় ঘরবাড়ি ধ্বংস করা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যার একটি কেন্দ্রীয় উপাদান। তার ভাষায়, মানুষের ঘর ধ্বংস করা, তাদের এলাকা থেকে উৎখাত করা এবং সেই অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা- এই কাজগুলিই গণহত্যার প্রধান উপায়গুলোর একটি।

তিনি আরও বলেন, গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রজন্ম লেগে যাবে। রাজাগোপাল আরও বলেন, এটা যেন আরেকটি নাকবা। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.