ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিতে নতুন প্রশ্ন, নেতৃত্ব দেবে কে? by পল অ্যাডামস
কয়েক সপ্তাহ পর বৃটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও একই পদক্ষেপ নিল। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এক ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে আমরা শান্তির সম্ভাবনা ও দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান টিকিয়ে রাখতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। নিরাপদ ইসরাইলের পাশাপাশি টিকে থাকার মতো একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা কোনোটিই পাইনি।
এর আগে ১৫০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে বৃটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বলে মনে করছেন অনেকেই। সাবেক কর্মকর্তা জাভিয়ের আবু ঈদ বলেন, ফিলিস্তিন এখন বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে আছে। বিশ্ব ফিলিস্তিনের পক্ষে সংগঠিত।
রাষ্ট্রস্বীকৃতির জটিল প্রশ্ন: কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়- কোন ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিন বলা হচ্ছে? রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশন চারটি মানদণ্ড দিয়েছে। ফিলিস্তিনের আছে স্থায়ী জনগোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা। কিন্তু ‘সংজ্ঞায়িত ভূখণ্ড’ বা কার্যকর সরকার নেই। ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নের রাষ্ট্র হলো তিন অংশে বিভক্ত। তাহলো পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। এর সবই ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করে। পশ্চিম তীর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ইসরাইলি দখল ও বসতি স্থাপনের কারণে। গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত। আর পূর্ব জেরুজালেম বসতি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
নেতৃত্ব সংকট: রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর সরকার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে ফাতাহ ও হামাসের দ্বন্দ্বে গাজা ও পশ্চিম তীরে দুই ভিন্ন শাসনব্যবস্থা চলছে। মাহমুদ আব্বাস নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কার্যত অসহায়। সেখানে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০৬ সালে। এর মানে ৩৬ বছরের নিচে কেউ কখনো ভোট দেয়নি। আইনজীবী ডায়ানা বুত্তু বলেন, এত বছর নির্বাচন হয়নি- এটা অকল্পনীয়। নতুন নেতৃত্ব দরকার। এই নেতৃত্ব সংকটে বারবার উঠে আসে কারাগারে বন্দি মারওয়ান বারঘুতির নাম। জনসমর্থনে তিনি আব্বাসের চেয়ে অনেক এগিয়ে, যদিও ২০০২ সাল থেকে ইসরাইলি কারাগারে আছেন। জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাঁকেই ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান।
ইসরাইলের অবস্থান: বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহুবার স্পষ্ট করেছেন, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চান না। বরং নতুন বসতি অনুমোদন দিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করেছেন। ইসরাইলি মন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, স্বীকৃতি দেয়ার মতো কোনো রাষ্ট্র নেই, আর স্বীকৃতি দেয়ার মতো কেউ নেই।
আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও বাস্তবতা: ফ্রান্স-সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় গৃহীত ‘নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন’-এ বলা হয়েছে, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে দিতে হবে। ১৪২টি দেশ এটি সমর্থন করেছে। হামাসও বলেছে, তারা টেকনোক্র্যাট প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব ছাড়তে প্রস্তুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন এবং তার ‘রিভেরা প্ল্যান’-এ গাজার দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কোনো উল্লেখ নেই।
প্রতীকী স্বীকৃতির সীমাবদ্ধতা: ডায়ানা বুত্তু মনে করেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মূল্যবান হতে পারে, তবে নির্ভর করছে দেশগুলোর উদ্দেশ্যের ওপর। লন্ডনের কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল প্রতীকী স্বীকৃতিতে কাজ হবে না, বাস্তব অগ্রগতি দরকার। যেমন পশ্চিম তীর-গাজার একত্রীকরণ, নির্বাচন আয়োজন, পুনর্গঠন পরিকল্পনা ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় বাধা ইসরাইলের কঠোর বিরোধিতা। ইসরাইল ইতিমধ্যে পশ্চিমতীর দখল করার হুমকি দিয়েছে।
শেষ কথা: অতএব, রাষ্ট্রস্বীকৃতি পেলেও ফিলিস্তিন এখনো কার্যকর নেতৃত্বহীন। আব্বাস প্রায় ৯০ বছরের, বারঘুতি কারাগারে, হামাস বিপর্যস্ত, আর পশ্চিম তীর খণ্ডিত। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অবশ্যই প্রতীকী শক্তি দেয়, কিন্তু তার চেয়েও জরুরি বিষয় হলো- গাজায় রক্তপাত বন্ধ করা। ডায়ানা বুত্তু বলেন, আমার কাছে রাষ্ট্রস্বীকৃতির চেয়ে জরুরি হলো হত্যাযজ্ঞ থামানো। দেশগুলোকে এখনই কিছু করতে হবে।
(অনলাইন বিবিসি থেকে অনুবাদ)

No comments