কাতার ও ভারতের প্রতি ট্রাম্পের অবমাননা নতুন অস্থিরতা তৈরি করছে by নাসরিন মালিক
এ হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দোহায় এসে কাতারের আমিরকে আলিঙ্গন করেছেন। কয়েক বছর আগে যখন এ দুই দেশের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব ছিল, তখন এমন দৃশ্য ভাবাও সম্ভব ছিল না।
এ ছাড়া সৌদি আরব ইসরায়েলি হামলার পর প্রতিক্রিয়া দেখাতে আরব, ইসলামি ও আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
সম্প্রতি আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চীনের তিয়ানজিনে একত্র হতে দেখলাম। সেখানে তাঁরা হাসিমুখে কথা বলেছেন। এটি এই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিচ্ছবি। এই সমাবেশের পেছনে কারণ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কিছুটা দূরত্বে চলে গেছেন।
ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই যেসব বিদেশি নেতা ওয়াশিংটনে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন, মোদি তাঁদের একজন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে ট্রাম্পকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সেখানে ট্রাম্প মোদিকে ‘মহান বন্ধু’ বলেছিলেন। সেখানে তাঁরা দুই দেশের মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবসা দ্বিগুণ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মাস কয়েক পরই ট্রাম্প ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপান।
ইসরায়েলের দোহা হামলার কয়েক মাস আগে ট্রাম্প কাতারের রাজধানীতে সফর করার সময় বলেছিলেন, ‘আমাদের এই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।’ এখন বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প কাউকে ‘বন্ধু’ বললে তার মানে কিন্তু সম্পর্কের নিশ্চয়তাকে বোঝায় না; বরং এতে সেই ‘বন্ধুর’ বিপদে পড়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে।
আসলে এসব সমাবেশ, নতুন একতার প্রকাশ ও আঞ্চলিক জোটের দৃঢ়তা কিছু ক্ষেত্রে কেবল দেখানোর জন্য। ভারত বা কাতারের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরাসরি যাওয়ার সত্যিই আগ্রহ নেই। তাদের অসন্তোষ কিংবা বন্ধুত্ব দেখানো মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর জন্য যে তারা বিশ্বাসঘাতক নয় এবং তাদের কাছে অন্য বিকল্পও আছে।
তবে এসব আয়োজনকে সত্যিকারের শক্তিশালী জোট তৈরি করার চেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ট্রাম্পের মতো সম্ভবত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও মনে করেন, তাঁরা এমন ‘মূল্য নির্ধারক’ হিসেবে থাকতে পারেন, যাঁদের হাতে বাজারে পণ্যের দাম ঠিক করার ক্ষমতা আছে। ইসরায়েল সম্ভবত মনে করে, তারা যাকে ইচ্ছা তাকে বোমা মেরে শেষ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভাবে, তারা যখন-তখন নিরাপত্তাচুক্তি ভঙ্গ করতে পারে এবং নিজের শর্ত যে কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু যদি এটা খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তখন যুক্তি মেনে চলা দেশগুলো এই অসংগত পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতে শুরু করবেই। এটা এ কারণে নয় যে তারা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েলকে শক্তিধর দেখতে অপছন্দ করে। উপসাগরীয় দেশগুলোও এর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করেছে এবং সেখানকার কোনো কোনো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। এখন এই দেশগুলোও মনে করছে, ট্রাম্প খামখেয়ালি এবং ইসরায়েল লাগামহীন। এ কারণে দেশগুলো তাদের নিজেদের ক্ষমতা যাচাই করছে এবং কীভাবে এক হওয়া যায়, সে চেষ্টা করছে। যখন কোনো ঘনিষ্ঠ মিত্রকে ধোঁকা দেওয়া হয়, তখন সবাই বুঝতে পারে, কেউ নিরাপদ নয়।
উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহাম চুক্তির অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারে হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ ভাষায় কথা বলেনি। তারা এর তীব্র সমালোচনা করছে। এই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যে সন্দেহের মুখে পড়ে গেছে।
ট্রাম্পের বিদেশনীতি এখন যেভাবে চলছে, তাতে তাঁর খামখেয়ালি ধরনটিকে বোঝা জরুরি। ট্রাম্পের এখন খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং তাঁর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সেই আস্থা ফেরাতে খুব একটা কাজে দেবে না।
* নাসরিন মালিক, দ্য গার্ডিয়ান–এর কলামিস্ট
- দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
![]() |
| কাতারের আমিরের সঙ্গে দেখা করেন আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট। ছবি: রয়টার্স |

No comments