চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন by জ্যঁ ভার্নার ম্যুলার
ট্রাম্প প্রায় এক দশক ধরে ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন, তাঁর সমর্থকদের রাজনৈতিক সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় এবং কখনো কখনো এমন সহিংসতা পুরস্কৃতও হতে পারে। এর অনেক উদাহরণ আছে।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত বহু সহিংস অপরাধীকে ট্রাম্প ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা এসব কর্মকাণ্ডকে সহিংসতা না বলে এগুলোকে বৈধ, এমনকি দেশপ্রেমিকদের আত্মরক্ষার কাজ হিসেবে দেখিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের এমনভাবে ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরে আসছেন, ঠিক যেমন অন্য ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদীরাও নিজেদের সব সময় ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করেন।
চার্লি কার্ক হত্যার পর কিছু বামপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশোভন মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বিদ্রূপ করে বলেছেন, কার্ক নিজেই বলেছিলেন, বন্দুক হামলায় মৃত্যু মানা যেতে পারে। কারণ, এটি অস্ত্র রাখার অধিকার নিশ্চিত করার মূল্য। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, উদারপন্থী লেখক ও সমালোচকেরা শুধু সহিংসতাকে নিন্দা করেননি; বরং কার্ককে একজন সৎ বিতর্ককারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিপরীতে ডানপন্থী অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি দমননীতির ডাক দিয়েছেন। কেউ কেউ সরাসরি ‘যুদ্ধের’ কথাও বলেছেন। এমনকি এফবিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা জে এডগার হুভারের বেআইনি কৌশল অনুসরণ করতে হবে, এমন বক্তব্যও দিয়েছেন।
আরও উদ্বেগজনক হলো ট্রাম্প নিজেই এ হত্যাকাণ্ডকে নিজের অপছন্দের সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর ওপর আক্রমণের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাঁর প্রশাসনের কয়েকজন সদস্য আগেই ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ‘দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। ট্রাম্প আগেও দেখিয়েছেন, তিনি ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে যেতে দ্বিধা করেন না। তাই বিরোধীদের বিচারের হুমকি শুধুই ডেমোক্র্যাটদের জন্য নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার জন্যই ভয়ংকর সংকেত।
ট্রাম্প শুধু আইন অমান্য করেননি, বারবার রাজনৈতিক সহিংসতাকে উসকিয়েছেন। ফিফথ অ্যাভিনিউয়ে কাউকে গুলি করার কল্পনা করা, সমর্থকদের বিরোধীদের মারধর করানোর আহ্বান, ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে সহিংস শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের ‘ভালো মানুষ’ বলা, এমনকি ৬ জানুয়ারি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝোলানোর হুমকি দেখেও আপত্তি না করা—সবই এর প্রমাণ। এসব উসকানি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ছিল নিষ্ঠুরতার বড় প্রদর্শনী। এবার তাঁর প্রশাসন সরাসরি সহিংসতার বন্দনা করছে। ভেনেজুয়েলার উপকূলে ১১ জনকে কোনো আইনি কারণ ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে এবং সে খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নিয়মিতভাবে এমন ছবি ছড়াচ্ছে, যেখানে প্রিয়জনদের জোর করে তুলে নেওয়ার পর তাঁদের পরিবারের মানুষদের কষ্ট দেখানো হচ্ছে। এক পোস্টে দেখা গেছে, আইসিইয়ের কর্মীরা নাৎসি হেলমেট পরে ছবি তুলছেন। ট্রাম্প হয়তো এবার তাঁর অনুসারীদের জন্য সব বাঁধন খুলে দিচ্ছেন। কারণ, তিনি নিজেই আইন ও নিয়মকে অগ্রাহ্য করে চলেছেন।
দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প নিজেকে অপরাধী না বলে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখাচ্ছেন। তাঁর পেছনে পুরো এক ‘অভিযোগ ইন্ডাস্ট্রি’ কাজ করছে। ফক্স নিউজ থেকে শুরু করে টক-রেডিও—সব জায়গায় প্রচারকেরা বলছেন, ট্রাম্পপন্থীদের রাগ হওয়া স্বাভাবিক। এই ভুক্তভোগিতাকেই এখন সহিংসতার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে এর মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে। কিছু লোক হয়তো তা চাইছে বা তার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু জরিপ দেখাচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতার বিপক্ষে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের ওপর হামলার পরও সহিংসতার প্রতি সমর্থন কমেছে।
অনেকে আশা করেন, ট্রাম্প একদিন রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ঐক্যের পথ ধরবেন। কিন্তু কার্ক হত্যার রাতের ঘটনা দেখাচ্ছে, ট্রাম্পের বিভাজনমূলক কৌশল চলতে থাকবে। দুর্ভাগ্য হলো, এখন তাঁর প্রশাসন ‘মতবিরোধের স্বাদ’ নয়; বরং ‘নিষ্ঠুরতার স্বাদ’ প্রচলিত করছে। আর কিছু মানুষ সেটিকেই গ্রহণ করছে।
● জ্যঁ ভার্নার ম্যুলার, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক
- স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত
![]() |
| ২০২৪ সালে একটি নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চার্লি কার্ক। ছবি: এএফপি |

No comments