ভারতীয়দের ট্রাম্পের ‘অপমান’ নিয়ে কী বললেন শশী থারুর

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতে আসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য ও কৃষি–সংশ্লিষ্ট দুই কমিশনার। চলতি সপ্তাহে বাণিজ্য কমিশনার মার্কোস স্টেফকোভিচ ও কৃষি কমিশনার ক্রিস্টোফে হ্যানসেনের দিল্লি সফরে ভারত ও ইইউয়ের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।

পদমর্যাদায় পূর্ণমন্ত্রীর সমান এই দুই কমিশনারের সঙ্গে ব্রাসেলস থেকে ভারতে আসছেন ৩০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল, যাঁরা এফটিএ–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করবেন। তাঁরা ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র অনুযায়ী, এই সফরেই ভারত ও ইইউ জোটের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হবে বলে ভারতের ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টালবাহানার দরুন ভারত চাইছে কালক্ষেপণ না করে ইইউয়ের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলতে। ভারত ও ইইউয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি ইউরো, যা ভারতের মোট বাণিজ্যের সাড়ে ১১ শতাংশ।

চলতি সপ্তাহে ভারতে আসছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচও। তাঁর সফরের উদ্দেশ্যও ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করা, যাতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বহর বৃদ্ধি পায়। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৫৩ কোটি ডলার। ২০২৫ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ১ হাজার কোটি ডলার।

ভারত–ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের এক বড় অংশজুড়ে আছে হীরা ও রাসায়নিক পণ্য। এ ছাড়া রয়েছে উচ্চপ্রযুক্তি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নবায়নযোগ্য শক্তিপ্রযুক্তি ও কৃষি খাতে সহযোগিতা।

বেজালেল স্মোটরিচ তিন দিনের সফরে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং নগরোন্নয়নমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের সঙ্গে। জেরুজালেম থেকে পিটিআই জানাচ্ছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করাই স্মোটরিচের সফরের মূল উদ্দেশ্য। এই সফরে তিনি মুম্বাই ও গুজরাটেও যাবেন।

২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ১৫টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত সরকারও সম্প্রতি স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোনো একটি দেশের ওপর তারা বাণিজ্যনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে ভারত তাই আগ্রহ দেখিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের পেন্ডুলাম দুলেই চলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন মন্তব্য করছেন, যার কিছু কিছু পরস্পরবিরোধীও। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য শশী থারুর। গতকাল রোববার তিনি বলেছেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু অপমান ভুলে গেলে চলবে না।

শুল্ক নিয়ে বারবার তোপ দাগা ও ৫০ শতাংশ শুল্কবৃদ্ধির আবহে সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করেন। ‘ভারত ও রাশিয়াকে চীনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেলা’ নিয়ে খেদ প্রকাশ করার পরের দিনেই হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মোদিকে ‘পরম বন্ধু ও মহান নেতা’ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দুদেশের সম্পর্ক বিশেষ ধরনের। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’

ওই মন্তব্য ‘ইতিবাচক’ বলে মোদিও সময় নষ্ট না করে বলেন, ‘ভারত ওই ইতিবাচক মনোভাবের পূর্ণ প্রতিদান দেবে।’ শশী থারুরের সতর্কবাণী এই বিষয়েই।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে তাঁর বলা মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের সাংবাদিক। প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।

ওই দুজনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শশী থারুর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খুব তাড়াতাড়ি প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। ট্রাম্পের ওই মন্তব্য আমি সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানাব। কিন্তু কেউ এত দ্রুত অপমান ভুলে যেতে পারেন না। ক্ষমাও করতে পারেন না। ৫০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সঙ্গীরা যেসব মন্তব্য করছেন এবং ভারতীয়দের যে অপমান সহ্য করতে হচ্ছে, মনে হয় না আমরা তা পুরোপুরি ভুলে যেতে পারব। ক্ষমাও করতে পারব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শশী থারুর
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শশী থারুর


No comments

Powered by Blogger.