আসামে দেশভাগ যুগের আইন পুনরুজ্জীবিত: সন্দেহভাজনকে নাগরিকত্ব প্রমাণে সময় ১০ দিন, ব্যর্থ হলেই বহিষ্কার
সমালোচকরা বলছেন, আসাম সরকার এই আইনকে ব্যবহার করে মানুষকে যথাযথ আইনি সুযোগ না দিয়ে জোরপূর্বক বহিষ্কার করছে। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন স্ক্রল। এতে আরও বলা হয়, এতদিন আসামে সন্দেহভাজন বিদেশিদের মামলা যেত ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। যদিও এই ট্রাইবুনালগুলো প্রায়শই এলোমেলো রায় দিয়ে মানুষকে বিদেশি ঘোষণা করেছে, ভুক্তভোগীরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারতেন। এর বাইরে ভারতের কেন্দ্রীয় নীতিমালা অনুযায়ী বহিষ্কারের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রত্যাশিত জন্মভূমি দেশের সঙ্গে জাতীয়তা যাচাই করা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু মে মাস থেকে দেখা যায় আসাম পুলিশ আদালতে বিচারাধীন মানুষদেরও ধরে এনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক সময় বন্দুকের মুখে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহে ৩ শতাধিক মানুষকে এভাবে তাড়ানো হয়। তাদের প্রায় সবাই বাঙালি মুসলিম বংশোদ্ভূত।
নতুন নিয়মের সরকারি সারাংশ অনুযায়ী, জেলা কমিশনার যদি কোনো সূত্র থেকে তথ্য পান যে কেউ ‘অবৈধ অভিবাসী’, তবে তিনি সেই ব্যক্তিকে ১০ দিনের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলবেন। প্রমাণ সন্তোষজনক না হলে জেলা কমিশনার লিখিতভাবে তাকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ ঘোষণা করবেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারের নির্দেশ দেবেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ দিন প্রমাণ জোগাড়ের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। ভোটার তালিকা বা জমির খতিয়ান তুলতে কয়েক সপ্তাহ লাগে। ২০১৯ সালের এনআরসি আপডেটের সময়ও লাখো মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণে হিমশিম খায়। এই প্রক্রিয়া কার্যত জেলা প্রশাসনকে ‘বিচারিক, জুরি ও জল্লাদ’ বানিয়ে দিচ্ছে।
১৯৫০ সালের আইনে দেশভাগ-পরবর্তী সময়ে আসামের নেতারা আশঙ্কা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে ব্যাপক অনুপ্রবেশ হবে। তাই নেহরু সরকার ইমিগ্র্যান্টস (এক্সপালশন ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট, ১৯৫০ চালু করে। তবে একই বছরে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির পর আইনের প্রয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৪ সালে গড়ে ওঠে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। এতদিনে ট্রাইবুনালগুলো ৪.৩৬ লাখ মামলা নিষ্পত্তি করেছে, যার মধ্যে ১.৩২ লাখ মানুষকে ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এসওডিতে জেলা কমিশনাররা ‘যত বেশি সম্ভব বিদেশি চিহ্নিত করার প্রতিযোগিতায়’ নামবেন। এর শিকার হবেন মূলত বাঙালি মুসলিম সংখ্যালঘুরা। আসাম হাইকোর্টের আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলছেন- কেন্দ্রীয় আইন থাকা সত্ত্বেও কি রাজ্য মন্ত্রিসভা এমন নির্দেশনা দিতে পারে? বিরোধী নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার দ্বিচারিতা করছে। একদিকে ২০১৯ সালের সিএএ’র মাধ্যমে হিন্দু অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিমদের নিশানা বানাচ্ছে।

No comments