জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: গাজায় দুর্ভিক্ষ আরও ছড়াচ্ছে
এর মধ্যে ৪৩ হাজারেরও বেশি শিশুর আগামী মাসগুলোতে জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। মুসিয়া বলেন, এই দুর্ভিক্ষ কোনো খরা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফল নয়। এটি একটি সৃষ্ট বিপর্যয়- একটি সংঘাতের পরিণতি, যা ব্যাপক বেসামরিক মৃত্যু, ধ্বংস ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কারণ। বুধবার এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু। এর ফলে যুদ্ধে গাজায় ক্ষুধা সম্পর্কিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩১৩, যার মধ্যে ১১৯ জন শিশু। অন্যদিকে ইসরাইল বুধবার আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনকে (আইপিসি) গাজা নিয়ে তাদের প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাহার করতে। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইডেন বার তাল গত সপ্তাহের রিপোর্টকে আখ্যা দেন গভীর ত্রুটিপূর্ণ, অপেশাদার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রত্যাশিত মান থেকে বহু দূরে। তবে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আইপিসি ও তাদের কাজের প্রতি সমর্থন জানায়। ১৪ সদস্যের দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় দুর্ভিক্ষ অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং তার বক্তব্যে বিশ্বশক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, গাজার দুর্ভিক্ষ উপস্থিত। এটি এক কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ। মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। গাজার শিশুদের পরিকল্পিতভাবে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এটি যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারের নগ্নতম রূপ। তিনি বর্ণনা করেন, ক্লিনিকগুলো অপুষ্ট শিশুতে ভর্তি, যারা এখন নীরব হয়ে পড়েছে। শিশুদের আর কান্নার শক্তিও নেই। তারা শুধু শুয়ে থাকে- হাড়জিরজিরে, ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাশিং বলেন, শিশুদের আঁকা ছবিগুলো এখন বদলে গেছে। আগে যেখানে শান্তি, শিক্ষা ও স্বপ্ন আঁকা হতো, সেখানে এখন কেবল খাবার আর মৃত্যু কামনা ফুটে উঠছে। তিনি বলেন, মার্চে পূর্ণ অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুরা ক্রমশ বলতে শুরু করেছে তারা খাবার চায়, রুটি চায়। গত কয়েক সপ্তাহে আরও বেশি শিশু জানাচ্ছে তারা মৃত্যুকামনা করছে।
এক শিশু লিখেছে, আমি চাই জান্নাতে যাই যেখানে আমার মা আছেন। জান্নাতে ভালোবাসা আছে, খাবার আছে, পানি আছে। জাতিসংঘে দুর্ভিক্ষ সতর্কবার্তার মধ্যেই গাজার হাসপাতালগুলো নতুন ইসরাইলি হামলার খবর দিয়েছে। খান ইউনিসে কুয়েত বিশেষায়িত ফিল্ড হাসপাতালে এক ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু ও এক নারী। আহত হয়েছেন আরও ২১ জন। বিতর্কিত ইসরাইলি ও মার্কিন-সমর্থিত জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারগুলো বেঁচে থাকার কৌশল শেষ করে ফেলছে। অভিভাবকেরা নিজেদের খাবার সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু অনিয়মিত ও অপ্রতুল সাহায্য পৌঁছানোয় পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে।

No comments