জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইসরাইলে নজিরবিহীন বিক্ষোভ
ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও বিক্ষোভের নিন্দা করে বলেন, এটি একটি ক্ষতিকর প্রচারণা, যা হামাসের হাতের খেলা।
জিম্মি পরিবারের ফোরামের অন্যতম নেতা আইনাভ জাঙ্গাউকার বন্দি মাতানের মা। তিনি জনসমাবেশে বলেন, আমরা একটি বিস্তৃত ও বাস্তবসম্মত চুক্তি এবং যুদ্ধের অবসান চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই, আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই। ইসরাইল সরকার একটি ন্যায্য যুদ্ধকে অর্থহীন যুদ্ধে রূপ দিয়েছে। তার ছেলে মাতানের একটি ভিডিও প্রকাশের পর আবেগঘন বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, আমার হৃদয় জ্বলছে। আমার পুরো হৃদয় পোড়া ছাই হয়ে গেছে মাতানের জন্য। মাতান, আমি এবং পুরো জাতি আমরা তোমার জন্য, সব জিম্মির জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখল ও সেখানকার জনগণকে তাদিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার এক সপ্তাহ পরে এই বিক্ষোভ হয়েছে। তবে ইসরাইলের এমন উদ্যোগের কড়া নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এরই মধ্যে গাজার হাজারো বাসিন্দা দক্ষিণ গাজার জয়তুন মহল্লা থেকে পালিয়ে গেছেন। টানা কয়েক দিনের ইসরাইলি বোমাবর্ষণে সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে শহরের হামাস-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন জানিয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার হিসাব অনুযায়ী শনিবার ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষত জয়তুন এলাকায় ধারাবাহিক আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসরাইলি সেনারা জানিয়েছে, তারা আবারও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে গাজায় তাঁবু নিতে দেবে। সেনাবাহিনীর সমন্বয়কারী সংস্থা কোগাট এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দক্ষিণ গাজায় জনগণকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গাজায় তাঁবু ও আশ্রয় সামগ্রী সরবরাহ আবার শুরু হবে। ইসরাইলের পরিকল্পনা হলো গাজা সিটি থেকে দশ লাখ মানুষকে দক্ষিণে শরণার্থী শিবিরে জোরপূর্বক স্থানান্তর করা। তবে সেনারা কবে শহরে প্রবেশ করবে, সেই সময়সীমা স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নেতানিয়াহু চায় পুরো শহরটি ৭ অক্টোবরের মধ্যে ইসরাইলি দখলে নিতে।
![]() |
| গাজা সিটিতে ইসরাইলের তীব্র হামলা: ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা আবার পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা সিটিতে ব্যাপক আক্রমণ চালাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তারা শেষ প্রধান জনবসতির কেন্দ্র দখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি আবারও পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। গাজা সিটির জয়তুন, সাবরা, রিমাল ও তুফাহ এলাকায় হামলার চাপ সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ইসরাইলের পরিকল্পিত জোরপূর্বক এই স্থানান্তর গাজার মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। জয়তুন থেকে হাজারো পরিবার পালিয়েছে। সেখানে টানা কয়েকদিনের হামলায় পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানান, দেইর আল-বালাহ এলাকায় গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। তিনি বলেন, জয়তুন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেখানে বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। হঠাৎ গোলাবর্ষণ শুরু হলে কেউ সেখানে থেকে যায়, কেউ পালায়। সহিংসতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত ও বিধ্বস্ত মানুষ আবার সব ফেলে পালাতে বাধ্য হয়। গত সপ্তাহে ইসরাইল গাজা সিটির আরও গভীরে প্রবেশ করে বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তাদের এ উদ্যোগের নিন্দা জানানো হয় আন্তর্জাতিকভাবে। |

No comments