ইসরাইলি আইনপ্রণেতার ভিসা বাতিল করলো অস্ট্রেলিয়াঃ '১ ইসরাইলির বদলে ৫০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হওয়া উচিৎ'

ইসরাইলি আইনপ্রণেতার ভিসা বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের একজন আইনপ্রণেতার ভিসা বাতিল করেছে। যিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ওই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলও পাল্টা অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিকদের ভিসা বাতিল করেছে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, ইসরাইলে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্রদূতকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে,  অন্য অনেক দেশের মতো ইসরাইলের তেল আবিবে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস রয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কার্যালয় রয়েছে রামাল্লার পশ্চিম তীরে। গিদিয়ন সার এক্সের এক পোস্টে জানিয়েছেন, আমি ক্যানবেরাতে অবস্থিত ইসরাইলের দূতাবাসকে ইসরাইলে প্রবেশ করতে চায় এমন যে কারোর ভিসার আবেদন ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে। এসময় তিনি ইসরাইলিদের ভিসা বাতিলের অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে আখ্যা দেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে একে অবৈধ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, আগামী মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া। যা দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরাইলের ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালের স্ট্রমিচের ইহুদিবাদী দলের সংসদ সদস্য সিমচা রথম্যান বলেছেন, এই মাসে তার একটি ইহুদি সংগঠনের আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিলো। তবে তিনি জানতে পারেন তার ভিসা বাতিল হয়েছে।

'৭ অক্টোবর প্রত্যেক নিহত ইসরাইলির বদলে ৫০ জন করে ফিলিস্তিনির মৃত্যু হওয়া উচিৎ'

৭ অক্টোবর প্রত্যেক নিহত ইসরাইলির বদলে ৫০ জন করে ফিলিস্তিনির মৃত্যু হওয়া উচিৎ। এখন তারা শিশু হোক বা না হোক তা কোনো বিষয় নয়। ইসরাইলের চ্যানেল ১২ টিভি স্টেশন দ্বারা সম্প্রচারিত রেকর্ডিংয়ে একথা বলতে শোনা গেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা প্রধান আহারোন হালিভাকে। যিনি ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন। আহারুন হালিভা বলেন, গাজায় নিহতের সংখ্যা, যা তিনি ৫০,০০০ এরও বেশি বলে মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বার্তা’ হিসেবে ‘প্রয়োজনীয়’ ছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মাঝে মাঝে একটি ‘নাকবা’ অনুভব করা প্রয়োজন, যাতে তারা ইসরাইলিদের ওপর হামলা চালানোর মূল্য বুঝতে পারে।’

নাকবা আরবি ভাষায় ‘বিপর্যয়’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ৭ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি ও জমি থেকে বিতাড়িত ও গণ বাস্ত্যচুতির ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

যদিও চ্যানেল ১২ প্রকাশ করেনি যে কীভাবে তারা রেকর্ডিংগুলো পেয়েছে বা হালিভা কার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ইসরাইলিদের মধ্যে হালিভাকে বর্তমান সরকার এবং তার অতি-ডানপন্থী মন্ত্রী যেমন বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইটামার বেন-গভির সমালোচক হিসেবে মধ্যমপন্থী হিসেবে দেখা হয়, যা রেকর্ডিংয়ে তিনি নিজেই উল্লেখ করেছিলেন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে
ইসরাইলের বেশিরভাগ নেতৃত্ব এবং গণমাধ্যম ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে গণহত্যামূলক বক্তব্য ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তাদের ‘মানব পশু’ হিসাবে বর্ণনা করা। যুদ্ধের উপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে হামাস সদস্য নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০,০০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাই হালিভা জানতেন যে তার দেশের নিজস্ব হিসাব অনুসারেও নিহত বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিই বেসামরিক নাগরিক।

হামাসের নেতৃত্বাধীন সীমান্তবর্তী আন্তঃসীমান্ত হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি করে রাখা হয়।

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা সম্পর্কে হালিভার মন্তব্য অন্যান্য মূলধারার ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়নি। বরং তারা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ব্যর্থতার সতর্কীকরণের উপর আলোকপাত করেছে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

দাতব্য রান্নাঘরের খাবার পেতে ফিলিস্তিনিদের আকুতি। আজ সোমবার গাজার খান ইউনিস এলাকায়
দাতব্য রান্নাঘরের খাবার পেতে ফিলিস্তিনিদের আকুতি। ৪ আগস্ট ২০২৫  সোমবার গাজার খান ইউনিস এলাকায়। ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.