গার্ডিয়ানের রিপোর্ট: গাজা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল

গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তারা কয়েকদিন আগেই ঘোষণা দেয়- গাজা সিটি ও এর আশপাশের সব এলাকা দখল করে নেবে। এমন ঘোষণার পর জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে সেই দখল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করবে। অর্থাৎ তাদের বৈধ আবাসন থেকে তাড়িয়ে দেবে।

অন্যদিকে হামলা চলছেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি অভিযানে ইতিমধ্যেই সেখান থেকে কমপক্ষে ৬১ হাজার বেসামরিক নিহত হয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভিক্ষ। সেই অনাহারী, দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষের ওপরও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, রোববার থেকে গাজার বাসিন্দাদের তাঁবু ও অন্যান্য আশ্রয় সরঞ্জাম দেয়া হবে যাতে তাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দক্ষিণে সরিয়ে নেয়া যায়। তবে তারা বলেনি কবে থেকে এই গণউচ্ছেদ শুরু হবে। ইসরাইল একাধিকবার তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’-এও বোমা বর্ষণ করেছে। শনিবার দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে একটি শিশুকন্যা ও তার বাবা-মা নিহত হয়েছেন ইসরাইলি বিমান হামলায়। আল-মাওয়াসিকে এর আগে মানবিক অঞ্চল ঘোষণা করেছিল ইসরাইল।

আল-মাওয়াসি এখন গাজার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের একটি। কারণ ইসরাইল মানুষদের ওই নির্জন এলাকায় ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, আসন্ন অভিযান আল-মাওয়াসি, গাজা সিটি এবং কেন্দ্রীয় শিবিরগুলো- অর্থাৎ নুসেইরাত ও বুরেইজ শরণার্থী শিবির অন্তর্ভুক্ত করবে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শনিবার নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৩ জনকে সেনারা গুলি করেছে।

এ সময় তারা উত্তর ও দক্ষিণে ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রের কাছে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি অবরোধে সহায়তা না আসার কারণে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এখন ২৫১।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা নগরীতে বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে এবং জয়তুন এলাকায় আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলা বাড়ছে। হামাস বলেছে, শনিবার ওই এলাকায় যুদ্ধবিমান, কামান ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাস্সাল বলেন, জয়তুনে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সেখানে আটকে আছে। তাদের বেশির ভাগই খাদ্য ও পানি বিহীন এবং জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিস থেকেও বঞ্চিত। তিনি এটিকে জাতিগত নির্মূল বলে অভিহিত করেন।
৪০ বছর বয়সী ঘাসান কাশকো পরিবার নিয়ে জয়তুনের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ঘুমের স্বাদই ভুলে গেছি। অবিরাম বিস্ফোরণ আর ট্যাংকের গোলাবর্ষণে রাত-দিন একাকার হয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো, এমনকি ইসরাইলের ভেতরের সংগঠনও বলছে এটি গণহত্যা।

শনিবারের ঘোষণায় ইসরাইল জানায়, জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে আশ্রয় সামগ্রী কারেম শালোম সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ গাজায় নেয়া হবে। তবে ইসরাইলি পরিদর্শন ও প্রশাসনিক জটিলতায় এতদিন অনেক সহায়তাই প্রবেশ করতে পারেনি। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণে মানুষ সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা কেবল দুর্ভোগ বাড়াবে। তবে তারা আশ্রয়ের প্রয়োজন স্বীকার করাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাবো।

জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার সতর্ক করে, গাজা সিটি থেকে মানুষ উচ্ছেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হাজার হাজার পরিবার ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে আরও নিমজ্জিত হবে। ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলেও নয়। সেখানে ইসরাইল লোকজনকে যেতে বলছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাতজ বলেন, নতুন অভিযানের পরিকল্পনা এখনো প্রণয়নাধীন। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ হামাসের মিত্র। সেনাবাহিনীর এই ঘোষণাকে তারা গাজা নগরী দখলের নির্মম অভিযানের অংশ এবং আন্তর্জাতিক আইনকে প্রকাশ্য উপহাস বলে আখ্যায়িত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.