ভিডিও ভাইরাল: ২১ বছর ধরে কারাবন্দী বারগুতিকে হুমকি দিয়ে এলেন বেন–গভির

ইসরায়েলের কারাগারে গিয়ে সুপরিচিত ফিলিস্তিনি বন্দী মারওয়ান বারগুতিকে হুমকি দিচ্ছেন ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

ইসরায়েলি কারাগারের এ ভিডিওতে বেন–গভিরকে বলতে শোনা যায়, ‘ইসরায়েলের বিরোধিতা করলে যে কেউ “ধ্বংস” হয়ে যাবে।’

এ ভিডিওর মধ্য দিয়ে অনেক বছর পর বারগুতিকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা গেল। ভিডিওতে তাঁকে বয়সের ভারে ক্ষীণ হয়ে পড়া, সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা একজন ব্যক্তি ও প্রায় অচেনারূপে দেখা যায়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওই ভিডিও। তাতে দেখা যায়, বেন–গভির বারগুতিকে বলছেন, ‘যে–ই ইসরায়েলের জনগণের সঙ্গে ঝামেলা করবে, আমাদের সন্তানদের হত্যা করবে, আমাদের নারীদের হত্যা করবে, তাঁকে আমরা ধ্বংস করে দেব। আমাদের হারাতে পারবে না।’

২০০৪ সাল থেকে কারাগারে আছেন ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারগুতি। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিয়ন্ত্রণকারী দল ফাতাহর একজন শীর্ষ নেতা তিনি। ২০০০–২০০৫ সালে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় (গণ–অভ্যুত্থান) নেতৃত্ব দেওয়ায় ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে নিশানা করে ইসরায়েল।

মারওয়ানের ছেলে কাসেম বারগুতি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ভিডিও প্রকাশের পর পরিবার গভীরভাবে তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

কাসেম বলেন, ‘দুই বছর ধরে তাঁকে (মারওয়ান) হুমকি ও আক্রমণের একটি ধারাবাহিকতা চলছে। (গাজায়) যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবার তাঁকে দুই বছর আগে আক্রমণ করা হয় এবং তিনি আহত হন।’

মারওয়ান বারগুতির ছেলে আরও বলেন, ‘আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন–গভির, যিনি ইসরায়েলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেতৃত্বের প্রতিনিধি, তাঁর জীবনকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছেন।’

কাসেমের মতে, ‘স্পষ্টভাবে বলা যায় যে তাঁকে (মারওয়ান) তাঁর সেলের ভেতরে হত্যা করার সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন করা ও নিশানা বানানো আসলে গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যারই অংশ।’

ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বেন–গভির কারা কমিশনার কোবি ইয়াকোবির সঙ্গে তেল আবিবের গানোট কারাগারে যান। সেখানে ‘বন্দী সন্ত্রাসী’দের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার বিষয়টি কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা।

দীর্ঘদিন ধরে বারগুতি একাকী সেলে বন্দী। পাঁচ ইসরায়েলিকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে পাঁচ দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অতিরিক্ত ৪০ বছরের সাজা দিয়েছেন ইসরায়েলি আদালত। বারগুতি এ আদালতের বৈধতা অস্বীকার করলেও নিজের পক্ষে কোনো সাফাই দেননি।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ৬৬ বছর বয়সী বারগুতি যদি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন, তবে তিনি সহজেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হবেন।

ফাতাহর সঙ্গে বারগুতির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক অজনপ্রিয় ‘ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ’ (পিএ)–এর সঙ্গে যুক্ত দলটি। অবশ্য তিনি ফিলিস্তিনি ঐক্যের একজন প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।

গত জানুয়ারিতে মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বারগুতির মুক্তির জন্য মিসর ও কাতার, পাশাপাশি হামাসও ‘সব ধরনের উপায়’ ব্যবহার করছে।

আলোচনায় ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে চালানো হামলায় জিম্মি ইসরায়েলিদের বিনিময়ে যেসব বন্দী ফিলিস্তিনি নেতার নাম মুক্তির তালিকায় ছিল, বারগুতি তাঁদের শীর্ষে ছিলেন।

সূত্র আরও জানায়, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং মিসরের সাধারণ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল হাসান মাহমুদ রাশাদ ব্যক্তিগতভাবে বারগুতির মুক্তির পক্ষে উদ্যোগ নেন।

তবে অন্য একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছিল, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্ব টলে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় পিএর শীর্ষ নেতারা তাঁকে বন্দী বিনিময় থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

নতুন ভিডিও প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার ফাতাহর সাবেক প্রার্থী ও বারগুতির সমর্থক আউনি আলমাশনি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘বেন–গভির মনে করেন, তিনি এভাবে ফিলিস্তিনি জনগণকে অপমান করছেন।’

‘কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণ এবং মারওয়ানের সব অনুরাগী গর্বিত তাঁর কিংবদন্তি–সম দৃঢ়তা, মহান অবস্থান ও দখলদারের নৃশংসতার সামনে অনমনীয়তার জন্য’, যোগ করেন আউনি। তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব মারওয়ান করছেন, তা কখনোই নিপীড়ন, অন্যায় কিংবা ঔদ্ধত্যে ভাঙা যাবে না।’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর ব্যাপক হারে ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার বা আটক ও ইসরায়েলি কারাগারের নীতিমালা কঠোর করার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম।

বারগুতিকে বিশেষভাবে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। গাজায় সাম্প্রতিকতম তাণ্ডব শুরুর পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি কারারক্ষীদের আক্রমণে তাঁর মাথা, কান, পাঁজর, ডান হাত ও পিঠে আঘাত লাগে।

বেন–গভির অবৈধ ইসরায়েলি ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রভাবশালী নেতা। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের জীবনের মান খারাপ করা তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই

বারগুতিকে প্রায়ই ‘ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা’ বলে ডাকা হয়। দখল করা পশ্চিম তীর ও গাজায় জনমত জরিপে বারগুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা
বারগুতিকে প্রায়ই ‘ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা’ বলে ডাকা হয়। দখল করা পশ্চিম তীর ও গাজায় জনমত জরিপে বারগুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা। ছবি : এএফপি

No comments

Powered by Blogger.