ইসরাইল গাজা দখল করে নিলে বাধা দেবেন না ট্রাম্প
উল্লেখ্য, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অনেকবার গাজাকে দখল করে নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধ শুরুর আগে তিনি গাজাকে এক ‘জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে’ পরিণত করার হুমকি দেন। তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে খালি করে সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তিনিও গাজাকে দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা দেন। সম্প্রতি গাজায় যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে তাতে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রান্স, বৃটেন সহ আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘ বার বার সতর্ক করছে। বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। মানুষ খাবারের জন্য পাগলের মতো আচরণ করছে। কিন্তু তাতে নেতানিয়াহু বা ডনাল্ড ট্রাম্প কারো টনক নড়ছে না। তবে এরই মধ্যে গাজার মানুষ অনাহারে থাকার কথা স্বীকার করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরাইল তাদের সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে একটি ক্ষুদ্র গণ্ডিতে ঠেলে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে গাজার ৮৬ শতাংশ ভূখণ্ড পরিণত হয়েছে সামরিক এলাকায়। এই সংকুচিত অঞ্চলে ইসরাইল যদি সামরিক অভিযান আরও বাড়ায়, তবে তা গাজাবাসীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা পুরোপুরি দখল করার পরিকল্পনা করছেন। সেই খবরও নানা উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে সেখানে এখনও হামাস ও অন্য গোষ্ঠীর হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনকা মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, গাজার পূর্ণ দখল বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন এই বিষয়ে স্পষ্ট। গাজা ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই থাকতে হবে। ২০০৫ সালে ইসরাইল গাজা থেকে সেনাবাহিনী ও বসতি প্রত্যাহার করলেও, আন্তর্জাতিক আইনবিদদের মতে গাজা এখনো ‘কার্যত দখলকৃত’ অঞ্চল। কারণ ইসরাইল এখনও গাজার আকাশপথ, জলসীমা এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ডানপন্থী ইসরাইলি নেতারা আবার গাজায় সেনা উপস্থিতি ও বসতি স্থাপন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এমনকি নেতানিয়াহু নিজেও ইঙ্গিত দেন, তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে চান- যা এক প্রকার জাতিগত নিধন হিসেবেই বিবেচিত হবে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে আগেই একমত হন ট্রাম্পও। তিনি ফেব্রুয়ারিতে মন্তব্য করেন, গাজা থেকে সমস্ত জনগণকে সরিয়ে সেখানে একটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ নির্মাণ করা যেতে পারে। এদিকে গাজায় ইসরাইলের সম্ভাব্য আরও বড় মাপের স্থল অভিযান নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ সেখানে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। মার্চ মাস থেকে ইসরাইল প্রায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মার্কিন-সমর্থিত জিএইচএফ-এর পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোই একমাত্র খাদ্য প্রাপ্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় বহু ফিলিস্তিনি ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবুও যুক্তরাষ্ট্র জিএইচএফকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘকে সহায়তা বিতরণের দায়িত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তাতে কেউ কান দিচ্ছে না।
কয়েক দিনে ইসরাইল কিছু ট্রাক এবং বিমান থেকে খাদ্য বিতরণের অনুমতি দিলেও এই সহায়তা গাজার বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এ অবস্থায় মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, তার প্রশাসন গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে জিএইচএফকে। তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি গাজাবাসীর জন্য প্রচুর খাদ্য, সত্যি বলতে প্রচুর সরবরাহের জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছি। তারা যে ভালো অবস্থায় নেই, সেটি সবার জানা। ট্রাম্প আরও বলেন, আমার মনে হয় ইসরাইল আমাদের সঙ্গে এই সহায়তা বিতরণে এবং অর্থায়নে সহযোগিতা করবে। এছাড়া আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও অনেকে অর্থায়ন ও বিতরণে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

No comments