গাজা সিটি দখল শুরু করেছে ইসরাইল
ওদিকে হামাস ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে দেয়ার অভিযোগ এনে বলেছে, ইসরাইল নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্মম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা সিটির কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজার আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বুধবার বলেছেন, ইসরাইলের এই পরিকল্পনা দুই জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং পুরো অঞ্চলকে স্থায়ী যুদ্ধের চক্রে ঠেলে দেবে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সতর্ক করে বলেছে, নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ও সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে। ইসরাইল সরকার গত মাসে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়া ভেঙে যাওয়ার পর পুরো গাজা দখলের ঘোষণা দেয়।
বুধবার টেলিভিশন ব্রিফিংয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছে, ২২ মাসের যুদ্ধের পর হামাস ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে আরও বলে, আমরা গাজা সিটিতে হামাসের ক্ষতি আরও গভীর করব, যা ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রশাসনিক ও সামরিক সন্ত্রাসের ঘাঁটি। আমরা ভূপৃষ্ঠের ওপরে ও নিচে সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করব এবং জনগণের হামাসের ওপর নির্ভরতা ছিন্ন করব। ডেফরিন জানায়, সেনারা ইতিমধ্যে শহরের প্রান্তে অবস্থান করছে। জয়তুন এলাকায় দুটি ব্রিগেড কাজ করছে এবং সেখান থেকে অস্ত্রভর্তি একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছে। জাবালিয়া এলাকায় আরও একটি ব্রিগেড অভিযান চালাচ্ছে। সে দাবি করে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কমানোর জন্য তাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সতর্কবার্তা দেয়া হবে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, জয়তুন ও সাবরা এলাকায় পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অসহনীয়। বুধবার ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনটি শিশু ও তাদের বাবা-মা ছিলেন। ডেফরিন বলে, হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন জিম্মিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সেনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে তাদের পরিবারগুলো আশঙ্কা করছে, গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু হলে জিম্মিরা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
রেডক্রস সতর্ক করে বলেছে, সামরিক কার্যক্রম তীব্র হলে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এবং জিম্মিদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, মাসের পর মাস সংঘাত আর বারবার বাস্তুচ্যুতিতে গাজার মানুষ সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত। তাদের প্রয়োজন স্বস্তি, ভয় নয়। তাদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার জন্য প্রয়োজন খাদ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি এবং নিরাপদ আশ্রয়। সামরিক অভিযান আরও বাড়লে কেবল ভোগান্তি বাড়বে, পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হবে এবং এক অপূরণীয় মানবিক সংকট তৈরি হবে। জিম্মিদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে। এজন্য তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে। মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও প্রায় অর্ধেক জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। হামাস তা সোমবার গ্রহণ করে। তবে ইসরাইল আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আর আংশিক কোনো চুক্তি মানবে না; বরং সব জিম্মি মুক্তির ব্যাপারে সমঝোতা চায় তারা। হামাস বুধবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উপেক্ষা করার অভিযোগ এনে বলেছে, সে যে কোনো চুক্তির প্রধান বাধা।

No comments