মাহাথিরের চোখে সত্যি কি আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক ভিত্তি নড়বড়ে?
সাম্প্রতিক একাধিক বক্তব্য ও ফেসবুক পোস্টে মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্ব, নৈতিকতা এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। মাহাথির মোহাম্মদের অভিযোগ, আনোয়ার ইব্রাহিম জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রধানমন্ত্রী হননি। তিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিভিন্ন পরাজিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। এর ফলে জনগণের প্রকৃত রায় উপেক্ষিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আরও স্পর্শকাতর ইস্যু সেখানে উঠে এসেছে যে, মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাধারণ ক্ষমা। ২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদ যখন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার শাসনামলেই আনোয়ার ইব্রাহিম রাজক্ষমার মাধ্যমে মুক্তি পান এবং রাজনীতিতে ফিরতে সক্ষম হন। তবে এখন মাহাথির মোহাম্মদ বলছেন, তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরামর্শ অনুযায়ী, এবং তখন তা সঠিক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ বিষয়ে আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। সম্প্রতি তুন মাহাথির মোহাম্মদের ভাষায়, আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমা বৈধ না হলে তার সংসদ সদস্য হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকার বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
মাহাথির মোহাম্মদ, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। তিনি বলেছেন, একসময় যিনি রিফর্মাসি আন্দোলনের নেতা ছিলেন, আজ তিনিই প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন। সাধারণ মানুষ আনোয়ারের নেতৃত্বে হতাশ হয়ে “ডাউন আনোয়ার” স্লোগানে রাস্তায় নামছে বলে মাহাথির দাবি করেন। বিশেষ করে আলোর সেতার এলাকায় এই স্লোগান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিম মাহাথিরকে সরাসরি জবাব না দিলেও সম্প্রতি পুলাউ বাতু পুতেহ ইস্যুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করেন। রাজপরামর্শ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দ্বীপের সার্বভৌমত্ব বিষয়ে ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় এবং পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে মামলাভুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আনোয়ার ইব্রাহিম এ প্রসঙ্গ টেনে তুলে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন এখানে একটি বড় ধরনের ভুল হয়েছিল, তবে মাহাথিরের বয়স বর্তমানে ১০০ বছর হওয়ায় মানবিক বিবেচনায় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তার ভাষায়, “তিনি কি দোষী ছিলেন না? ছিলেন। আমরা কি ব্যবস্থা নিতে পারি? পারি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তা করব না।” দেশটির বারনামা সহ প্রায় সবকটি গণমাধ্যম ফলাও করে এসব খবর দিয়েছে।
এই অবস্থানে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দ্বিধাবিভক্ত। একদল মনে করছেন, তুন ড. মাহাথিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার মধ্যে মানবিকতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রকাশ রয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন, এটি জবাবদিহিতার ব্যত্যয়, যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দোষী প্রমাণিত হলেও বয়সের দোহাই দিয়ে আইনের বাইরে রাখা হচ্ছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার রাজনীতি সেই পুরনো দ্বন্দ্বে মাহাথির মোহাম্মদ বনাম আনোয়ার ইব্রাহিম। কিন্তু এবার দ্বন্দ্বটি কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে নৈতিকতা, আইনগত বৈধতা, এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে। দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ ও মতবিরোধের এই পর্যায়ে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা এখন সময়ই বলবে।

No comments