ইরানে হামলা: যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির অস্ত্র নিয়ে ১৪ কার্গো বিমান ইসরায়েলে

অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের চালান নিয়ে আরও কয়েকটি পরিবহন উড়োজাহাজ (কার্গো) গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। এসব অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে এসেছে বলে তুরস্কের সরকারি সংবাদমাধ্যম আনাদলু জানায়।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের হামলা শুরুর পর এ নিয়ে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৪টি কার্গো ইসরায়েলে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর ৮০০ কার্গো এ ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইসরায়েলে এসেছে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, অস্ত্রের এই সরবরাহ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর আভিযানিক ধারাবাহিকতা জোরদার এবং এর সব ধরনের চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টারই অংশ। এটি যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন এবং প্রস্তুতি ও মজুত বাড়ানো, উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন এসব চালানে কী ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এমন সময় অস্ত্রের নতুন চালানের এ কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, যখন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ইসরায়েলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ‘অ্যারো’র ক্ষেপণাস্ত্রের (ইন্টারসেপ্টর) মজুত ফুরিয়ে আসছে। যদিও এ খবর নাকচ করে দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।

ইসরায়েল ১৩ জুন ভোররাতে ইরানে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে। জবাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গত কয়েক দিনে ১৪ দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার কথা জানিয়েছে ইরানের সামরিক বাহিনী। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বেশির ভাগই আকাশে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো নিয়ে চিন্তা

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠিয়েছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অবগত আছে এবং স্থল, সমুদ্র ও আকাশে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে।

গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি ইরান একই গতিতে আক্রমণ চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ছাড়া অথবা মার্কিন বাহিনীর ব্যাপক অংশগ্রহণ ছাড়া ইসরায়েল আর ১০-১২ দিন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বজায় রাখতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা মূল্যায়ন সম্পর্কে অবহিত এক ব্যক্তি এ তথ্য জানান।

উল্লিখিত ব্যক্তি জানান, চলতি সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হয়তো কমসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হবে। কারণ, তাদের প্রতিরক্ষা গোলাবারুদ পালা করে ব্যবহার করতে হবে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই ব্যক্তি আরও বলেন, তাদের (ইসরায়েল) বেছে নিতে হবে তারা কোনটা (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকাতে চায়। ইতিমধ্যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জিবিইউ-৫৭ ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ইরানের ফোর্দোয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। কেন্দ্রটি পাহাড়ের ভূগর্ভে তৈরি করা হয়েছে, এর মূল কক্ষগুলো মাটির নিচে ৮০ থেকে ৯০ মিটার (প্রায় ২৬০ থেকে ৩০০ ফুট) গভীরে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন, ইসরায়েল যদি এসব ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা করতে চায়, তাহলে সম্ভবত তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার হবে। কারণ, সেখানে ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম বোমা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে।

জিবিইউ-৫৭ বাংকার বাস্টার নামে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমাটি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামে পরিচিত। এতে ১২ টনের বেশি বিস্ফোরক থাকে।

No comments

Powered by Blogger.