গাজায় তীব্র হচ্ছে ইসরাইলের হামলা, নতুন করে ৪২৩,০০০ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত: গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে সশস্ত্র ড্রোনের হামলা
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজায় সংস্থাটির মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) সতর্ক করেছে, ইসরাইলি হামলা তীব্র হওয়ায় এবং উপত্যকায় আভ্যন্তরীণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় মানবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেল আবিবের হামলা ত্রাণকর্মী ও তাদের স্থাপনার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ইসরাইল বর্তমানে মানুষের বসতবাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, বিশেষ করে যেসব স্থানে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছে, সেগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এতে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে, বিশেষ করে রাফা এবং গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে এর তীব্রতা বেড়েছে। ডুজারিক বলেছেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় নতুন করে ৪ লাখ ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যাদের কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। গাজায় এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও অভাব দেখা দিয়েছে। ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, জানান ডুজারিক।
তিনি আরও বলেন, এদিকে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা এখনো জীবনরক্ষাকারী জরুরি জ্বালানির মজুদ উদ্ধার করতে পারছেন না, কারণ এসব এলাকায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, মধ্য এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত আমরা নয়বার চেষ্টা করেছি, যার মধ্যে আটবারই ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাধা পেয়েছি।
গাজার শিশুদের ওপর চলমান সহিংসতার ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মুখপাত্র। তিনি বলেন, শিশুদের নিয়ে কাজ করা আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে, গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই শিশু। যারা দিন দিন ট্রমাটাইজ হয়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং প্রতিনিয়ত অবহেলার ফলে শিশুদের এই অবস্থা হচ্ছে।
দখলকৃত পশ্চিম তীর প্রসঙ্গে ডুজারিক বলেন, আজ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলা শুরুর ১০০তম দিন। এই অভিযানের ফলে সেখানে হতাহত, ধ্বংস এবং গণবিচ্ছিন্নতার তীব্রতা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এখনও চার লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে, যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে সশস্ত্র ড্রোনের হামলা
মানবিক সহায়তা বোঝাই গাজা অভিমুখী একটি জাহাজে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে। মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, শুক্রবার এক বিবৃতিতে ওই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে মানবিক সহায়তা আয়োজনকারী সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)। বলেছে, নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সম্মুখভাগে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর কাঠামোয় বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল।
শুক্রবার ভোরে জাহাজের জেনারেটর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজার দিকে যাওয়ার পথে মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরে হামলার শিকার হয় জাহাজটি। জেনারেটর লক্ষ্য করে হামলা চালানোয় জাহাজটি পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে এফএফসি জানিয়েছে, জাহাজটিতে মোট ২১টি দেশের অধিকারকর্মীরা ছিলেন। ইসরাইলের অবৈধভাবে গাজা অবরোধ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদ এবং গাজাবাসীর জীবন রক্ষার জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে যাত্রা করেছিলেন তারা। প্রসঙ্গত, মার্চের মাঝামাঝিতে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এই দফার হামলায় অন্তত ২ হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন। এতে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে।

No comments