ত্রাণ না পৌঁছালে গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যুর শঙ্কা
১৯ মাস ধরে চলমান হামলার মধ্যে গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এর প্রায় ১১ সপ্তাহ পর সম্প্রতি উপত্যকাটিতে খাদ্যপণ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নেতানিয়াহু সরকার। পরে আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রতিদিন গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে তারা, যদিও দিনে উপত্যকাটিতে ৫০০ ট্রাক ত্রাণের প্রয়োজন।
বিবিসির ‘রেডিও ফোরস টুডে’ অনুষ্ঠানে আজ জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, আগের দিন সোমবার গাজায় মাত্র পাঁচটি ত্রাণের ট্রাক ঢুকেছে। পরিমাণটা ‘সাগরে এক ফোঁটা পানির মতো’। ওই ট্রাকগুলোয় শিশুদের খাবার রয়েছে। এই খাবারগুলো যদি গাজার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানো না যায়, তাহলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোরব থেকে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মাঝখানে মাস দুয়েকের যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গত ১৮ মার্চ আবার নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে সম্প্রতি গাজায় ‘অপারেশন গিডেয়নস চ্যারিওটস’ নামে অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় তারা। এর পর থেকে উপত্যকাটিতে হামলার বিস্তৃতি বাড়িয়েছে ইসরায়েল।
আজও গাজার বিভিন্ন প্রান্তে তুমুল হামলা চালানো হয়েছে। এতে শিশুসহ অন্তত ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গতকাল ইসরায়েলের হামলার পর ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে গাজা নগরীর মুসা বিন নুসাইর স্কুলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ সময় মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়। স্কুলটিতে হামলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজার চিকিৎসাকর্মীদের বরাতে আজ রয়টার্স জানিয়েছে, আগের আট দিনে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি নৃশংসতায় উপত্যকাটিতে ৫৩ হাজার ৫৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ফিলিস্তিনি। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ‘নজিরবিহীন হামলার’ হুঁশিয়ারি দিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিরা এখন পাশের আল-মাওয়াসি এলাকায় পালিয়ে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই গাজার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এমন নৃশংসতার মধ্যে ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। গত সোমবার দেশ তিনটি বলেছে, গাজায় নতুন করে শুরু করা সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ত্রাণ প্রবেশে বাধা সরিয়ে না নিলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে তারা।
জবাবে আজ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যুদ্ধ আগামীকালই থামতে পারে, যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়, অস্ত্র পরিত্যাগ করে, তাদের হত্যাকারী নেতাদের নির্বাসিত করে এবং গাজাকে বেসামরিকীকরণ করে।’
![]() |
| ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির তীব্র সংকট। পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাস্তুচ্যুত অসহায় ফিলিস্তিনিদের। আজ গাজা নগরীর একটি আশ্রয়শিবিরে। ছবি: এএফপি |

No comments