‘দ্রুত অগ্রগতি না হলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র’ -রাশিয়ার হামলা, নিহত ২

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করেছেন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর লক্ষণ স্পষ্ট না হলে অল্প সময়ের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তির মধ্যস্থতার চেষ্টা বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই সতর্কবার্তা দিলেন রুবিও। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধে সহায়তা করতে চায়, তবে এ বিষয়ে যদি তাৎক্ষণিক কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান না হয় তাহলে তারা এই পদক্ষেপ থেকে সরে দাঁড়াবেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে না বলে সতর্ক করেছেন রুবিও। বলেছেন, আমরা সপ্তাহ বা মাসের পর মাস ধরে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ দেয়ার মতো আরও অনেক বিষয় আছে। ইউক্রেন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কিয়েভের একটি খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষরের প্রথম পদক্ষেপ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর এই মন্তব্য করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে রুবিও বলেন, আমাদের এখন দ্রুত এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে বা স্বল্পমেয়াদে এ বিষয়টি সম্ভব কিনা সেটার কথা বলছি। যদি এমনটি না হয় তাহলে আমরা সামনে অগ্রসর হবো। রুবিও বলেছেন, যদিও একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো কঠিন বিষয়; তবে আমরা চাই যে এটা দ্রুত হোক।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি স্মারকলিপি স্বাক্ষর করার পর এই মন্তব্য সামনে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি বিনিয়োগ তহবিল প্রতিষ্ঠা করতে চায় উভয় দেশ। ২৬শে এপ্রিল থেকে এই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নথিতে খনিজ সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে আগে ফাঁস হওয়া এক নথি থেকে জানা যায়, চুক্তিটি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের সঙ্গে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো, সেই সঙ্গে তেল ও গ্যাসের নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ভবিষ্যতে যেকোনো যুদ্ধবিরতি সমর্থন করে কিয়েভকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানের বিরোধিতা করে আসছে ওয়াশিংটন। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, একটি মুক্তি, সার্বভৌম এবং নিরাপদ ইউক্রেনে বিনিয়োগ করতে চায় আমেরিকার জনগণ। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি এবং তাদের জনগণ ও সরকারের মধ্যে টেকসই অংশীদারিত্ব চায় যুক্তরাষ্ট্র। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এতে দুই দেশের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয় এবং সাময়িকভাবে তাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো থমকে যায়। যা পুনরায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহরে রাশিয়ার হামলা, নিহত ২

ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ ও সুমিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে ২ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার কিয়েভের কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, খারকিভের মেয়র ইগর তেরেখভ টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেছেন, শহরে একজন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, খারকিভে গুচ্ছবোমাসহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালিয়েছে মস্কে। এই হামলায় ১৫টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খারকিভের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ। আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন টেলিগ্রামে এক বার্তায় জানিয়েছে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সুমি শহরে ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার হামলায় একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছে। টেলিগ্রাম বার্তায় আরো বলা হয়েছে, রাশিয়া শহরের একটি বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে। গত রোববার রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সুমি শহরে কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। বিশ্ব নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলা ছিল চলতি বছরে ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বৃহৎ হামলা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মধ্যে একটি। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান সত্ত্বেও বিমান হামলা বেড়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.