চিকিৎসাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইসরায়েলি বক্তব্য মিথ্যা: গাজা কর্তৃপক্ষ
হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনা ঘটেছিল ২৩ মার্চ গাজার দক্ষিণে রাফা এলাকার কাছে। সেদিন ওই চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকারীরা উদ্ধারকাজে যাচ্ছিলেন। গাজা রেডক্রসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তাঁদের নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে এবং হেডলাইট ও ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও গুলি চালিয়ে সবাইকে হত্যা করেন ইসরায়েলি সেনারা।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল–মুগাইর আজ সোমবার বলেন, চিকিৎসাকর্মীদের একজনের ধারণ করা ভিডিও এটাই প্রমাণ করে যে ইসরায়েলি দখলদারেরা যে বয়ান সামনে এনেছে, তা মিথ্যা এবং ভিডিওটি এটাই দেখিয়েছে যে তাৎক্ষণিক নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত সংস্থা (ওসিএইচএ) এবং ফিলিস্তিনি উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন রেড ক্রিসেন্টের সদস্য, ৬ জন গাজার সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী বাহিনীর সদস্য এবং ১ জন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কর্মকর্তা ছিলেন।
যা বলছে ইসরায়েল
১৫ জনকে হত্যার পর আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। পরে গতকাল রোববার ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইসরায়েল। তাতে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বা নির্বিচার গুলি করেছে—এমন অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেদিন ১৫ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ‘ভুলের’ কারণে হয়েছে। এ ঘটনায় সামরিক বাহিনীর একজন ‘ফিল্ড কমান্ডারকে’ চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য। যদিও এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকেই দাবি করা হয়েছিল, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জন যোদ্ধা ছিলেন।
গুলিতে নিহত সবার মরদেহ বালুর নিচে চাপা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। কিছুদিন পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। একে ‘গণকবর’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ওসিএইচএ। আর ইসরায়েলি বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন ‘মিথ্যায় ভরপুর’ বলে উল্লেখ করেছে রেড ক্রিসেন্ট। সংস্থাটির মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ এএফপিকে বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।’
২৪ ঘণ্টায় নিহত ৩৯
গাজায় আজও নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় সেখানে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন নিহত হলেন। মানবাধিকার সংস্থা প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাবে, তাঁদের মধ্যে ৫৯৫ জন শিশু ও ৩০৮ জন নারী।
এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চালানো ইসরায়েলের হামলায় ৫১ হাজার ২৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। এই ১৮ মাসে উপত্যকাটিতে আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৩১ জন। অপর দিকে গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের হিসাবে, উপত্যকাটিতে মোট নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। তাঁদের মধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের শিকার এবং বাস্তুচ্যুত হওয়া গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি আরও ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। গতকাল সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অবরোধের শিকার গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিতে হবে।
![]() |
| ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক চিকিৎসকের মুঠোফোন থেকে উদ্ধার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ছবি বিবিসির সৌজন্যে |

No comments