যখন হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল? -সারজিস আলম

আমরা যখনই তাদের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেন, যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং জুলাইয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?

শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেছেন তিনি। ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ। সারজিস আরও বলেন, আজ শাহবাগে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূরণ হওয়ার কথা ছিল। এই জেনারেশনকে ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করেন, তাহলে এই জেনারেশন সকল ক্ষমতার বিপক্ষে গিয়ে যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ৪ দফা দাবিতে শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের সমাবেশ
জুলাই অভ্যুত্থান, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ‘শহীদি সমাবেশ’ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দলকে নির্বাহী আদেশে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পরবর্তীতে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা।

চার দফা দাবিগুলো হলো- ১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ২. শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সমাবেশ থেকে জানানো হয়, এ দাবিতে আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ চালানো হবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩৬শে জুলাই (৫ই আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না আসে তাহলে ভারত কি মনে করবে? আমরা স্পষ্ট ভাষায় আধিপত্যবাদী ভারতের দিকে আর তাকাবো না। শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে পিলখানা ও শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ভারত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।

ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশীর সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে তাদের দেশে যে সকল খুনিকে জায়গা দিয়েছে তাদের বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। যে ছাত্র-জনতা রাজপথে জীবন দিয়ে খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছে তাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের নাম নেয়া এ অন্তর্বর্তী সরকারের মুখে মানায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন- এ প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিযোগিতায় নামুন। এবহ-ত কে ভয় করুন, যদি এ জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তাদের ইমোশন নিয়ে খেলার চেষ্টা করেন, তাহলে এ জেনারেশন সকল ক্ষমতা মোকাবিলা করে যে কাউকে ক্ষমতা থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামাতে পারে। সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো এক আহত ব্যক্তি বলেন, আমি চোখহারা জুলাই যোদ্ধা হয়ে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের কোনো পুনর্বাসন হতে পারে না। যারা তাদের পুনর্বাসন করতে চায়, তারা যেন ভারত বা পাকিস্তানে চলে যায়। আমরা বাংলাদেশপন্থিরা নতুন দেশ গঠন করবো। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা এ বি জোবায়ের বলেন, আমাদের জুলাই এখনো শেষ হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। আমরা চাই, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক এবং গণভোটের মাধ্যমে দলটিকে চিরতরে বিদায় করা হোক। তিনি শাপলা চত্বর ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সব ঘটনার দ্রুত বিচার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিও জানান।

তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ আজ টাকার পাহাড় গড়েছে, অথচ আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ আমাদের আশা বিক্রি করতে পারবে না। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা আশা করিনি ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে আমাদের সভা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, তাদের পুনর্বাসনের আগে আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলবে। শহীদ সাইমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল যে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল? ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেন আর কখনো এ দেশে রাজনীতি করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- পুসাবের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জাকারিয়া, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আব্দুল ওয়াহেদ, শহীদ সজলের মা, শহীদ সাইমের পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেকে। তারা সবাই একইসঙ্গে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানান।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.