রাতে ডাকাতি দিনে ছিনতাই সিলেটে আতঙ্ক by ওয়েছ খছরু
ভয় আর আতঙ্কের মধ্যদিয়ে রমজানের শুরু করেন সিলেটের মানুষ। আগেই এ নিয়ে শঙ্কা ছিল। রমজানে ঘটতে পারে অনেক ঘটনা। এই ঘটনাবলী সবেমাত্র শুরু। এরই মধ্যে পুলিশে কাজ হচ্ছে না। র্যাবের ব্যাকআপও কাজে আসছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে যেতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। এই অবস্থায় রমজানের প্রথম দিকেই হাঁপিয়ে উঠেছেন মানুষ। কী ঘটছে, কী হচ্ছে- এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা। প্রায় প্রতি রাতেই সিলেটে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা দেন। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১টা। গোলাপগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার মধ্যবর্তী নিমাদল মোকামবাজার। একটি মোটরসাইকেলে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি ঢুকেন ওই এলাকায়। সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ডাকাত আতঙ্ক। কয়েকটি মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষণা দেয়া হয়। লাঠিসোটা নিয়ে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেন সড়কে। আক্রমণ করেন ওই তিন ব্যক্তির ওপর। বহনকারী মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেন। গণপিটুনিতে আহত হন ওই তিন ব্যক্তি। পরে তাদের নিমাদলের একটি বাজারে আটকে রাখা হয়। রাত ২টায় পুলিশের একটি দল যায় তাদের উদ্ধারে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপরও হয় চড়াও। হামলা করা হয় পুলিশের গাড়িতে। কয়েকজন পুলিশ জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে দূরবর্তী স্থানের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। মানুষ তখন বিক্ষুব্ধ। কেউ কারও কথা শুনছে না। আটক তিন ব্যক্তিকে ডাকাত দাবি করে বারবার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিরা সামাল দিয়েছেন। রাত ৪টার দিকে নিমাদলে যায় সেনাবাহিনীর টিম। সঙ্গে পুলিশও। এ সময় তারা ওখান থেকে গণপিটুুনির স্বীকার তিনজনকে আটক করে নিয়ে আসেন। আটককৃতরা হলেন- সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে জমির উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বইটিকর এলাকার ফখরুল ইসলাম ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের জয়নাল। গোলাপগঞ্জের ওসি মো. মনিরুজ্জামান মোল্যা জানান, ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে হাজারো উত্তেজিত জনতা গাড়ি লক্ষ্য করে টিল ছুঁড়ে মারেন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আমরা তিনজনকে আটক করে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, গণপিটুনিতে তিনজনই জখম হয়েছে। রাতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওইদিন শুধু নিমাদলেই নয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমায়ও। ওই তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ সড়কে অবস্থা নিয়ে পাহারা জোরদার করে। বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী পরিস্থিতিতে বিশ্বনাথ থানার ফেসবুক আইডিতে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন- সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত প্রবেশ করেছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও মসজিদে মাইকিং করে লোকজনকে জড়ো করা হচ্ছে। ফলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতা বোধ তৈরি হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা না জেনে এভাবে ফেসবুক লাইভ এবং মাইকিং করে অস্থিরতা সৃষ্টি না করার জন্য সম্মানিত নাগরিকদের বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে। গুজব ছড়াবেন না এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। সন্দেহজনক কোনো ঘটনা দৃষ্টিগোচর হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এদিকে রাতে যখন ডাকাত আতঙ্ক, তখন সিলেটে দিনে ছিনতাই আতঙ্ক বিরাজ করে। সিলেট নগরে ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। চিহ্নিত অপরাধীরা ফিরেছে তাদের নিজের আস্তানায়। সাজিয়ে তুলেছেন অপরাধের ধরন। নিজের একান্ত অনুসারীদের দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ছিনতাই করে বেড়াচ্ছেন। নগরের রিকশাচালক রমিজ আলী। বুধবার মধ্যরাতে জানন, কাজির বাজার ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণ সুরমায় যাওয়া যাবে না। ব্রিজের দক্ষিণ অংশে ছিনতাইকারীরা বসে আছে। সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে কাজিরবাজার ও কিনব্রিজের উভয় পাশই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দেখা মিলে না। এখন মধ্যরাতের পর রিকশাচালকরাও নিরাপদে নগরে চলাচল করতে পারেন না। সিলেট নগরে প্রতিদিনই ছিনতাই হচ্ছে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা সবকিছু লুটে নিচ্ছে। সাহায্য চেয়েও পুলিশ আসে না। ফলে থানায় অভিযোগও পড়ছে কম। এই অবস্থায়ও পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। ছিনতাই বেড়ে চলেছে। ফলে সামনের ঈদবাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সিলেট নগরের ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে হকারকেই দায়ী করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজের নেতারা। বুধবার বিকালে এ নিয়ে তারা নগরের শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেছেন। এই মানবন্ধনে তারা অভিযোগ করেন, সিলেট নগরীর ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করে চলাচল উপযোগী করতে হবে। এখানে ঠিকমতো চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট শহরে সংঘটিত ছিনতাই ও চুরিতে হকারদের আশ্রয় প্রশ্রয় রয়েছে। তাই নগরীর ফুটপাথ হকারমুক্ত হলে চুরি-ছিনতাই কমে আসবে।

No comments