‘আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন নেজাম-সালেক’
গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশ সুপার বলেন, সাতকানিয়ায় নিহত ছালেকের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি হত্যা মামলা। এ ছাড়া চুরি ও বিস্ফোরক আইনেও মামলা আছে। নেজামের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তাদের গতিবিধি যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি গত তিন মাসে ওই এলাকায় তারা বিভিন্ন কাজে গিয়েছেন অন্তত ৮ বার। ঘটনার দিন তারা ৭টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে গিয়েছিলেন। ওখানে যারা দোকানদার ছিল তাদের কাছে অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন। হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মানিক চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, একটা কথা উঠেছে, একটি বিশেষ দলের চেয়ারম্যান সেখানে ছিল কিনা। আসলে সেখানে বিশেষ দলের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানকে আমরা খুঁজে পাইনি কিংবা তাদের সম্পৃক্ততা কোথাও পাইনি। বরং নিষিদ্ধঘোষিত একটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের আমরা অবিরত খুঁজে যাচ্ছি। তাদের ধরা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, নেজাম ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি খুন হওয়ার পরে যে অস্ত্রটি পেয়েছি। সেটি সিএমপির কোতোয়ালি থানার লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র। গুলি করতে করতে অস্ত্রের গুলি শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র কীভাবে তাদের কাছে গেল বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এগুলো আমাদের খুঁজতে হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে। এখানে দু’টি গ্রুপ পেয়েছি। একটা হচ্ছে গ্রামবাসী যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। যারা মারা গেছে তাদের পক্ষ হতেও কোনো মামলা হয়নি। যেহেতু আমরা পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করেছি, সেহেতু আইন অনুযায়ী আমরা অস্ত্র আইনে মামলা করেছি। তিনি বলেন, প্রশাসন নির্বিকার হয়ে গেছে কোনো অবস্থায় ভাবার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের মতো প্রকৃত সত্য ঘটনা উদ্?ঘাটনের জন্য যা কিছু দরকার, সবকিছু করবো। সেজন্য একটু সময় নিচ্ছি।
এদিকে পুলিশের এই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে দাবি করে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি আইয়ুব আলী বলেন, থানায় এ বিষয়ে কথা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, যেহেতু লুট হওয়া অস্ত্র আদৌ আমাদের কর্মীর কাছে ছিল নাকি যারা হত্যা করছে তারা পরিকল্পিতভাবে দিছে। এটা তারা তদন্ত করছে। অস্ত্র কাদের কাছে ছিল এটা নিয়ে তো এখনো তদন্ত চলছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, মানিক নামে একজন ওই দুজনকে ফোন করে বিচারের কথা বলে ডেকে নিয়েছিল। নেজাম বা ছালেকের মোবাইল নম্বর দিয়ে কে ফোন করেছিল তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছি প্রশাসনকে। তিনি বলেন, হয়তো বা উনি (পুলিশ সুপার) ভুল বলেছেন। অস্ত্র প্রদর্শন করেছে সেটি উনি দেখেছেন? উনি তো ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এই তথ্য পুলিশকে যারা দিয়েছে তারাই নেজাম-ছালেককে হত্যা করেছে। হত্যার সময় হেলমেট পরা লোক ছিল। প্রশাসনকে তাদের প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের কর্মীরা সেখানে বিচারের জন্য গেছে, নাকি চাঁদাবাজির জন্য গেছে আর অস্ত্রটা কার? আগে খুঁজতে হবে হেলমেট পরা ওরা কারা। ওদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তো সব বেরিয়ে আসবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে ঘোষণা দিয়ে দুই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই দু‘জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার মোহাম্মদ সালেক (৩৫)। ঘটনায় স্থানীয় এক দোকানিসহ চার ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

No comments