চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি: যুদ্ধের হুমকি উত্তেজনা তুঙ্গে
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। তার অভিযোগ কানাডা ও মেক্সিকোর সীমান্ত ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ফেন্টানিলের মতো ভয়াবহ মাদক পাচার করছে চীন। যদিও এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে বেইজিং। জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম গত বুধবার কংগ্রেসের অধিবেশনে ভাষণ দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আমাদের ওপর যে পরিমাণ শুল্ক বসাবে আমরাও তাদের ওপর সে পরিমাণ শুল্ক দেবো। তার এই বিস্ফোরক মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি চীন। কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে কড়া জবাব দিয়েছে দেশটি। জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। তা যেই যুদ্ধই হোক। ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট দিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই পোস্টে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধ চায়, তা শুল্ক যুদ্ধ বা বাণিজ্য যুদ্ধ হোক অথবা অন্য যেকোনো যুদ্ধ! তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। বেইজিংয়ের এই হুঁশিয়ারির পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমরাও তৈরি। যারা শান্তি চায়, তাদের যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয়। যেকোনো রকমের সংঘাত এড়াতে সামরিক শক্তির প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। পিট বলেন, এজন্যই আমরা নিজেদের সামরিক শক্তিকে নতুন করে সাজাচ্ছি। বিশ্লেষকরা বলছেন পাল্টাপাল্টি এই হুমকি দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। যার প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়তে পারে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে শুক্রবার পার্লামেন্টে বক্তৃতার সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কড়া সমালোচনা করেছেন। ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ দিতে থাকলে এর দৃঢ় প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বলছে, শুক্রবার পার্লামেন্টে বাৎসরিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভাষণ দেয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিকে লক্ষ্য করে ওই কড়া হুঁশিয়ারি দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওয়াং ই। ওয়াশিংটনকে সবরকম দ্বন্দ্ব সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভাবা উচিত- তারা এত বছর ধরে যে সকল বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছে, তা থেকে তারা কী পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। ক্ষমতায় আসার পর সেটাকে দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প। এতে তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছে বেইজিং। তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতিতে অটল থাকলে তাদের কৃষিজাত পণ্যের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে বেইজিং।
ট্রাম্প চীনের পাশাপাশি কানাডা, মেক্সিকো, ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। উক্ত দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। উভয় দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে চীনা উৎপাদিত প্রযুক্তি- যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক অপ্রচলিত কার্যক্রমগুলোর বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করা। তবে চীনকে ঠেকাতে ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কাঠামো পরিবর্তিত হতে পারে, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ভূমিকার ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষত, এ ধরনের সংঘর্ষ পরিণামে নতুন অর্থনৈতিক ব্লক তৈরির দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিধারা বদলে দিতে পারে।

No comments