১২৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াত দানব কাঁকড়াবিছে

প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের জীবাশ্মগুলোর  মধ্যে কাঁকড়াবিছের সন্ধান পাওয়া  যায়নি।  এবার চীন  থেকে পাওয়া গিয়েছে নতুন একটি জীবাশ্ম। সেই জীবাশ্মকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াত দানব কাঁকড়াবিছে। সেই একই সময় ডাইনোসররাও যে নীল গ্রহে  রাজত্ব করত সেবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।চীনের  মাটি থেকে এই দানবীয় কাঁকড়াবিছের ফসিল পাওয়া গিয়েছে। চীনের সায়েন্স বুলেটিন জার্নাল পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। মনে করা হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে ঘুরে বেড়াত এই দানবীয় কাঁকড়াবিছে। সেখান থেকে তারা যেকোনও প্রাণীকে অতি সহজেই কব্জা করে ফেলত। দূর থেকে এরা নিজেদের বিষ ছড়িয়ে দিত সেই প্রাণীদের দেহে। ফলে সেখান থেকে শিকার করা এদের পক্ষে অতি সহজ ছিল। এই কাঁকড়াবিছেকে ভয় পেত ডাইনোসররাও। তারাও মনে করত যদি এর বিষ তাদের দেহে প্রবেশ করে তাহলে তারাও জীবন সঙ্কটে পড়ে যাবে। কালের গতিতে কাঁকড়াবিছেদের আকার ছোটো হয়েছে। তবে তাদের বিষ এতটুকু কমেনি। ডাইনো যুগে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিন কাটত এই দানব কাঁকড়াবিছেদের।

মেসোজোয়িক যুগের (২৫২মিলিয়ন থেকে ৬৬মিলিয়ন বছর আগে) বেশিরভাগ কাঁকড়াবিছে অ্যাম্বারে সংরক্ষিত । চীনের নানজিং ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড প্যালিওন্টোলজির গবেষক ডাইয়িং হুয়াং বলেছেন, কাঁকড়াবিছের জীবাশ্ম পাওয়া  বিরল কারণ এই আরাকনিডগুলো  পাথর এবং  গাছের  শাখার নীচে বাস করতো। যেখানে তাদের পলল এবং জীবাশ্মের মধ্যে আটকা পড়ার সম্ভাবনা কম। বিজ্ঞানীরা উত্তর-পূর্ব চীনের প্রারম্ভিক ক্রিটেসিয়াস জীবাশ্মের কেন্দ্রস্থল ইক্সিয়ানে  জীবাশ্মটি খুঁজে পেয়েছেন। গবেষক দলটি কাঁকড়াবিছের নতুন প্রজাতির নাম দিয়েছে জেহোলিয়া লংচেঙ্গি। "জেহোলিয়া" বলতে ১৩৩ মিলিয়ন থেকে ১২০ মিলিয়ন বছর আগে প্রারম্ভিক ক্রিটেসিয়াসের উত্তর-পূর্ব চীনের ইকোসিস্টেম জেহোল বায়োটাকে বোঝায় এবং "লংচেঙ্গি" বলতে চীনের চাওয়াংয়ের লংচেং জেলাকে বোঝায়, যেখানে জীবাশ্মটি মিলেছে।

জে. লংচেঙ্গি নামের এই কাঁকড়াবিছেগুলো  প্রায় ৪ ইঞ্চি (১০সেন্টিমিটার) লম্বা ছিল । অন্যান্য মেসোজোয়িক বিছেগুলো তাদের তুলনায় অনেক ছোট ছিল। চীনের  মাটি থেকে যে ফসিল মিলেছে তাতে মনে করা হচ্ছে এই দানবীয় কাঁকড়াবিছেগুলো  যেখানে খুশি যেতে পারত। তবে পৃথিবীতে যখন ডাইনো যুগের অবসান হতে শুরু করে তখন পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি এরা। ফলে মাটির নিচে বহু বছর ধরে তারা বাস করতে শুরু করে। এই দীর্ঘসময় ধরে মাটির নিচে বাস করার ফলে এদের পরবর্তী প্রজন্ম আকারে ধীরে ধীরে ছোটো হতে শুরু করে। তারই বর্তমান রূপ এখন  আমাদের নজরে আসে।  

গবেষকরা  লিখেছেন ডাইনোসর, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পোকামাকড়সহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর জীবাশ্ম জেহোল বায়োটাতে পাওয়া গেছে, যা একটি জটিল খাদ্য জালের পরামর্শ দেয়। যেমন, বৃহত্তর স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ডাইনোসররা জে. লংচেঙ্গি বা কাঁকড়াবিছের  শিকার হতে পারে।  এছাড়া তাদের খাদ্যে পোকামাকড়, মাকড়সা, ব্যাঙ এমনকি ছোট টিকটিকি বা স্তন্যপায়ী প্রাণীও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।  যদিও বিছেগুলোর  মুখের অংশ  জীবাশ্মে সংরক্ষিত নয়, তাই তারা কী খেয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। হুয়াং চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে বলেছেন- এই কাঁকড়াবিছে গুলোকে  আজকের পরিবেশে রাখা হলে, তারা সহজেই শিকারী হয়ে উঠতে পারতো।  এমনকি ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণীদেরও অনায়াসে  শিকার করতে পারতো। ' বিশালাকার কাঁকড়াবিছের জীবাশ্মটি চীনের চাওয়াংয়ের ফসিল ভ্যালি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

সূত্র : লাইভ সায়েন্স

mzamin


No comments

Powered by Blogger.