দুতের্তে’র গ্রেপ্তারের বৈশ্বিক গুরুত্ব
দুতের্তের শাস্তির দৃষ্টান্ত থেকে অনেকে শিক্ষা নিয়ে এমন কাজ করার আগে দু’বার ভাববেন। অন্যদিকে ফিলিপাইনের রাজনৈতিক হাওয়া বদলের কারণেই এই মামলায় অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফিলিপাইনের রাজনৈতিক আবহ দুতের্তে’র অনুকূলে থাকলে হয়তবা এই বিচার হতো না। ২০২২ সালে ক্ষমতার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তার স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে মার্কোস জুনিয়র। দুতের্তের কন্যা সারা দুতের্তে ও মার্কোস জুনিয়র পৃথকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রাজনীতির দুই উত্তরাধিকার মার্কোস ও সারা জুটি যে জোট গঠন করেছিলেন তা দুতের্তেকে কিছুদিন স্বস্তিতে রাখে। কারণ দুতের্তের বিষয়ে আইসিসিকে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান প্রেসিডেন্ট মার্কোস। কিন্তু এরপর দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। মার্কোসের পররাষ্ট্র নীতি অনেকের কাছে এক প্রকার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার পররাষ্ট্রনীতি দুতের্তের নীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুতের্তে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রেখে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন। এর বিপরীত ঘটে মার্কোসের ক্ষেত্রে। দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের জাহাজকে হুমকি দেয় চীন। এর প্রতিবাদ করেন মার্কোস। ২০২৪ সালের জুনে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন সারা দুতের্তে। এদিকে প্রসঙ্গ যখন আসে আইসিসির উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলার তখন এটি বলা যায় যে, আইসিসি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চলে। এটি যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করে। তবে রাজনীতির কারণে তা জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বাধাগ্রস্ত হয়।
যেসব দেশ আইসিসির সদস্য নয় সেসব দেশের ওপর এর বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। দুতের্তে ২০২২ সালে আইসিসি থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে তিনি বলতে পারেন, মাদকের বিরুদ্ধে যে অপরাধ হয়েছে তা এর পরের ঘটনা। এর বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির নেই। কিন্তু এরই মধ্যে আইসিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিপাইনকে তিনি আইসিসি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আগেও একই অপরাধ করেছেন। সেসব অপরাধের বিচার করবে আইসিসি। আইসিসি শিনজিয়ান প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের নির্যাতনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার মাঝামাঝি আদালতের ওপর ভিত্তি করে আইসিসির চুক্তি থেকে সরে এসেছেন দুতের্তে। এ কারণে তার করা কোনো অপরাধের বিচার করতে পারবে না আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। উল্লেখ্য, আইসিসির বল প্রয়োগের কোনো ক্ষমতা নেই। অপরাধী যে দেশে আছে সেই দেশের সহযোগিতা ছাড়া ওই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারে না আন্তর্জাতিক ওই অপরাধ আদালত।
এখন পর্যন্ত আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে আইসিসির করা মামলাগুলো বেশি সফল হয়েছে। এটি যদিও বিশ্বের অন্য প্রান্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে তা করা এতটাও সহজ নয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ওই আদালতে হারপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুমকি দেন তার এক সমর্থক। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে আইসিসির প্রতি বেশি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি কখনো আইসিসিতে স্বাক্ষর করেনি বা এর সদস্য হয়নি। আইসিসির সঙ্গে বিদ্বেষের বিষয়ে ট্রাম্প অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের ছাড়িয়ে গেছেন। ৬ই ফেব্রুয়ারি আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন- করিম খান অবৈধ ও ভিত্তিহীন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র ইসরাইলকে টার্গেট করছেন। উল্লেখ্য, ইসরাইলি হত্যার দায়ে হামাসের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানান করিম খান। এছাড়া গাজায় অপরাধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানান।

No comments