ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড!

এক কিলোগ্রাম মাদক দ্রব্য (৩, ৪ মিথালেনিডাই অক্সিমেথামফেটামিন) এমডিএমএ সরবরাহ দেয়ার অভিযোগে মৃত্যুর ঝুঁকিতে এক বৃটিশ। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। যদি আদালতে অভিযুক্ত প্রমাণিত হন তাহলে তাকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ আসতে পারে। ওই বৃটিশ ইলেকট্রিশিয়ানের নাম টমাস পার্কার (৩২)। তার বাড়ি কামব্রিয়াতে। ওয়াকিংটনের কাছে সিয়াটন গ্রামে তার বসত। এ বছর জানুয়ারিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাদক সরবরাহ দেয়ার অভিযোগে। এরপর বিশ্ব মিডিয়ার সামনে তাকে হাজির করা হয় কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরিহিত অবস্থায়। পুলিশ বলেছে, তিনি ‘এ শ্রেণির’ মাদক ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই মাদক ডাকে আসা একটি প্যাকেজে পাওয়া গেছে। যদি অভিযুক্ত প্রমাণ করা যায় তাহলে ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। পার্কারের একজন সদস্য বলেছেন, টমাস পার্কার এখন যে করুণ অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে তাদের বলার কিছু নেই।  কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি নীরব কামব্রিয়ান গ্রামটিতে। স্থানীয় একজন ব্যক্তি বললেন, সিয়াটন একটি ছোট্ট ভালোবাসাময় গ্রাম। সেখানকার অনুগত একজন মানুষ পার্কার। টমাস পার্কারের বিষয়ে আসলে কী হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ওই ব্যক্তি পরিবারটির জন্য বেদনা বোধ করেন। বলেন, তাদের এমন প্রাপ্য হওয়ার কথা ছিল না। কি এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার!

উল্লেখ্য, স্টেনিবার্ন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন টমাস পার্কার। পরে তিনি লিভিহলে লেকস কলেজে পড়াশোনা করেন। তারপর একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসী হন। উল্লেখ্য, পার্টিতে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মাদক হিসেবে এমডিএমএ প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জানুয়ারিতে একটি বাসার বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় টমাস পার্কারকে। কিন্তু বিষয়টি এতদিন কেউ জানতে পারেনি। এ সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে মাত্র পার্কারকে হাজির করা হয়। এ সময় তার মুখ ছিল সেভ করা। হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ পরানো। এ সপ্তাহে বৃটেনের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, বালিতে একজন বৃটিশকে আটক করা হয়েছে। তাকে আমরা সাপোর্ট দিচ্ছি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছি আমরা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, টমাস পার্কারকে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার বিষয়টি নজরে আসে কর্মকর্তাদের। ২১শে জানুয়ারি একজন মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালকের কাছ থেকে তিনি একটি প্যাকেজ সংগ্রহ করেন। এরপর তার আচরণ সন্দেহজনক দেখা যায়। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে পার্কারের দিকে অগ্রসর হয় পুলিশ। কিন্তু ওই প্যাকেজটি ফেলে ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালাতে থাকেন পার্কার। পরে তাকে নর্থ কুতা’য় ‘৭ সিস ভিলায়’ শনাক্ত করা হয়। পুলিশ দেখতে পায়, ফেলে যাওয়া প্যাকেজটি পার্কারের। আটকের পর তিনি স্বীকার করেন এই প্যাকেজ তারই ছিল। পুলিশ বলেছে, তারা ওই প্যাকেজটি খুলে তার ভেতর হালকা বাদামি পাউডার দেখতে পায়। পরে সেটা এমডিএমএ হিসেবে শনাক্ত হয়। টমাস পার্কারকে জানুয়ারিতে রিমান্ডে নেয়া হয়।

বর্তমানে অভিযোগ, তিনি মাদক আমদানি করেন। পাচার করেন। মাদক রাখেন। এসব অভিযোগে অভিযুক্ত হলে পার্কারের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে ইন্দোনেশিয়ার আইনে। তার বিরুদ্ধে মাদকের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। ওদিকে টমাস পার্কারের ফোন ও অন্য জিনিসপত্র একটি প্লাস্টিকের সিল করা ব্যাগে রাখা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে এসব উপস্থাপন করার কথা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রুডি বলেন, অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তার অভিযানের পর টমাস পার্কার ও তার সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ আরও তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বালি প্রভেন্স ন্যাশনাল নারকোটিকস এজেন্সির অফিসে। এই এজেন্সির প্রধান বলেছেন, আন্তর্জাতিক মাদকের ডিলারদের অন্যতম সদস্য পার্কার। এই সংগঠনটি হাঙ্গেরিভিত্তিক। টমাস পার্কার বলেছেন, তার বস তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, থাইল্যান্ড থেকে একটি প্যাকেজ যাবে বালিতে। তা যেন তিনি সংগ্রহ করেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, যে পার্সেল গ্রহণ করেছেন পার্কার তাতে আছে এমডিএমএ। এ জিনিসটি ইন্দোনেশিয়ায় বেআইনি এবং শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। পার্কারকে রিমান্ডে নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে সেখানেই থাকতে হবে তাকে। এর মধ্যে ওই প্যাকেজটি কে পাঠিয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করে বালি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য তারা পার্কারকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যদি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সহযোগিতা করেন, তাহলে তার শাস্তি লঘু হতে পারে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.