বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ
তিনিই মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান। শক্তিশালী ও যথোপযুক্ত উপায়ে মার্কিন সব পণ্যের ওপর এভাবে শুল্ক আরোপের আহ্বান তার। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণা কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যদি বাইরে থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে তাহলে শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক দিতে হবে। চীন এ পদক্ষেপের জবাবে বলেছে, তাদের নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে চীন। অন্যদিকে ‘ডনাল্ড ট্রাম্পের আইনহীন বিশ্ব বাণিজ্যের’ কড়া সমালোচনা করেছেন বৃটেনে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শুল্ক আরোপ করার মধ্যদিয়ে বাণিজ্যিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর আগে চীনা পণ্যের ওপর সরাসরি শুল্ক দ্বিগুণ করে শতকরা ২০ ভাগ করেন।
বেইজিংও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিজপণ্য টার্গেট করে। মুরগি, গরুর মাংস, শূকরের মাংস, গম এবং সয়াবিনের ওপর শতকরা ১০ ভাগ থেকে ১৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করে চীন। বৃটেনে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার রাফ গুডালে বিবিসি’র ‘টুডে প্রোগ্রামে’ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বাণিজ্যকে আইনহীন করে তুলছেন। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য, বিশেষ করে স্পর্শকাতর পণ্য কানাডায় রপ্তানি করতে হলে শুল্ক দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিজের জনগণের ওপর এর প্রভাব সীমিত রাখার চেষ্টা করছে কানাডা সরকার। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে আঘাত করবে। উল্লেখ্য, কানাডা থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ৬০ লাখ টন স্টিল। কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করছেন এই বলে যে, শুল্ক আরোপ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পকে সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করবে। কিন্তু তাতে সার্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসবে। তবে যে যা-ই বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক তার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতিকে মূল্যবান হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, যদি তাতে অর্থনীতি মন্দার দিকেও যায়, তবুও ভালো।
তিনি বলেন, মার্কিনিদের কাছে এ যাবৎ যা আসছে তার মধ্যে এসব নীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বৃটেনের লিবারেল ডেমোক্রেট ডেপুটি নেতা ডেইজি কুপার বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া উচিত বৃটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেমন্ডের। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অন্যপক্ষ বার বার আঘাত করছে। এর প্রেক্ষিতে বৃটিশ বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানে গিয়ে কিছু করা উচিত। তিনি বলেন, এনাফ ইজ এনাফ। যথেষ্ট হয়েছে। আমাদেরকে শক্তিশালী হতে হবে। বৃটিশ স্টিলের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে বৃটিশ অর্থনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহ দেয় কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা অ্যালুমিনিয়ামের শতকরা ৬০ ভাগই আসে কানাডা থেকে। ওদিকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করে পণ্য প্রস্তুতকারক মার্কিন কোম্পানিগুলো সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, শুল্ক আরোপের ফলে তাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ইউকে স্টিলের পরিচালক গ্যারেথ স্ট্যাসি বলেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কনীতি চরম হতাশার। তার বোঝা উচিত যে, আমরা তার বন্ধু, শত্রু নই। অন্যদিক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জবাবে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবেন। ইউরোপিয়ান কমিশন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের গভীর নিন্দা জানায়। ব্যবসার জন্য এই শুল্ক খুব খারাপ। একই সঙ্গে ভোক্তাদের জন্যও খুব খারাপ। শুল্ক আরোপের ফলে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হবে। অর্থনীতিতে দেখা দেবে অনিশ্চয়তা।

No comments