‘ওর মৃত্যুতে দেশবাসী ছাড়া কাঁদার মতো কেউ নেই’ by মাসুদ রানা
নিহত আবুল কাশেম গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার প্রয়াত হাজি জামালের ছেলে। শুক্রবার রাতে মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর হামলা এবং তাঁদের আটকে মারধরের যে ঘটনা ঘটেছিল, তাতে আবুল কাশেমসহ ১৭ জন আহত হন। পরে কাশেমসহ গুরুতর আহত ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর শাখার সমন্বয়ক মো. আবদুল্লাহ বলেন, আবুল কাশেমকে হত্যার প্রতিবাদে আজ বুধবার রাতে গাজীপুরের শিববাড়ী মোড় থেকে ডিসি অফিস পর্যন্ত মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরীর বোর্ডবাজার–সংলগ্ন আল-হেরা সিএনজি পাম্প মাঠে আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ আরও ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় ১৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগের মামলার সঙ্গে এখন হত্যা মামলার ধারাও যুক্ত করা হবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ডবাজার আল–হেরা সিএনজি পাম্প থেকে ৫-৬ কিলোমিটার পশ্চিমে আনাস মার্কেট। পাশেই আবুল কাশেমের বাড়ি। আজ বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক নারী-পুরুষের ভিড়। সেখানে একটি দোকানের সামনে বসে নিহত আবুল কাশেমের ফুফু নাসিমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। অনেকে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনও ছুটে এসেছেন। পুরো এলাকায় শোক নেমে এসেছে। ওই স্থান থেকে ৫ ফুট ভেতরে একটি ছোট তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে একাই বসবাস করতেন আবুল কাশেম। ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর থেকে ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। তবে ঘরের জানালাটা এখনো খোলা। সেই জানালার ফাঁকা দিয়ে দেখা যায় ঘরে খাট-পালং কিছুই নেই। ফ্লোরে একটি বিছানা পাতা আছে। ঘরের দেয়ালে টানানো একটি দড়িতে কাশেমের জামাকাপড় ঝুলে আছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, কাশেম নিজেই রান্না করে খেতেন। যার কারণে ঘরের মেঝের এক পাশে হাঁড়ি–পাতিল আর থালাবাসনও দেখা যায়। সেখানে কথা হয় কাশেমের দূরসম্পর্কের ভগ্নিপতি সজীব আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কাশেমের বয়স যখন ৪-৫, তখন তাঁর মা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর তাঁর বাবা মারা যান। তাঁর বড় ভাই গত বছরের জুলাই মাসে অজ্ঞাত কারণে আত্মহত্যা করেন। মূলত তাঁকে দেখার মতো কেউ ছিল না। বোনও তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকে। কাশেম স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করেছিলেন। তবে বেশি দূর পড়া হয়নি।
নিহতের চাচা আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাতিজা স্থানীয় ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যোগ দেয়। তাকে হামলা চালিয়ে মারধর করে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই, তাদের ফাঁসি চাই।’
নিহত কাশেমের চাচি সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে বাসার সামনে বসে আছি। ও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়। বলে চাচি আমি জয়দেবপুর যাচ্ছি, আসতে রাত হবে। এই বলে সে চলে যায়। সন্ধ্যার পরে শুনলাম ছাত্রদের সাথে কোথায় যেন গেছে। এরপরে শুনি কারা যেন ওরে মারধর করেছে, আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে। ওর মৃত্যুতে কাঁদার মতো কেউ নেই দেশবাসী ছাড়া। ওর মৃত্যুতে যারা দায়ী, তাদের বিচার চাই।’
![]() |
| আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত |

No comments