শহীদ রেফায়েত উল্লাহর শিশুকন্যা লামিয়ার মানবেতর জীবন by মুহাম্মদ শাহ্ আলম
গত বছর এদিন বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিরোধী জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের প্রথমদিনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে বিএনপি নেতাকর্মী ও তার বন্ধুদের সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে রেফায়েত উল্লাহ। আন্দোলনে অংশগ্রহণের আগে রেফায়েত উল্লাহ তার দাদি সখিনা বেগমের কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিল ফিরে আসতেও পারি না-ও আসতে পারি। আগের দিন রাতে তার নিজস্ব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল আগামীকাল আন্দোলনে যাচ্ছি বাঁচতেও পারি মরতেও পারি। সকলের নিকট দোয়া চাই। ৩১শে অক্টোবর সকালে অবরোধ কর্মসূচির শুরুতেই উপজেলার ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ কর্মসূচিতে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল ৮ কিংবা সাড়ে ৮টার দিকে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ আন্দোলনরত বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছুড়ে। এতে উপজেলার বড়ছয়সূতী গ্রামের কাউসার মিয়ার বড় ছেলে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ তনয় (২৪) এবং মাধবদী গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে কৃষকদলের নেতা বিল্লাল হোসেন রনি (৪০) ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় পুলিশের গুলিতে আরও বেশক’জন গুরুতর আহত হন। এই হত্যাযজ্ঞের পর পুলিশ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তড়িঘড়ি করে নিহতদের জানাজা শেষে দাফন কার্য সম্পন্ন করতে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বাধ্য করে। ফলে অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে মধ্যরাতে তড়িঘড়ি করে নামাজে জানাজা শেষে শহীদদের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এমনকি বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে না পারে সেইজন্য জানাজার স্থানে পুলিশের একাধিক গাড়ি অবস্থান নেয়। তাছাড়া পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে। মামলায় পুলিশের গুলিতে নিহত রেফায়েত উল্লাহ তনয় (২৪) ও বিল্লাল হোসেন রনি (৪০), বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলমসহ ৪৩জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০০/১৬০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মামলায় পুলিশ শরীফুল আলম সহ প্রায় ৫০জনকে গ্রেপ্তার করে। নিহত রেফায়েত উল্লাহ তনয় (২৪) ও বিল্লাল হোসেন রনি (৪০) সাধারণ পরিবারের সন্তান। রেফায়েত উল্লাহ বিয়ের এক বছরের মাথায় একমাত্র সন্তান লামিয়াকে রেখে এবং বিল্লাল হোসেন ৩ সন্তান, ছেলে টুটুল (১০), মেয়ে জান্নাত (৬) সবার ছোট ছেলে জাকির (২) ও স্ত্রী আন্না বেগম (২৭)কে রেখে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে দেশের গণতন্ত্র মানবাধিকার আইনের শাসন বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। এই অবস্থায় অসহায় দুই পরিবারের শিশুসন্তানের ভরণ- পোষণের জন্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম প্রতি মাসে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার দিনটিতে আজ দুপুরে শহীদ রেফায়েত উল্লাহর গ্রামের বাড়িতে এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে হয়েছে এবং ওইদিনই বিকালে ছয়সূতী ইউনিয়ন বিএনপি’র কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন।
No comments