দু’দিন অফিস করেও পুরো মাসের বেতন পেতেন লিটন কন্যা by মারুফ হোসেন মিশন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্ণা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বড় কন্যা। তিনি আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক।
রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ অফিস করেছিলেন অর্ণা। এদিকে গত ৯ মাসে আর অফিস করতে দেখা যায়নি তাকে। অফিস না করেও গত ৯ মাসে সরকারি বেতন-ভাতা পেয়েছেন প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অষ্টম গ্রেডের বেতন পেতেন এ নেত্রী।
আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে ১লা জুলাই রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের সময়ে বাবার রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে রাবির মেডিকেল সেন্টারে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এ নেত্রী। অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়ায় ৬ মাস পরপর নবায়ন করে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে রাবির মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত তিনি। তার সর্বশেষ ছয় মাসের জন্য নবায়নকৃত চাকরির মেয়াদ ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪ সাল পর্যন্ত। যদি নতুন করে চাকরি নবায়ন করা না হয়, তাহলে অটোমেটিক চাকরি হারাবেন তিনি। এদিকে চাকরিতে প্রবেশের সাড়ে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও তাকে রাবির চিকিৎসক হিসেবে চিনেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মাসে দু-একদিন অফিস করেই পুরো মাসের বেতন হাতিয়ে নিতেন।
মেডিকেলের অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নিয়মিত কখনোই অফিস করতে দেখা যায়নি অর্ণা জামানকে। মাসে দু-একদিন অফিস করতেন তিনি। সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তার ডিউটি থাকলেও তিনি অফিস করতেন ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত। অফিস চলাকালে তার সাথে থাকতেন একাধিক অস্ত্রধারী বডিগার্ড। ফলে মেডিকেলের অন্যান্য চিকিৎসকরা এ নিয়ে খুব আতঙ্কে থাকতেন। এছাড়াও তার অফিস টাইমের পুরো সময়জুড়ে চেম্বারের সামনে ভিড় করে রাবি থেকে শুরু করে রুয়েট ও রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতেন। এতে রোগ নির্ণয়ের জন্য আসা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা না নিয়েই ফিরে যেতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল সেন্টারের এক ডাক্তার বলেন, ডা. আনিকা তেমন একটা ডিউটি করতেন না। মাসে দুএকদিন হঠাৎ তাকে দেখা যেত। যেদিন অফিসে আসতেন সেদিন তার সাথে অস্ত্রধারী দুজন বডিগার্ড থাকতেন। ফলে আমিসহ আমার সহকর্মীরা খুব আতঙ্কে থাকতাম। ভয়ে তার চেম্বারে যেতাম না। এদিকে, যতটুকু সময় অফিস করতেন তিনি সেই সময়টাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবসময় তার চ্যাম্বারের সামনে উপস্থিত থাকতেন এবং মাঝেমধ্যে স্লোগান দিতেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অর্ণার ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল-মেসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেও রিচ করতে পারিনি। আমরা বিষয়টি অভিযোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অবগত করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা ভালো মনে করেন তাই করবেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ৫ই আগস্টের পর যেসকল শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজ দপ্তরে উপস্থিত নেই আমরা তাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছি। তবে অর্ণা যেহেতু ৯ মাস ধরে অফিস করছেন না তার বিষয়টি অবশ্যই ভিন্নভাবে দেখতে হবে। তার বিষয়টি বিস্তারিত জেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
No comments