বাংলাদেশ: সামনে দীর্ঘ পথ -ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট
শেখ হাসিনা সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এক মাসের গণবিক্ষোভের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। হাজারো বিক্ষোভকারী রাজধানী ঢাকায় তাঁর বাসভবনে ঢুকে পড়ায় প্রতিবেশী ভারতে তিনি আশ্রয় চান। কয়েক সপ্তাহ ধরে এটা অনিবার্য মনে হয়েছিল যে, হাসিনাকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হবে, কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অনমনীয় এবং নৃশংস কায়দায় লড়ে যান। সব মিলিয়ে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী অসন্তোষ দমন করার চেষ্টা করলে কমপক্ষে ৪৪০ জন নিহত হন, যাদের বড় অংশই বিক্ষোভকারী। সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পর তাঁর সরে যাওয়ায় ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহরে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। সেনাপ্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেবে এবং নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। রক্তাক্ত একটি মাসের পর তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হচ্ছে নতুন যেকোনো হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা, সেটা বিক্ষোভকারীদের হাতে কিংবা হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত গোষ্ঠীগুলোর হাতেই হোক। কিন্তু বাংলাদেশকে গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কঠিন কাজটিও শুরু করতে হবে, যা গত এক দশকে মারত্মকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে; কারণ, দেশটি যেকোনো সময়ের চেয়ে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার বেশি কাছাকাছি চলে যায়।
নিজের পরিণতি ডেকে আনেন হাসিনা
সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে জুলাইয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে থাকা ব্যাপক সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে জুলাইয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে থাকা ব্যাপক অসন্তোষের মধ্যেই এই আন্দোলন শুরু হয়। এ সরকার তার পনের বছরের ক্ষমতায় ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিল এবং তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা বাজে রূপ নেয়। জানুয়ারিতে হাসিনা এবং ক্ষমতাসীন দল একটি অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে ব্যাপক জয়ের দাবি করে, যার মাধ্যমে তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু তাঁর সমর্থনের ঘাটতি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়; প্রধান বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভোট বর্জন করে এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।
এরপরও বিক্ষোভের প্রতি হাসিনার প্রতিক্রিয়াই ছিল তাঁর পতনের কারণ। তিনি বিক্ষোভকারী নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসার পরিবর্তে দমন-পীড়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের পরিণতি ডেকে আনেন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী ২০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে বলে জানা গেছে; এ ধরনের সহিংসতা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। এমনকি ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট চাকরিতে কোটার পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমানোর পরেও হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এবং সরকারের পদত্যাগসহ নতুন দাবি তুলে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়।
হাসিনা কঠোর কারফিউ ঘোষণা করেন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেন। কিন্তু বর্বরতার চিত্র ততক্ষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সরকারের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। তিনি অস্থিরতার জন্য বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। একই সময় পুলিশ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের কথিত ‘তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য’ গ্রেপ্তার করে। নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিবৃতি দিতে আটককৃতদের বাধ্য করা হয়। কিন্তু তেমন কোনো বাংলাদেশিই এই বয়ানে বোকা হননি যে, সহিংসতার জন্য ‘নৈরাজ্যবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসীরা’ দায়ী। ৪ আগস্ট চূড়ান্ত ও ভয়ানক পর্বের রক্তপাতে পুলিশ এবং রক্ষক হিসেবে নামানো ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের গুলিতে প্রায় ১০০ মানুষ মারা যান, যাদের বেশিরভাগই বিক্ষোভকারী। পরদিন আরেক দফা কারফিউ এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়াকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ ছাত্র নেতাদের ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা কর্মসূচির ডাকে সাড়া দেয়।
আরও কয়েক শ প্রাণহানির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান হাসিনার দূরসম্পর্কের আত্মীয় ওয়াকার-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তাঁর সৈন্যরা সরকারকে রক্ষার পথে হাঁটবে না। শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে পদত্যাগ করতে রাজি করানো হয়, দেশের আলঙ্কারিক পদাধিকারী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় এবং তড়িঘড়ি করে তাঁর সরকারের কট্টর মিত্র নয়াদিল্লি পাড়ি দেন তিনি। যখন তিনি চলে যাচ্ছিলেন, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে হামলে পড়েন, হাসিনার বিছানায় শুয়ে সেলফি তুলছিলেন এবং চিত্রকর্ম ও সিলিং ফ্যান থেকে শুরু করে মাছ ও মুরগি পর্যন্ত সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যান। এদিকে, সেনাপ্রধান তখন আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের (যদিও ছাত্র নেতারা ছিলেন না) সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এর পরপরই সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান যখন এসব পদক্ষেপের কথা বলছেন, রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা তখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের হাতে। তিনি ইতিমধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং সেনাপ্রধান ও ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের শপথ পাঠ করান।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
নতুন জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার। সংবিধানে বলা হয়েছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হতে হবে। এখন পর্যন্ত অন্তত সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বা অন্য কোনো সেনা কর্মকর্তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত না করে পদত্যাগে ঠেলে দিয়ে সেনাপ্রধান সাংবিধানিক সীমার মধ্যে সংকট সমাধানের চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থার ঘোষণাও জারি করেননি, যা মৌলিক অধিকারকে স্থগিত করত, সম্ভবত উল্টো যাত্রা শুরু করত। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে ২০০৭ সালের পুনরাবৃত্তি এড়াতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে, ওই সময় হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছিল। তারপর সেনাবাহিনী একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করে যা সংবিধান অনুমোদিত ১২০ দিনের বাইরে গিয়ে প্রায় দুই বছর বাংলাদেশ শাসন করে। ওই সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেশ-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
অন্তর্বর্তী প্রশাসন সত্যিকারার্থে প্রতিনিধিত্বশীল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া বক্তব্য থেকে ধরে নেওয়া যায়, এতে বিরোধী দলগুলো এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের রাখা হবে। আওয়ামী লীগ জায়গা পাবে কি না স্পষ্ট নয়। দেওয়া হলে এর মধ্যে একটি ইতিবাচক দিক থাকবে। সেটা হলো বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার দায় নেই মনে করা হয় এমন একজন সম্মানিত জ্যেষ্ঠ দলীয় নেতাকে রাখা হলে, অন্তর্বর্তী সরকারকে অন্তত কিছু আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন পেতে সাহায্য করতে পারে, যারা এখনো জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকতে পারে। সেনা-সমর্থিত জরুরি সরকারের অধীনে ২০০৭-২০০৮ সালে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রচেষ্টা দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনের অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।
তবে মূল বিষয় হবে (এ সরকারে) প্রতিবাদী এ আন্দোলনের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। যদি শান্তি ফিরিয়ে আনতে হয়, যারা হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন- যেমন, ছাত্র যাঁরা প্রতিবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন- রক্ষণশীল জেনারেল এবং সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের কারণে কোণঠাসা করার চেয়ে সরকারের পর্ষদে তাঁদের অর্থবহ কণ্ঠস্বর থাকা উচিত। তাঁদের ওপরের সারিতে নেতার অভাব নেই; রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ, গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অনেক ছাত্র গত মাসে আন্দোলন থেকে উঠে এসেছে এবং ঘরে ঘরে পরিচিতি পেয়েছে। তবে তাদেরও কিছু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে তা স্বীকার করে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃত ও নাগরিক সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনীত করেছেন। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে আলোচনা ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দেওয়ার সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয় বলে জানা গেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ছাত্রদের সমর্থন না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত বিশ্বাসযোগ্যতা থাকত এবং এমনকি নতুন করে বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে পারত। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ৮ আগস্ট রাতে ড. ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত প্রায় ১৫ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারকে শপথ পাঠ করান।
প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও ন্যায়ের পথে যাত্রা
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগেই সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতাদের নতুন করে প্রাণঘাতী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া রোধে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে। হাসিনার পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে ঢাকার রাজপথে আনন্দ ও স্বস্তির পাশাপাশি ক্ষমতায় নিজের দখল বজায় রাখার জন্য তিনি যে দমনমূলক যন্ত্র গড়ে তুলেছিলেন, সেটার প্রতিও রয়েছে বিস্তর ঘৃণা। বিক্ষোভকারীরা থানা, আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং তাঁর দীর্ঘদিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ হাসিনার প্রধান সহযোগীদের বাড়িতে হামলা করেছেন। গত মাসের পুলিশি বর্বরতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীক বহুলাংশে দায়ী করেন বিক্ষোভকারীরা। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগেও প্রতিশোধের স্পৃহা স্পষ্ট ছিল; ৪ আগস্ট সহিংসতার শিকারদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের অন্তত আটজন সদস্য ছিলেন। একটি নির্দিষ্ট মারাত্মক ঘটনায়, যশোরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন একটি হোটেলে জনতার অগ্নিসংযোগের পর ২৪ জনের মৃত্যু হয়। হাসিনার পদত্যাগের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের হত্যার পাশাপাশি সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার খবরও পাওয়া গেছে, যদিও পরের ঘটনাটির জন্য কে দায়ী তা স্পষ্ট নয়।
যেহেতু পুলিশ তাদের কঠোর দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আপস করেছে, তাই আওয়ামী লীগের সদস্যদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধসহ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। দলটির ছাত্র শাখা, যারা জুলাইয়ের মাঝামাঝি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করেছিল এবং সহিংসতার জন্য যাদের খ্যাতি রয়েছে, তারা (প্রতিশোধমূলক হামলার) একটি সম্ভাব্য লক্ষ্য। হাসিনার শাসনামলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দমনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, যাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল তাঁর সরকারকে ক্ষমতায় রাখা। নিয়োগ পাওয়া অনেকে আওয়ামী লীগের অনুগত যাঁরা মনে করতেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ সরকারের টিকে থাকার সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজশ দীর্ঘস্থায়ী দুর্নীতির পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি গভীর ক্ষোভের তৈরি করেছে। তাঁরা নির্বিচারে গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে জোরপূর্বক গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। যদিও সেনাবাহিনীকেও নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসিনার কড়া সমর্থক হিসেবে পরিচিত, তবুও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর অনেক সুনাম রয়েছে এবং তারা ব্যাপকভাবে বিশ্বস্ত। জনগণের আস্থা বাড়ানোর জন্য সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীতে রদবদল ঘোষণা করেন, হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ একজন অনুগতকে সরিয়ে দেন।
আসন্ন অন্তর্বর্তী সরকারকে সাম্প্রতিক সপ্তাহের হত্যাযজ্ঞের বিচার নিশ্চিত করতে তাদের অঙ্গীকার জোরালোভাবে উপস্থাপন করা উচিত। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ‘প্রতিটি হত্যার বিচারের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যে মূল বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, সেটা হলো এই বিচারগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে যেন পরিচালিত হয়, যাতে সেগুলোকে যৌক্তিকভাবেই জনসাধারণকে তুষ্ট করার লক্ষ্যে লোক দেখানো বিচার মনে না হয়। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত শুরু করা; জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচিত অনুরোধ অনুযায়ী সহায়তা প্রদানের জন্য তাদের সদিচ্ছার বিষয়টি স্পষ্ট করা। ইতিমধ্যেই, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি- বরখাস্ত জেনারেল, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, যিনি বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁদের দেশ ত্যাগ করতে দেওয়া হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার লোককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বিচার বিভাগীয় জবাবদিহির প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকারের উচিত যারা দমন-পীড়নে আত্মীয়স্বজন হারিয়েছেন এবং একই সঙ্গে যে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। একটি জাতীয় শোক দিবসও দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। একই সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার লোককে মুক্তির দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দায়ের করা হাজার হাজার মামলা (এর মধ্যে অনেকগুলো অজ্ঞাত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে) প্রত্যাহার করা উচিত। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে এবং ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আটকদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি সঠিক পথে হেঁটেছেন।
দ্রুত স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার আরেকটি স্বল্পমেয়াদী ঝুঁকি তথা একটি অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে সাহায্য করবে। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর কয়েক দশকে বাংলাদেশের একটি ‘অর্থনৈতিক মিরাকলের’ অভিজ্ঞতা হয়েছে যা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছিল, মূলত এর নেপথ্যে ছিল একটি বিকাশমান তৈরি পোশাক খাত।
কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বের হয়ে আসার পর থেকে দেশটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাবারের দামের ক্ষেত্রে আর বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মুখে পড়েছে। এগুলো মূলত দুর্নীতি এবং সরকারি অব্যবস্থাপনাসহ দেশীয় বিভিন্ন বিষয়ের ফল। রাজনৈতিক কারণে হাসিনার প্রশাসন বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার করতে অনিচ্ছুক ছিল। গত মাসের অস্থিরতা দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও প্রকট করেছে, প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে এবং পোশাক ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছেন। মুদ্রাবিনিময়ের ভারসাম্যের সংকট এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিশেষ করে পোশাক খাতকে আগের গতিতে ফেরাতে হবে যা দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ। অর্থনীতিতে টানাপোড়েন শুরু হলে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বিদেশি অংশীদারদের উচিত জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত থাকা।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশকে প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা। অংশত বিরোধীদের বর্জনে ফলে দেশটি ১৫ বছর ধরে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখেনি, যেমনটা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও হয়েছে। এটিও প্রতিবাদী আন্দোলন এত বড় হওয়ার একটি কারণ। নির্বাচন কবে হবে তা নির্ধারণ করাটা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও সংবিধানে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের জবাবের একটি অংশ মাত্র। তাই আরও মৌলিক সংস্কার ছাড়া দেশটি নিপীড়ন ও অস্থিতিশীলতার পরিচিত যে ধরন তার মধ্যে পড়তে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে প্রস্তাব করছেন, নির্বাচন ৯০ দিনের সীমা থেকে পিছিয়ে দেওয়া হোক, যাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য আরও সময় দেওয়া যায়। তাঁরা বলছেন, পরে সংবিধানের ভবিষ্যৎ সংশোধনীর মাধ্যমে এ বিলম্বকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি এই পথে হাঁটে, তাহলে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজপথে নতুন করে বিক্ষোভ ও সহিংসতা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন পেছানোর লাভ-ক্ষতি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। অন্তবর্তী সরকার একবার বর্তমান সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত কাঠামো থেকে সরে গেলে, এটি তার নিজের বৈধতা হারানোর ঝুঁকি, সংস্কার আন্দোলনকে দুর্বল এবং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নতুন হুমকি তৈরি করবে।
একই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে কঠোর পরিশ্রম শুরু করতে হবে। হাসিনার অধীনে সংসদ একটি রাবার স্ট্যাম্পে (আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান) পরিণত হয়, বেসামরিক প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে অত্যন্ত রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল এবং গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ খুবই নিয়ন্ত্রিত ছিল। যদিও এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছু দ্রুত আরও উন্মুক্ত পরিবেশে বিকাশ লাভ করবে, অন্যগুলো সামনের বছরগুলোতেও পরাধীনতার দাগ বহন করবে। আসন্ন নির্বাচনে আস্থা তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাকে তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবার দেশের বাইরের পক্ষগুলোর সমর্থন এবং অভিজ্ঞতার হাত বাড়ানোর বিষয়ে সক্ষমতা দেখানো হওয়া উচিত।
আইনি ও নিরাপত্তা সংস্কারও জরুরিভাবে প্রয়োজন। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার ভয়ের মধ্যে বাস করছে, শুধু পুলিশের নয়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং সেনাবাহিনীর ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সেরও (ডিজিএফআই), যারা হাসিনার প্রশাসনের অধীনে প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করেছে। বাংলাদেশ তখনই সত্যিকার অর্থে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে, যখন জনগণের আস্থা থাকবে যে, রাজনৈতিক কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না, ‘গুম’ করা হবে না বা এমনকি বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে না, যেমনটি সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অধীনে নিয়মিত ঘটেছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া হাসিনার একজন অনুগতের জায়গায় নতুন পুলিশ প্রধান নিয়োগ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এসব সংস্থাগুলোর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো দমনমূলক আইন পর্যালোচনা করার জন্য একটি আইনি কমিশনও গঠন করা উচিত, যে আইন হাসিনার সরকার ভিন্নমত দমন করতে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহার করেছিল। কমিশন আসন্ন সংসদ এবং সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারে, যাদের আইন সংশোধন বা বাতিল করার ম্যান্ডেট থাকবে।
উপরন্তু, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক যাত্রার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। আগামীকাল নির্বাচন হলে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সম্ভবত বিজয়ী হবে, যদিও তা শুধু দলটির সমর্থকদের বিশাল নেটওয়ার্কের কারণে। তাই দলটি ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য যে চাপ দিচ্ছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে ক্ষমতায় থাকার সময়টা যারা মনে করেন তাদের অনেকের কাছে, দলটি আওয়ামী লীগের চেয়ে তেমন ভালো কিছু নয় যে দলটি (আওয়ামী লীগ) কেবলই ক্ষমতা থেকে সরেছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের তীব্রতা বিএনপির দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, যা জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য দলটির প্রচারণার সম্পূর্ণ উল্টো। ওই প্রচারণা দলটির মূল সমর্থকদের বাইরে খুব কম লোককেই আকর্ষণ করেছিল। হাসিনার বারবার দাবি করছেন, বিরোধীরা বিক্ষোভকে প্রভাবিত করছে। তা সত্ত্বেও, রাজপথে যারা ছিলেন, বিএনপির প্রতি তাদের দ্বিধাটা স্পষ্ট ছিল; তাদের মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যকই নেতৃত্বের জন্য দলটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্ভবত শিক্ষার্থীদের রয়েছে এবং এটি করার জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত।
হাসিনার বিদায় অতি দলীয়, বিজয়ীরাই সব ভোগ করবে এমন নির্বাচনী ধারার বাইরে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগ সামনে এনেছে, যে বিষয়গুলো গত তিন দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক ক্ষতিসাধন করেছে। সংস্কার আনতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সদস্য, টেকনোক্র্যাট এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ছাত্রনেতারা যারা জনসাধারণের সম্মান অর্জন করেছে, এমন অনেক পক্ষের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করা উচিত যাতে আরও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং আরেকজন স্বৈরাচারের উত্থান প্রতিরোধ করতে পারে। বিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সাংবিধানিক বিধান ফিরিয়ে আনা (এটি হাসিনার সরকার ২০১১ সালে বাতিল করেছিল), ভোটদান বা নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন, প্রধানমন্ত্রীদের মেয়াদের সীমা বেঁধে দেওয়া এবং নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের ক্ষমতার স্পষ্ট পৃথকীকরণ। এই পরিবর্তনগুলোর কয়েকটির জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, যা নির্বাচনের পরে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে করা হবে। আবারও প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, যাতে সবাই এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে যে, নির্বাচনে যে দলই জিতুক মতৈক্য হওয়া সাংবিধানিক বা আইনি পরিবর্তন পরবর্তী সংসদে আইন আকারে পাস হবে।
বিদেশি সরকারগুলোর... উচিত সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে স্পষ্ট করে দেওয়া যে তারা আশা করে, একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে দায়িত্ব নেবে।
বিদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। প্রথমত, তাদের উচিত সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে স্পষ্ট করে দেওয়া যে তারা আশা করে, একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে দায়িত্ব নেবে। দ্বিতীয়ত, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত, কারণ অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কেবল রাজনৈতিক উত্তরণকে আরও কঠিন করে তুলবে আর গণতান্ত্রিক সংস্কারে কারিগরি সহায়তা দিতে হবে। তৃতীয়ত, তাদের উচিত বাংলাদেশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিজেদের সহযোগিতা পর্যালোচনা করা এবং ভবিষ্যতের যেকোনো পারস্পরিক সহায়তাকে শর্তসাপেক্ষে করা উচিত যে, এই সংস্থাগুলো এমন সংস্কারের উদ্যোগ নেবে যা দায়মুক্তি ও নিপীড়নের সংস্কৃতিকে মোকাবেলা করতে শুরু করবে। হাসিনার সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থক হিসেবে, ভারতকে বিশেষভাবে সাবধানে পা বাড়াতে হবে। সুস্পষ্ট অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তার প্রশাসনকে এতটা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, বাংলাদেশিদের দৃষ্টিতে ভারত নিজের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে দেশটি। যদি দেশটি এখন সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হয়, তবে তা কেবল ভারতবিরোধী মনোভাবকে বাড়াবে, যা প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। এর পরিবর্তে ভারতের উচিত অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করা, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে; একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক যাত্রার অংশ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে এমন নতুন শক্তিগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রাখা। আর সাধারণত এমন পদক্ষেপগুলো এড়ানো যা বাংলাদেশিরা মনে করতে পারে, তাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
সহিংসতা এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে প্রবেশ করছে। তবে হাসিনার বিদায়টাও নতুন করে শুরু করার একটি সুযোগ। রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো থেকে বোঝা যায়, দেশকে স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারে এমন একটি সংস্কার প্রচেষ্টায় নতুন বিকাশমান শক্তিকে সমর্থন করার জন্য দেশের অন্তত পুরোনো কয়েকটি পক্ষের সদিচ্ছা আছে। এক প্রজন্মে একবার পাওয়া যায়- এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য যা যা করা যায়, আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সেটা করা উচিত।
No comments