দেশ থেকে পালিয়ে অলিম্পিকের মঞ্চে

আফগান শরণার্থী সাইক্লিস্ট মাসুমা আলী জাদার জন্য এবারের অলিম্পিক একটু অন্যরকম। আফগানিস্তানে তালেবান শাসক ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবার কোনো আফগান মেয়ে অংশ নিচ্ছে অলিম্পিকে। প্যারিস অলিম্পিকে সাইক্লিংয়ে অংশ নেবেন মাসুমা। ২৬ বছর বয়সী মাসুমা আলী জাদা এখন বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী কয়েক ডজন আফগান সাইক্লিস্টের সঙ্গে ক্যাম্প ভাগাভাগি করছেন। গত কয়েক বছর আফগানিস্তানে নারীদের খেলাধুলার সুযোগ সীমিত করা হচ্ছে। অলিম্পিক ডটকমকে শরণার্থী সাইক্লিস্ট আলী জাদা বলেন, ‘আমার দেশে মেয়েদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ একদম কমে আসছে।’ আফগান সরকার নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করেছে, অনেক সরকারি চাকরিতে নারীদের বাধা দিচ্ছে এবং মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাও নিষিদ্ধ করেছে। আলী জাদাকে গত পাঁচ বছর ফ্রান্সে বসবাস করতে হচ্ছে।

আফগান এই অ্যাথলেট গতবারের টোকিও অলিম্পিকেও অংশ নেন। তিনিই প্রথম আফগান মহিলা সাইক্লিস্ট যিনি শরণার্থী অলিম্পিক দলের অংশ হয়ে অলিম্পক গেমসে অংশ নেন। কিন্তু তার কাছে অলিম্পিক আনন্দের কারণ হয়ে আসেনি। কারণ টোকিও অলিম্পিক চলাকালেই তিনি মিনিটে মিনিটে তার দেশ আফগানিস্তান থেকে খারাপ খবর শুনছিলেন।
মাসুমা যখন কৈশোর পার করছেন তখন তার পরিবারকে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আলী জাদার পরিবার শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের। লাখ লাখ আফগানের মতো তার পরিবারকেও ইরানে বসবাস করতে বাধ্য হতে হয়। ১৬ বছর বয়সে তিনি ইরানের রাস্তায় সাইকেল চালানো শেখেন। পরে আফগান জাতীয় দলে যোগদানের জন্য কাবুলে ফিরে আসেন তিনি।
স্পোর্টসওয়্যার পরিধান করার সাহস পায় না আফগান নারীরা। এমনকি এই পোশাক পরিধানের জন্য মাসুমাকে শারীরিকভাবে আক্রান্তও হতে হয়েছে। কেবল সাইকেল চালানোর জন্য অপমান সহ্য করতে হয়েছে বারবার। তার দিকে ছুঁড়ে মারা হয়েছে পাথর। এরপর ২০১৬ সালে ফ্রান্সে আশ্রয় চান তিনি। মাসুমার মতে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আলী জাদার ভাষায়, ‘আফগানিস্তানের মেয়েরা প্রতিদিন একটি করে নতুন অধিকার হারায়। মেয়েরা আর উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তবে ভালো ব্যাপার হচ্ছে এখনও মেয়েদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে তবে ভবিষ্যতে এটিও কঠিন হবে। কারণ বর্তমানে যে মেয়েটি কিশোরী তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন হচ্ছে না।’ আলী জাদা আরো বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আজ বড় স্বপ্ন হচ্ছে স্কুলে যেতে পারা। ওরা শুধু এখন প্রাইমারি স্কুলে যেতে পারছে। ওদের জন্য হাইস্কুলের দরজা বন্ধ।’ ফ্রান্সের ‘ইউনিভার্সিটি অব লিলে’ পড়াশোনা করছেন এই আফগান সাইক্লিস্ট।
আবারো আফগান মেয়েরা এক ক্যাম্পে
কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ডের মোট ৪৯ জন মহিলা সাইক্লিস্ট ৫৭ কিলোমিটার রেসে অংশ নেবেন এবারের অলিম্পিকে। সে রেসে লড়বেন আলী জাদাও। আফগান এই সাইক্লিস্ট বলেন, ‘আমার দেশের মেয়েদের কথা ভেবে আমার দুঃখ লাগছে। আমাদের মতো ওরা খেলতে পারছে না। ওরা হাসতে পারছে না।’
তবে আলী জাদার জন্য এই দুঃখের মধ্যেও কিছু খুশির কারণ আছে। তার পুরোনো সাইকেলমেটদের এখানে একই ক্যাম্পে পাচ্ছেন তিনি। আফগান এই সাইক্লিস্ট বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমি যাদের সাথে সাইকেল চালিয়েছি তাদের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পেরে খুব খুশি’। আমি তাদের শেষবার দেখেছিলাম পাঁচ বছর আগে।’
আফগান নারী সাংবাদিক এখন সাইক্লিস্ট
বেনাফশা ফয়জি একজন আফগান সাংবাদিক। আফগানিস্তান জাতীয় অলিম্পিক কমিটির প্রাক্তন মুখপাত্র তিনি। ২০২১ সালে দেশ থেকে পালাতে হয় তাকে। সে সময় ‘আফগান নারী সাইক্লিস্ট ইউনিয়ন’ সবাই দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। বেনাফশা বলেন, ‘আফগানিস্তানে এখন একজন মেয়ে খেলাধুলা করছে এটা ভাবা কল্পনাতীত। ওখানে পরিস্থিতি প্রতিদিন আরো খারাপ হচ্ছে।’  বেনাফেশা বলেন, ‘আফগান নারীদের নিপীড়ন সত্ত্বেও বিশ্ব এখন নীরব। যারা মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে, তারা আসলে আফগান নারীদের জন্য কিছুই করছে না।’ 

No comments

Powered by Blogger.