৪০ বছরের মধ্যে যুবতীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি

চল্লিশ বছরের মধ্যে বয়সী কোটি কোটি নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর কারণ, এ বয়সসীমার যুবতীরা কখনোই তাদের ব্রেস্ট পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেন না। ফলে নীরবে, সঙ্গোপনে তাদের বুকে ক্যান্সারের বাসা বাঁধার ঝুঁকিটা থেকে যায়। এ সময়ে তারা বুঝতে পারেন না আসলেই তাদের দেহে এই ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ আছে কিনা। এর কারণ, শারীরিক গঠনও। নতুন এক গবেষণায় উদ্বেগজনক এমন তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা। এ খবর প্রকাশিত হয়েছে বৃটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে। এতে বলা হয়েছে, বহু নারী ব্রেস্ট চেকআপ করাকে একটি বিব্রতকর বিষয় হিসেবে ভেবে থাকেন।
এমন কি এ নিয়ে কথা বলতেও লজ্জাবোধ করেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে বৃটেনে প্রতি দশ মিনিটে পরীক্ষায় একজন নারীকে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে।
দ্য এস্টি লাউডার কোম্পানিজ এই গবেষণা করে ১৮ বছরের ওপরে বয়সী বৃটিশ ২০১৭ জন নারীর ওপর। কোম্পানিটি এই রোগ সম্পর্কে নারীদের সচেতনতা সৃষ্টি বিষয়ক প্রচারণাও চালায়। তারা গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, বৃটিশ ওইসব নারীর মধ্যে যাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে তাদের শতকরা ২১ ভাগ কখনোই ব্রেস্ট ক্যান্সার আছে কিনা তা চেক করান নি। তবে ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এই হার শতকরা মাত্র ৭ ভাগ। গবেষণায় অংশ নেয়া নারীরা বলেছেন, গত ছয় মাসে তারা দাঁতের সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু ব্রেস্টের সমস্যা নিয়ে তারা এত ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যান না। গবেষণায় শতকরা ৩৭ ভাগ নারী এমন পরীক্ষা করান নি। তারা এ নিয়ে কখনো কারো সঙ্গে শলাপরামর্শও করেননি। অন্যদিকে শতকরা ২২ ভাগ নারী মনে করেন ব্রেস্ট বা স্তন চেক করানো একটি বিব্রতকর বিষয়। এ রোগ নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অবস্থায় থাকেন ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবতীরা। ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে ভালভাবে জানেন শতকরা মাত্র ৩৩ ভাগ নারী। তারা ব্রেস্ট ক্যান্সারের সব লক্ষণ যথাযথভাবে বলতে পেরেছেন।
অভিনেত্রী ও মডেল এলিজাবেথ হারলে এখন নারীদের ব্রেস্ট বা স্তনের সমস্যা নিয়ে সব বয়সী নারীকে উৎসাহিত করছেন। তাদেরকে নিয়মিত ব্রেস্ট চেক করাতে উদ্বুদ্ধ করছেন। কিভাবে নিজে নিজে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ধারণ করা যায় বা বোঝা যায় তা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করাকে উৎসাহিত করছেন তিনি। প্রায় দু’দশক ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্মূলের বিরুদ্ধে এস্টি লাউডারের সঙ্গে কাজ করছেন এই তারকা শিল্পী। তিনি বলেছেন, বৃটেনে সবচেয়ে কমন যে ক্যান্সার তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার। প্রতি বছর এই রোগে মারা যান প্রায় ১১ হাজার ৪০০ নারী। এলিজাবেথ হারলে আরও বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যাতে যুদ্ধ করা যায় তাই এই ক্যান্সার বাসা বাঁধার শুরুতেই যেন তা ধরা পড়ে এ জন্য একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতে নারীদেরকে একত্রিত হবে হবে। আলোচনা করতে হবে। কথা বলতে হবে। এটা করতে হবে নিজেদের নিরাপদ থাকার জন্য। এ নিয়ে আপনি আপনার মা, বোন, মেয়ে, আন্টি, বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের কাছে আপনার জানতে চাওয়া উচিত তারা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত চেকআপ করেন কিনা।
এলিজাবেথ হারলে বলেন, ১৯৯২ সালে ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা গেছেন আমার ‘গ্রান্ডমাদার’। এ বছরেই শুরু হয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার ক্যাম্পেইন। আমার ওই ‘গ্রান্ডমাদার’ কিন্তু তার প্রিয়জনদের সঙ্গে তার ক্যান্সার নিয়ে কোনোদিনই কিছু বলেন নি। তিনি নিজের ভিতর এটাকে গোপন রেখেছিলেন। আমি চাই না বর্তমানের কোনো মেয়ে এই একই অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে সময় পাড় করুন। তাই আমাদের উচিত উন্মুক্ত আলোচনা। বিব্রতবোধকে পিছনে ফেলে দিন। আমাদের ব্রেস্টকে অনিশ্চয়তায় ফেলবেন না।
‘ইউ, মি অ্যান্ড দ্য বিগ সি’-এর উপস্থাপিকা ও ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে সুস্থ হওয়া লরা ম্যাহোন এবং দ্য সান-এর ডেবোরাহ জেমস বলেছেন, এই গবেষণা তাদের বিদ্যমান উদ্বেগকে তুলে ধরেছে। লরা বলেছেন, আমি যখন ৩১ বছর বয়সী যুবতী, ওই সময় আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ থেকে এমন প্রচারণায় যুক্ত হই। নারীদের উচিত এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখা এবং কিভাবে চেকটা করতে হয় তা জানা উচিত। এমন সমর্থন দিতে পেরে আমি যেন চাঁদে পৌঁছে গিয়েছি। দ্য এস্টি লাউডার কোম্পানিজ ব্রেস্ট ক্যান্সার ক্যাম্পেইন এ বছর নিজে নিজে কিভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা ব্রেস্ট পরীক্ষা করা যায় তার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছে। তার নিয়মিত সঙ্গী হতে পেরে আমি গর্বিত। এমন ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপ অসংখ্য জীবনকে বাঁচাতে পারে। গত বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারে সাবেক সহকর্মী র‌্যাচেল ব্লান্ড মারা যাওয়ার পর এমন মন্তব্য করলেন লরা।

কিভাবে নিজে নিজে ব্রেস্ট ক্যান্সার পরীক্ষা করবেন:
ধাপ-১: একটি আয়নার সামনে দাঁড়ান আয়নার দিকে মুখ রেখে। আপনার হাত ভাঁজ করে কোমডে আনুন। কাঁধ সোজা রাখুন। লক্ষ্য করুন ব্রেস্টের ওপরে কোন গোঁটা আছে কিনা। লালচে দাগ আছে কিনা। সংকোচন আছে কিনা। লালচে ঘাঁ, ফুসকুড়ি আছে কিনা। অথবা বৃন্তের ওপর কোনো পরিবর্তন দেখতে পান কিনা।
ধাপ-২: আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকুন। দুই হাত মাথার ওপর তুলুন। ধাপ এক-এর মতো একই রকম পরিবর্তনগুলো আছে কিনা চেক করুন।
ধাপ-৩: আপনার হাত মাথার ওপর রেখেই চেক করুন বৃন্ত (নিপল) দিয়ে কোনো তরল বেরিয়ে আসছে কিনা। এটা হতে পারে দুধের মতো সাদা, হলুদ, পানির মতো তরল অথবা রক্ত।
ধাপ-৪: শুয়ে পড়–ন। বাম হাত দিয়ে ডানদিকের এবং ডানহাত দিয়ে বাম দিকের ব্রেস্ট চেক করুন। হাতের কয়েকটি আঙ্গুল একত্রিত করে একসঙ্গে তা বৃত্তাকারভাবে ঘোরান ব্রেস্টের চারপাশে। উপর থেকে নিচে- সব স্থানে এই একই রকম বৃত্তাকারভাবে পুরো ব্রেস্ট চেক করুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন একই রকম অনুভূতি হয় কিনা। এবার ত্বকের ওপর এবং এর নিচের টিস্যুগুলোর অনুভূতি পেতে আলতো করে চাপ দিন। ব্রেস্টের মধ্যভাগের টিস্যুগুলোর অনুভূতি পেতে মাঝারি ধরনের চাপ দিন। পিছনের টিস্যুর অনুভূতি পেতে একটু জোরে চাপ দিন। চাপ দিয়ে হাড়ের উপস্থিতি পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করুন। এর মধ্যে লক্ষ্য করুণ শক্ত মতো কোনো কিছুর উপস্থিতি পান কিনা।

No comments

Powered by Blogger.