কর্নেল তাহেরের কাছে জিয়াউর রহমানের বার্তা, ‘ফ্রি মি তাহের, সেভ মি’

বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটনাবহুল অধ্যায় পঁচাত্তরের নভেম্বর। একের পর এক ক্যু আর পাল্টা ক্যু নিয়ে অস্থির এক সময়। কি ঘটেছিল সে সময়। একেক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে একেক ভাষ্য। নতুন করে এ বিষয়গুলো অবারও আলোচনায় সিরাজুল আলম খানের ভাষ্যে। তারই রাজনৈতিক সহকর্মী শামসুদ্দিন পেয়ারার বয়ানে লিখিত ‘সিরাজুল আলম খান: একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য’ বইতে অজানা সেই অধ্যায় পাঠকের জন্য পুনর্লেখ করা হলো-
গণঅভ্যাত্থানের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ায় আমরা রাজনীতির ভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এর মধ্যে প্রধান হলো, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ গড়ে তোলা। ১৯৭৩-এর মাঝামাঝি থেকে জাসদ সভাতি মেজর জলিলের নেতৃত্বে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রায় সব ইউনিটে এবং বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র সংগঠন গড়ে ওঠে।
ঢাকার চারপাশে প্রায় ৪০টি স্থানে ঘাঁটি গঠন এবং ঢাকাসহ জেলা ও মহকুমা শহরে গণবিস্ফোরণমূলক আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবার পর ক্ষমতা দখলের ভিন্ন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সেটি হলো সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র নেতৃত্বে সিপাহীদের অভ্যুত্থান এবং যুগপৎভাবে সে অভ্যুত্থানের সমর্থনে ঢাকাসহ শহর এলাকায় ছাত্র-যুবক এবং শ্রমিকদের গণঅভ্যুত্থান ঘটানো। এভাবে ছাত্র ও শ্রমিকদের গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করা।
ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত আমাদের এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য ছিল ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থান ও তার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীতে তাঁর একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সুযোগকে কাজে লাগানো।
কর্নেল আবু তাহেরের ওপর এ অভ্যুত্থানের নীলনকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় সিওসির একটি বৈঠক বসে সেখানে কর্ণেল তাহের তার পুরো পরিকল্পনাটি তুলে ধরেন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে জিয়াউর রহমানের অবস্থান কী, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ইংরেজিতে বলেন, 'He will be at my knees' (সে আমার হাঁটুতে পড়ে থাকবে)। এরপর আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী অভ্যুত্থান ঘটানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কমিটিকে পরামর্শ দিই এবং কমিটি তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। সভার শেষে বিদায়ের সময় আমি কর্নেল তাহেরকে বললাম, ‘কোনো অবস্থায় যেন এটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানে পরিণত না হয়।’ তিনি বললেন, 'It will happen right at one O'clock'. (রাত ঠিক ১টায় এটি ঘটবে)
অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম যে কথাটি ঘোষণা করা হলো তা ছিল, “বাংলাদেশের বীর বিপ্লবী জনগণ, ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ ও ‘বিপ্লবী গণবাহিনী’র নেতৃত্বে বাংলাদেশে ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছে।” বাংলাদেশ বেতার তখন শাহবাগে। সেখান থেকে শামসুদ্দিন পেয়ারা টেলিফোনে আমার নির্দেশ মতো এ ঘোষণাটি লিখে তা স্বকন্ঠে বেতারে প্রচার করে।
এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে সারাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশ, আনসার ও বিডিআর সদস্যরা গণবাহিনীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে হলেও ঢাকা শহরে ছাত্রদের এবং ঢাকার আশপাশে সৈনিকদের মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে আসতে থাকে। সিওসি হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত ছিল জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহেরের সঙ্গে বিপ্লবী সৈনিকরা শহীদ মিনারে এসে ছাত্র-শ্রমিকদের সঙ্গে মিছিল হবে। সেখানে ‘কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল’ গঠন হবে। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সৈনিকদের প্রস্তাবিত ১২ দফা মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। এবং কমান্ড কাউন্সিলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা হবে।
কিন্তু এ সময়ই খন্দকার মোশতাক আহমেদের সমর্থক এক দল আমলা ও সেনা কর্মকর্তা আমাদের এ সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। জিয়াউর রহমানও সেই বাধার বিরুদ্ধে কিছু করতে না পেরে তাদের সহযোগিতা করলেন।
৩ নভেম্বর খালেদ মোশারফের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান পদ গ্রহণ করার বিষয়টি সাধারণ সৈনিক ও বেশিরভাগ অফিসারের মনঃপুত ছিল না। খালেদ মোশারফ যে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করলেন সেটিও সাধারণ সৈনিক ও বেশির ভাগ অফিসার মেনে নিতে পারলেন না। এতে সেনাবাহিনীতে এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তার ফলে রাষ্ট্রক্ষমতায় কেবল বিশৃঙ্খলাই নয়, এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, এটাই আমাদের (জাসদ, গণবাহিনী, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা) ক্ষমতা গ্রহণের উপযুক্ত সময়। নভেম্বরের সে কয়দিন ঢাকা শহরে এবং শ্রমিক এলাকাগুলোতে ছাত্র-যুবক এবং শ্রমিকরা গণআন্দোলনের স্রোত সৃষ্টি করে।
৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আমি, ড. আখলাকুর রহমান ও কর্নেল তাহের লালমাটিয়ায় আখলাকুর রহমান সাহেবের বাসায় মিলিত হই। এই প্রথমবারের মতো ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র সৈনিকদের সংগঠিত অবস্থায় কথা ড. আখলাক ও কর্নেল তাহেরকে জানাই। ১৯৭৪-এ ১৭ই মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে জলিল-রবের গ্রেপ্তারের পর ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র কাজ সমন্বয়হীন হয়ে পড়ে। মেজর জলিল এ দায়িত্ব পালন করতেন। ক্যান্টনমেন্টে তাঁদের নিজস্ব একটি ‘কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল’ ছিল।
আমরা তিনজন (আমি, আখলাক, তাহের) মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, দেশে তখন যে অনিশ্চয়তা ও ক্ষমতাবলয়ে যে শূন্যতা বিরাজ করছিল, তা থেকে দেশকে রক্ষা করতেই বাইরের ছাত্র-যুবক-শ্রমিক এবং ভেতরের সৈনিক সংস্থার যোগসাজশে একটি বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটানো অত্যবশ্যক হয়ে পড়েছে। ড. আখলাক ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে যোগাযোগের লিঙ্ক প্রতিষ্ঠা ও তার জন্য ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র সহায়তার কথা তুললে কর্নেল তাহের বললেন, 'I shall find it out' (আমি সেটা খুঁজে বের করবো)।
কর্ণেল তাহের এরপর ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলেন। প্রশ্ন উঠলো, কে ছাত্র-শ্রমিক-সৈনিকদের এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকবেন? তখনকার পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই জিয়াউর রহমানের নাম আসে। এ ব্যাপারেও কর্নেল তাহের বললেন, 'I can handle that too' (আমি সে ব্যাপারটাও সামলাতে পারবো)।
নভেম্বরের ৪, ৫ ও ৬ তারিখ অভ্যুত্থানের আয়োজন ও প্রস্তুতিতে চলে গেল। এর মধ্যেই ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের কাছ জিয়াউর রহমান বার্তা পাঠালেন, 'Free me Taher, save me' (তাহের আমাকে মুক্ত কর, আমাকে বাঁচাও)।
কর্নেল তাহের এসব ঘটনা আমাদের কাছে রিপোর্ট করলেন এবং সৈনিক সংস্থার মাধ্যমে একটি সফল বিপ্লব যে ঘটানো সম্ভাব, তাও বললেন। এ বিষয়ে সৈনিক সংস্থার সঙ্গে তাঁর আলোচনা ও বিস্তারিত পরিকল্পনার কথাও জানালেন। এসব প্রস্তুতির আলোকে ৬ নভেম্বর রাত একটায় (৭ তারিখ) অভ্যুত্থানের সময় নির্ধারণ করা হয়। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ছাত্র-শ্রমিকদের মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি ঘটিয়ে সেনাবিদ্রোহের সঙ্গে তাকে একাকার করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী সংযোগ স্থাপনে এ শক্তিসমূহ প্রচ- ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ৭ নভেম্বরের ভোর বেলা (অনুমান ৬টার দিকে) জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সামরিক অফিসার ও সৈনিকরা ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য সামরিক বাহন নিয়ে শহীদ মিনারে আসবে। একই সময়ে ছাত্র-যুব-শ্রমিকরাও তখন শহীদ মিনারে উপস্থিত হবে। ছাত্ররা আসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজ থেকে। আর শ্রমিকরা মৃত আদমজি, তেজগাঁও ও পোস্তগোলা থেকে মিছিল করে শহীদ মিনারে আসবে। ওখানেই ‘বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল’ গঠন ও ঘোষণা করা হবে। পরবর্তী ধাপে কমান্ড কাউন্সিলের অধীনে সকল রাজনৈতিক দল, সৈনিক, শ্রমিক ও ছাত্র-যুবকদের নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা হবে।
ক্যান্টনমেন্টের ব্যারাকগুলোতে এ সময় ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ ছাড়াও স্বার্থান্বেষী আরো কিছু গোষ্ঠী অতিদ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠলো। বাইরে মাহবুবুল আলম চাষীসহ একদল আমলাও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমগ্র ঘটনাকে ভিন্ন খাতো প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কার্যত তারাই জিয়াউর রহমানকে তাদের পক্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ সময় ক্যান্টনমেন্টের বাইরে চিত্র হলো, সময়মতো ছাত্র-যুব-শ্রমিকরা শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে তাদের এগিয়ে যাবার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে পারলো না। ছাত্র-যুবক-শ্রমিকদের সমবেত করার জন্য নির্দিষ্ট করে যাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাও তা কার্যকর করতে পারেনি। আমাদের প্রধান প্রধান নেতারা সেই সময় জেলে ছিলেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণে চরমভাবে ব্যর্থ হন। পরবর্তী সময়েও এ ব্যর্থতাকে অতিক্রম করার সুযোগ না নিয়ে একটি অসময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে সবকিছুই এক পর্যায়ে আমাদের হাতের বাইরে চলে যায়।
৯ নভেম্বর ১৯৭৫ জলিল-রব মুক্তি লাভ করেন। এরপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমরা আলোচনায় বসি। আলোচনার গতি দেখে আমি বুঝলাম, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দুটি স্পষ্ট ভাগ। একটি ভাগের মত হলো: দুই চারদিনের মধ্যে ৭ নভেম্বরের মতো করে সিপাহী-জনতার আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটানো। দ্বিতীয় মতটি হলো: জিয়াউর রহমানকে তাঁর ক্ষমতা সংহত করার সুযোগ দিয়ে আরও সংগঠিতভাবে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা। দুটি ভিন্ন মতামতের কারণে আমি ক্ষুদ্রাকারের একটি ‘অ্যাকশন কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিলাম। অবস্থা বুঝে এই ‘অ্যাকশন কমিটি’ জাসদ ও ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’র হাই কমান্ডের কাছে রিপোর্ট করবে এবং তার আলোকে ও বাস্তবতার নিরিখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নভেম্বরের ১৫ কি ১৬ তারিখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৩ নভেম্বর হঠাৎ করে আমার কাছে সংবাদ এলো, কোনো একটি সভা থেকে মেজর জলিল, আ স ম রব ও কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হবে। ঐদিনই এসএম হলের হাউজ টিউটরের বাসা থেকে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয় পরে ইনুও গ্রেফতার হলো। এঁদের গ্রেফতারে আমি বিস্মিত হলাম। গ্রেফতার হবার মতো এমন কোনো ঘটনা বা সিদ্ধান্ত তো হয়নি।
এ ঘটনার প্রায় ৩০ বছর পরে (২০০৫ সালে) আমি জানতে পারলাম, আমার অনুপস্থিতিতে, আমাকে না জানিয়ে বা আমার মতামত না নিয়ে, মাত্র কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, সেই প্রস্তাবের উত্থাপক ছিলেন কর্নেল তাহের ও মেজর জলিল। বলা বাহুল্য জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই এই অভ্যুত্থান ঘটানোর চিন্তা করা হয়েছিল।
ক্ষুদ্রাকারের সেই ‘অ্যাকশন কমিটি’তে ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব, কর্নেল তাহের, হাসানুল হক ইনু ও আমার অনুরোধে অন্তর্ভুক্ত করা শরীফ নূরুল আম্বিয়া। আমার অনুপস্থিতিতে, আমাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার এই বিষয়টি আমি পরে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার কাছ থেকেই জানতে পারি।
বৈপ্লবিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের জন্য যে সংগঠিত শক্তি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সৈনিক ও অফিসারদের মধ্যে এবং বাইরে ছাত্র-যুব-শ্রমিকদের মধ্যে থাকা দরকার, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত হয়ে পড়েছিল। সর্বোপরি ক্ষমতয় যারা থাকে তাদের সঙ্গে ক্ষমতার বাইরে থাকা জনগণের যে পরস্পর বিরোধী অবস্থান থাকা প্রয়োজন- যার ভিত্তিতে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব- তাও একেবারেই অনুপস্থিত ছিল।
আমার অনুপস্থিতিতে যে সভাটিতে দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার পূর্বেকার একটি সভায় যখন কথাটা উঠেছিল, আমি জানতে চেয়েছিলাম, সেনাবাহিনীর মধ্যে (অফিসারসহ) সমর্থন এবং সাজ-সরঞ্জামের দিক থেকে অভ্যুত্থানের পক্ষে কী পরিমাণ প্রস্তুতি আছে। তার উত্তরে বলা হয়েছিল, ‘একটি ট্যাঙ্ক’ আমাদের পক্ষে থাকবে। সৈনিক ও অফিসারদের কোনো সংখ্যা কেউ দিতে পারলেন না। শুধু বললেন, যেহেতু ইতিপূর্বে সৈনিকরা আমাদের পক্ষে ছিল অতএব তাদেরকে সংগঠিত করতে বেশি সময় লাগবে না। আমি ছাত্র-যুব-শ্রমিক সংগঠনের অবস্থা উল্লেখ করতে গিয়ে বললাম, পুনরায় এদেরকে সংগঠিত করতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। এ সভার পরেই আমাকে ছাড়া দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.