বেলা থর্ন: ডিজনি তারকা থেকে পর্ন পরিচালক যিনি নিজেই ভূয়া ভিডিওর শিকার

কারো সম্মানহানি করার লক্ষ্যে একান্ত ব্যক্তিগত যৌনসম্পর্কের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়াটা বেশ কিছুকাল থেকেই পৃথিবীতে এক গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়েছে - যাকে বলে 'রিভেঞ্জ' বা প্রতিশোধমূলক পর্ন ।
এই রিভেঞ্জ পর্নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন এমন এক তারকা - যিনি একসময় ছিলেন ডিজনি তারকা, কিন্তু এখন নিজেই পর্ন ছবির একজন পরিচালক।
বেলা থর্ন নামের এই পর্ন ডিরেক্টর এ সপ্তাহের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি পর্নগ্রাফি শেয়ারিং সাইট পর্নহাবের সাথে কাজ করবেন এটিকে 'রিভেঞ্জ পর্ন' থেকে মুক্ত করার জন্য।
বেলার মুখ অন্য নারীর দেহে জুড়ে দিয়ে এরকম হাজার হাজার পর্ন ছবি তৈরি করা হয়েছে। এসব কথা বলার সময় বেলা থর্ন কাঁদছিলেন এবং তার পোষা অস্ট্রেলিয়ান শেফার্ড কুকুরটি পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে তার উদ্বেগ প্রকাশ করছিলো।
আমরা কথা বলেছি গণিকা বলে কাউকে লজ্জা দেবার বিষয়ে, তা ছাড়া অবসাদ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্থা করা নিয়েও কথা বলেছি। আর যে দেহ বেলার বলে চালিয়ে মিথ্যা ভিডিও তৈরি করা হয়েছে - সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি।
আমরা অন্টারিওতে তার ভাড়া বাড়ির ডেকে বসেছিলাম। খুবই শান্ত এলাকা। থর্ন তিন মাস ধরে এখানে আছেন শুটিংয়ের কাজে। এখান তিনি তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন যিনি নিপীড়ক বাবাকে হত্যার জন্য শহরে ফিরে এসেছেন।
এ বছরেই অর্থাৎ ২২ বছর বয়সে এসে নিজের প্রথম বই প্রকাশ করেছেন তিনি।
নয় বছর বয়সে বেলা এক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় তার বাবাকে হারান। শিশু মডেল হিসেবে বেড়ে ওঠে তার ক্যারিয়ার। পরে জায়গা করে নেন ডিজনি চ্যানেলে।

১০০ নারী

বিবিসির প্রভাবশালী নারীর তালিকা নারী নেতৃত্বময় ভবিষ্যতের ভিশন দেখায়।
এই জুনে বেলা কিছু টেক্সট মেসেজ পান এমন কিছু নাম্বার থেকে- যেগুলো তার পরিচিত নয়।
"একটি সাক্ষাতকার দিয়ে এসে আমি কাঁদছিলাম। বই নিয়ে কথা বলছিলাম। এবং এর মধ্যে ফোনের দিকে তাকিয়ে আমি দেখি আমার নিজেরই নগ্ন চিত্র"।
নিজের সাবেক প্রেমিকের কাছে পাঠানো ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বেলা অবাক হন।
ম্যানেজারকে ডাকেন ও এজেন্টের কাছে পরামর্শ চান। কিন্তু এর মধ্যেই আবারো শব্দ করে ওঠে ফোন।
আরও নগ্ন ছবি। এবার তার কিছু বিখ্যাত বন্ধুর।
সময়টা ছিলো খুব সকাল এবং তখনো তিনি বিছানায়। নিজের বইয়ে বেলা ছোটবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। ছবিগুলো দেখে সেই একই অনুভূতি জেগে উঠলো তার মনে।
"এটি আবারো ঘটলো" - বলেন তিনি।
সুতরাং তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইটারে তার ৭০ লাখ ফলোয়ার এবং ২২ মিলিয়ন ইন্সটাগ্রামে ও ফেসবুকে প্রায় নব্বই লাখ।
নিজের টপলেস ছবি প্রকাশ করে তিনি সাথে হ্যাকাররা তাকে যে হুমকি দিয়েছে তার স্ক্রীনশট দিলেন, আর তার সাথে নিজের বার্তা।

বিতর্ক

আমেরিকান চ্যাট শো দা ভিউয়ের হুপি গোল্ডবার্গ অবশ্য থর্নের সাথে একমত নন।
"তুমি যদি বিখ্যাত হও তখন তোমার বয়স কতো সেটা আমি বিবেচনায় নেবো না। তাই নিজের নগ্ন ছবি তুলোনা কখনো। একবার নিলে এটা হ্যাকারদের জন্য সহজলভ্য হয়ে পড়ে। আর ২০১৯ সালে এসে এটা যদি না বোঝো তাহলে আমি দু;খিত"।
তবে বেলা থর্ন ইন্সটাগ্রামে গোল্ডবার্গের এই মন্তব্যকে 'সিক অ্যান্ড ডিসগাস্টিং' আখ্যায়িত করেন।
"আমি পছন্দ করি এমন কারও কাছ থেকে এমন মন্তব্য আমাকে আঘাত দেয়"।
তিনি বলেন আগে থেকেই ঝুঁকিতে থাকা কোন তরুণকে প্রকাশ্যে বিব্রত করলে সেটি তাকে আরও মানসিক সংকটের দিকে ঠেলে দেয়।
"একটি ছবি এভাবে প্রকাশ হলে এটি স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে। এবং তাদের আত্মঘাতী মনে হতে পারে"।

ইন্টারনেটে ভুয়া ছবি ও ভিডিও

এসব ছবি যা তিনি নিজে প্রকাশ করেছেন সেগুলো ছিলো বেলা থর্নের সত্যিকার টপলেস ছবি।
কিন্তু ভিডিওতে পরিষ্কার বেলাকে দেখা গেলেও সত্যিকার অর্থেই তিনি সেটি ছিলেন না। এগুলো কারসাজি করে বানানো হয়েছিলো সুপার-ইমপোজ করে।
একটি ভিডিওতে থর্নের কান্নার শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছিলো, যেটি থর্নেরই একটি রেকডিং থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি নির্মাণ করে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি
আবার একটি ভিডিওতে যেখানে একজন নারী স্বমেহন করছে, সেখানে বেলা থর্নের মুখ বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
"এসব ভিডিও সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবাই মনে করেছে এটি আসলেই আমি," বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
সফটওয়্যার ডেভেলপাররা বিবিসিকে বলছে, এক বছর ধরেই একটি সিঙ্গেল ফটোগ্রাফ থেকে এমন ভুয়া (ডিপ ফেক) ভিডিও বানানোর প্রযুক্তি বাজারে আছে। আর এটাই বেলাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
"এটা শুধু সেলিব্রিটিদের জন্য উদ্বেগের নয় বরং এটা কমবয়সীদের পর্নগ্রাফির ভিত্তি তৈরি করছে"।
তিনি বলেন এসব ভিডিও প্রতিশোধ নেয়া, ব্লাকমেইল করা এমনকি চাঁদাবাজির জন্য তরুনী নারীদের বিরুদ্ধ ব্যবহৃত হতে পারে।

পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ

এই পর্যায়ে এসে অ্যাওয়ার্ড জেতা প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি 'হিম অ্যান্ড হার' যেটিতে পরিচালক হিসেবে বেলা থর্নের অভিষেক হয়েছে - সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
তিনি বলেন তিনি ছবিটি বানিয়েছেন কারণ তিনি মনে করেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে আরও নারী পরিচালক দরকার। এটি হওয়া দরকার নারীর যৌনতা নিয়ে থাকা গল্পগুলোর পরিবর্তনের জন্যই।
এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি যেখানে ছবি মুক্তি দিয়েছেন - বিবিসির অনুসন্ধান দেখা গেছে সেই পর্নহাবই রিভেঞ্জ পর্ন ভিডিও থেকে মুনাফা করছে। জবাবে তিনি বলেন. এটা তার জানা ছিলোনা।
পর্ণহাবের মালিক কোম্পানি অবশ্য বিবিসিকে বলেছে, তারা চান ব্যবহারকারীরা নিরাপদে কনটেন্ট ব্যবহার করবে।
থর্নের এক বন্ধু পরে জানিয়েছেন, তিনি পর্নহাবের সাথে কথা বলেছেন্ ।
পরে তিনি তার প্রথম মুভির জন্য পর্নহাব অ্যাওয়ার্ড পান।
তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং প্রতিশোধমূলক পর্ন ভিডিওর বিরুদ্ধে বার্তাও দিয়েছেন তাতে।
"পর্নহাবের সাথে আমি কাজ করছি প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য"।

No comments

Powered by Blogger.