শালবন বিহারে একদিন by শাহরিয়ার নোবেল

কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধ বিহার
কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা। এর মধ্যে অন্যতম শালবন বৌদ্ধ বিহার। দ্বাদশ শতাব্দীর এই প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর একটি।
ময়নামতিতে খনন করে এর অস্তিত্ব মেলে। কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এর অবস্থান। এখানকার আশপাশে একসময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল। এজন্যই এর নামকরণ হয়েছে শালবন বৌদ্ধ বিহার
ধারণা করা হয়, সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। এর ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয়েছিল বলে ধারণা রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।
শালবন বৌদ্ধ বিহারে মোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। এর সামনে ৮ দশমিক ৫ ফুট চওড়া বারান্দা ও শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবীর মূর্তি ও তেলের প্রদীপ রাখা হতো। কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যা ও ধর্মচর্চা হতো।
প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চারদিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত এটি। হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবারঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। এর চারদিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে শালবন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
শালবন বৌদ্ধ বিহারের মূল মন্দিরকে ঘিরে চারপাশে ছোট ছোট ৯টি মন্দির ও ৬টি স্তূপ পাওয়া গেছে। এছাড়া মূল মন্দিরের বাইরে আরও দুটি মন্দির ও চারটি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়।
গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে মূল বৌদ্ধ বিহারের (মন্দিরের) উত্তর-পূর্ব কোণে পাঁচ বর্গমিটার আয়তনের ২১টি বর্গাকৃতি স্থানে খননকাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর একটি স্থানে ইট ও কাদামাটির তৈরি কূপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গোলাকার কূপটির ব্যাসার্ধ ১১ ফুট চার ইঞ্চি।
বৌদ্ধ বিহারে রয়েছে হরেক রকমের ফুল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কসমস, ডালিয়া, জিনিয়া, মৌচান্দা, সেলভিয়া, বোতাম, গোলাপ, সিলভিয়া, কেলানডোলা ইত্যাদি। বছরজুড়ে ঋতুভিত্তিক নানান প্রজাতির ফুল গাছের চারা রোপণ করা হয়।
ঐতিহাসিক নিদর্শন শালবন বৌদ্ধ বিহার দেশ-বিদেশের পর্যটকদের মধ্যে আকর্ষণীয়। প্রতিদিনই তাদের সমাগম দেখা যায় এখানে। শিক্ষার্থী আর গবেষকদের কাছে এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.