যে দেশে প্রেম-বিয়ে নির্ভর করে জিন পরীক্ষার ওপর

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই মানুষ নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রেম কিংবা বিয়ের মতো সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু নাইজেরিয়ায় বর্তমানে প্রেম কিংবা বিয়ে করার আগে বিবাহযোগ্য নারী-পুরুষকে চিন্তা করতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের বিষয়টি। জিন পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বিয়ের মতো সম্পর্কের বিষয়ে ভাবতে হয়। কারণ দেশটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের শরীরে এমন কিছু জিন রয়েছে যেগুলো ভবিষ্যতে সিকল সেল ডিজেজের (এসসিডি) জন্য দায়ী হতে পারে।
নাইজেরিয়ার যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ডেমিলোলা ওগুনপেবি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। কিন্তু এই বিয়ে করার জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ এক পথ। বিয়ের উপযোগী পাত্রীর সন্ধানে তাকে অনেক অনুসন্ধান করতে হয়েছে। এমন অনেককে পছন্দ হলেও দুই জনের জিন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় বিয়ে করা হয়নি। ডেমিলোলা বলেন, আমি আমার বর্তমান সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার আগে দীর্ঘদিন খোঁজখবর করেছি। উপযুক্ত জিনোটাইপের সমস্যা ছিল। যখনই কারো সঙ্গে ‘ডেটে’ যেতাম প্রথমেই আমাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো—তোমার জিনোটাইপ কি? এইভাবে অনেকের সঙ্গে দেখা করলেও দুই জনের জিনোটাইপের সমন্বয় না হওয়ায় সেসব সম্পর্ক আর সামনে এগোয়নি। মূলত যাদের জিনে সিকল সেল ডিজেজের গুণাগুন থাকে তাদের সঙ্গে বিয়ের মতো সম্পর্ক তৈরিতে অনীহা প্রকাশ করে মানুষ।
সিকল সেল ডিজেজ মূলত উত্তরাধিকারী রক্তের ব্যাধি। অর্থাত্ বাবা-মায়ের রক্তের মাধ্যমে এটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যায়। এসসিডিতে আক্রান্তদের রক্তের কোষের গঠন সাধারণত সি আকারের হয়। সুস্থ রক্তের হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে। সুস্থ ব্যক্তির রক্তের হিমোগ্লোবিন সাধারণত মসৃণ, গোলাকার এবং নমনীয় হয়। কিন্তু এসসিডিতে আক্রান্তদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের আকার অস্বাভাবিক হয়। এই ধরনের রোগীদের শরীরে অ্যানিমিয়া, অসম্ভব ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। এই কারণে জিনোটাইপ পরীক্ষা না করে যখন এই ধরনের ব্যক্তিরা বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেয় তখন ওইসব সন্তানের সিকল সেল ডিজেজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। প্রতিবছর নাইজেরিয়াতে দেড় লাখের বেশি শিশু এসসিডি রোগ নিয়ে জন্ম হয় যা কি না বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৬ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে গড়ে ২৪ শতাংশ মানুষ সিকল সেল জিন বহন করে। আর প্রতি হাজারে অন্তত ২০টি শিশুর জন্ম হয় সিকল সেল নিয়ে। >>-সিএনএন

No comments

Powered by Blogger.