সিলেটে বিএনপির সমাবেশ: আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান by ওয়েছ খছরু ও শাহনেওয়াজ বাবলু

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। গতকাল সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত থেকে তিনবার এই সমাবেশের মঞ্চ ভাঙা হয়েছে। তারপরও দলের নেতাকর্মীদের অদম্য সাহসের কারণে আজকের এই প্রোগ্রাম সফল হয়েছে। এখানে চারদিকে আমি নূর দেখতে পাচ্ছি। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রের নূর। এটা হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের নূর। কিন্তু এই সরকার আমাদের এই নূরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা পুলিশ দিয়ে চারদিকে গ্রেপ্তার চালাচ্ছে। তারা মনে করেছে গ্রেপ্তার করে এই সমাবেশ বন্ধ করে দেবে। এই সরকার কী চায়? তারা কেন এই সমাবেশকে ভয় পায়। যদি ভয় না পেতো তাহলে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগতো না। সমাবেশের মঞ্চ ভাঙতো না। তারা জনগণকে একত্র হতে দিচ্ছে না। তারা জানে জনগণ যদি একত্র হয় তাহলে এই সরকার একদিনও টিকে থাকতে পারবে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বৈধ সরকার নয়। কারণ তারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় নাই। তারা আগের দিন রাতেই ভোট ডাকাতি করেছে। এই ভোট ডাকাতি শুধু আওয়ামী লীগই করে নাই। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। তারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা কখনো জনগণের সরকার হতে পারে না। তারা জণগণকে নিজেদের শত্রু মনে করে। তারা এই দেশটাকে সুপরিকল্পিতভাবে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা একটা একটা করে রাষ্ট্রের সকল ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে বিচার ব্যবস্থায় অবিচার চলছে। এই সরকার দেশের বিচার বিভাগগুলোকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। পুলিশ প্রশাসনকে তারা সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে। গত ছয় বছর ধরে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। এমন শত শত পরিবার তারা তাদের সদস্যদের হারিয়েছে। এই সরকার আমাদের দশ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই সরকার বলে সারা দেশে নাকি এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। দেশে এমনভাবেই উন্নয়ন বইছে যে আজ সারা দেশেই ক্যাসিনো। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে জুয়ার আসর। দেশে আজ মেগা লুট হচ্ছে। দেশটা লুটেরাদের দেশে পরিণত হয়ে গেছে। তারা যদি ক্ষমতায় থাকে এই দেশ আর আগাবে না। এই দেশ নিরাপদ থাকবে না। দেশের মানুষ নিরাপদ থাকবে না। তাই এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর তাকে মুক্ত করতে হলে আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই আমাদের সকলকে আগামী আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এর একটি টাকাও এদিক-সেদিক হয়নি। আমি বলি কী ম্যাডামকে যদি এই মামলায় জেলে থাকতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাদেরতো ৫০০ বছর জেল হবে। এই সরকার অবৈধ সরকার। তাই তাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলে লাভ নেই। ম্যাডামের মুক্তির জন্য রাজপথের কোনো বিকল্প নাই। তাই আসুন আমরা এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শপথ নিই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাহ্‌হের শামীম। সমাবেশ পরিচালনা করেন- জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী ও মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও তাহসিনা রুশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, কামরুজ্জামান রতন, শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নাসির হোসাইন, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জিকে গৌছ, মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুুল কাহির চৌধুরী, সহ সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার, আবদুল মান্নান, এটিএম ফয়েজ, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম, জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুুল আহাদ খান জামাল, হুমায়ূন আহমদ মাসুক, হাসান পাটওয়ারী রিপন, আবুল কাশেম, শামীম আহমদ, সিটি কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সালেহা কবির সেপী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, যুবদল নেতা নজিবুর রহমান নজিব, সাদিকুর রহমান, জেলা ছাত্রদল সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, জেলার সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি হাসান, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, মহানগর নেতা এমদাদ হোসেন সহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.