শামীমের ডেরায় আনাগোনা ছিল ভিআইপিদের by আল আমিন

টেন্ডার মুঘল জি কে শামীমের অফিসে আনাগোনা ছিল অনেক ভিআইপি’র। ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সম্পর্ক থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও নানা তদবির নিয়ে আসতেন। ওইসব ভিআইপি সেখানে যাওয়ার কারণে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। শুধু ভিআইপিরা নয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কথিত কিছু সাংবাদিকের অবাধ বিচরণ ছিল তার ডেরায়। গুলশান নিকেতন আবাসিক এলাকা হওয়ার পরও ক্ষমতার জোরে তিনি একটি পুরো বাসাকে তার আবাসন কোম্পানি জিকে বিল্ডার্স এর আলিশান অফিস বানিয়েছিলেন।
যখন তিনি বাসা থেকে অফিসে যেতেন বা অফিস থেকে বের হতেন সবসময় গাড়ির সাইরেন বাজিয়ে আসা যাওয়া করতেন। সড়ক দখল করে রাখা হতো  শামীমের অফিসের এবং সেখানে আসা যাওয়াদের গাড়িগুলো। এছাড়াও শামীমের দেহরক্ষীরা ছিল আরও বেপরোয়া। তাদের কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী ছিলেন ত্যাক্ত-বিরক্ত। শামীম র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ায় এলাকাবাসী যেমন খুশি তেমনি তার কঠোর শাস্তিও দাবি করেছেন। শুক্রবার বিপুল পরিমাণ অর্থ, অস্ত্র ও মদসহ র‌্যাব গ্রেপ্তার করে মাফিয়া ডন শামীমকে। তার নামে গুলশান থানায় ৩ টি মামলা হয়েছে। তিনি এখন পুলিশি রিমান্ডে আছেন।
গতকাল সকালে শামীমের অফিস গুলশান নিকেতনের এ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর চারতলা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের মূল গেটে তালা লাগানো। অফিসের দুই নিরাপত্তা প্রহরী অফিসটি পাহাররত। তারা জানালেন, গত দুইদিন ধরে অফিসটি বন্ধ রয়েছে। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ আসেনি। অভিযানের পরও আইন-শৃংখলা বাহিনীর একটি দল অফিসে এসে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন।
নিরাপত্তা রক্ষী মো. সেলিম জানান, অফিসে লোকজন আসছেন না। দুইদিন আগে এক কর্মকর্তা এসে কিছু কাগজপাতি নিয়ে গেছেন। আরেক নিরাপত্তারক্ষী লিংকন হোসেন জানান, কয়েকদিন আগেই অফিস ছিল জমজমাট। অনেক লোকজন আসতো। আমরা নাম এন্ট্রি করতাম। কেউ কেউ রিসিপশনে এসে বসে থাকতো। সিরিয়াল ধরে স্যার যাকে ডাকতেন তাকে আমরা নিয়ে যেতাম। কিন্তু, হঠাৎ করে সব ছন্দ পতন ঘটেছে। শামীমের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো: দিদারুল আলম জানান, স্যার এখন হাজতখানায়। একারণে অফিসে যাওয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্ড এর এক কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানান, শামীমের উত্থান শুরু হয় মূলত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ঈসমাইল হোসেন সম্রাট ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি  মোল্লা কাউছারের আস্থাভাজন হওয়ার পর। প্রত্যেক সপ্তাহে তারা শামীমের অফিসে আসতেন। আড্ডা দিতেন। কোন কাজ কিভাবে ভাগবাটোয়ারা করবেন এজন্য তারা মিটিং করতেন। অফিসের আলিশান কনফারেন্স হলে তারা ওই বৈঠক করতেন। তাদের জন্য আয়োজন করা হতো নানা পদের খাবার। সঙ্গে থাকতো পানীয়।
সূত্র জানায়, ওই অফিসে দুই নেতার অবাধ যাতায়াত থাকার কারণে অন্যসব নেতাকর্মীরা তার অফিসে ভিড় করতো। তারা শামীমকে সমীহ করে চলতেন। সূত্র জানায়, দুই নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেন্ডার ও তদবিরের জন্য শামীমের দরবারে হাজির হতেন। করতেন নানা দেনদরবার। কাজের বিনিময়ে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করতেন। শামীমের অফিসের পাশের ৯৭ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো: মাহেদুজ্জামান জানান, শামীম যেভাবে চলাফেরা করতেন মনে হতো যেন ভিআইপি তিনি। তিনি যখন ৫ নম্বর রোড দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকতেন তখন সব গাড়িগুলো তার দেহরক্ষীরা সড়কে থামিয়ে দিতো।
আরেক বাসিন্দা নাজিয়া চৌধুরী জানান, শামীমের বহরে তিনটি গাড়ি থাকতো। একটি আগে আরেকটি পিছে। মধ্যে খানে শামীমের গাড়ি। প্রত্যেক গাড়িতে উচ্চ শব্দে সাইরেন বাজাতেন চালকরা। রাতদিন বলে কোন কথা ছিল না। বিষয়টি নিকেতনের অভিভাবকদের ক্লাবে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং উল্টো তারাই ক্লাবের লোকজনকে হুমকি দিয়েছেন। শামীম ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলতেন এজন্য কেউ  পুলিশকে কোন কথা জানাতে চাননি। নিকেতনের ১১৪ নম্বর বাসার শারমিন নামে এক গৃহকর্মী বলেন, শামীমের দেহরক্ষীদের লোকজনের ব্যবহার অনেক খারাপ। কিছুদিন আগে সে গাড়ি নিয়ে নিকেতনে ঢুকছিল। এসময় এক প্রাইভেট কার চালক গাড়ি নিয়ে তার বহরের সঙ্গে ঢুকে যায়। এ কারণে শামীমের দেহরক্ষীরা তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে দিয়েছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো: আমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশ শামীমকে প্রাথমিক জিজ্ঞামসাবাদ করেছে। তারই সূত্র ধরে তদন্ত চলছে।

No comments

Powered by Blogger.