দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টার চালানো দুঃসাহসী তরুণী by ওয়াসিদ রাজা

লুয়ানা তোরেস
জীবনের বাঁক হুট করে বদলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা অনুমান করার সাধ্যি কার! লুয়ানা তোরেসও হয়তো জানতেন না, অর্থনীতির জটিল অধ্যায় সমাধান করতে করতে ১৮০ ডিগ্রি মোড় নেবে তার জীবনযাত্রা। চাহিদা-জোগানের সমষ্টি ছেড়ে অর্থনীতির এই ছাত্রী আকাশপথে উড়াল দিয়ে এভিয়েশন জগতে রাতারাতি খ্যাতি পেয়ে গেছেন।
ভাইকে দেখে হেলিকপ্টারের পাইলট হওয়ার স্বপ্নটা আরও বড় হয়ে লুয়ানা তোরেসের মনে বাসা বাঁধে। ভাইয়ের স্ত্রী আকাশপথের রোমাঞ্চ দারুণভাবে উপভোগ করছেন দেখে তা বড় হয় আরও। নিজের ভাবী মেয়ে হয়ে পাইলট হওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজ করতে পারেন— এটাই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল লুয়ানার মধ্যে। ব্যস, অর্থনীতি ছেড়ে নেমে পড়লেন হেলিকপ্টার পাইলট হওয়ার মিশনে।
লুয়ানা তোরেস
বিমান কিংবা হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে মেয়েদের কাজ করা নতুন নয়। তবে তাদের চেয়ে লুয়ানা তোরেস আলাদা। একজন মেয়ে হিসেবে বিশ্বের এমন সব জায়গায় তিনি হেলিকপ্টার নিয়ে গেছেন, যা খুব বেশি দেখা যায় না। সেইসব দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে তারকা বনে গেছেন ২৯ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তরুণী। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার এখন ১ লাখ ৭৪ হাজার।
অর্থনীতিতে ডিগ্রি থাকা লুয়ানা তোরেসের আকাশে ওড়ার ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই। পড়ালেখার একটি প্রোগ্রামে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে প্রথমবার হেলিকপ্টারে ওড়ার অভিজ্ঞতা হয় তার। সেই যে ইচ্ছের বীজটা মনে বুনে নিলেন, এরপর ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে হেলিকপ্টারের প্রশিক্ষণ কোর্স শেষে কানাডায় গিয়ে পেয়েছেন বাণিজ্যিক লাইসেন্স। তার গলায় এখন ঝোলে হেলিকপ্টার আদলের নেকলেস।
লুয়ানা তোরেস
লুয়ানা তোরেস
কীভাবে এভিয়েশন দুনিয়ায় এলেন, সেই বর্ণনা দিয়েছেন লুয়ানা এভাবে— ‘আমি সবসময় ভাবতাম আমার ভাই দারুণ একজন মানুষ, কারণ সে হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কাজ করেছে। এরপর দেখলাম আমার ভাবীও পাইলট। ওই সময় ভাবতাম, আমার ভাবী কী দারুণ কাজই না করছেন। কারণ মেয়েদের জন্য এটা বিরল ব্যাপার, বিশ্বে খুব বেশি মেয়ে বিমান চালানোর সঙ্গে যুক্ত নয়।’
প্রশিক্ষণের দিনগুলোতে লুয়ানা তোরেস
প্রশিক্ষণের দিনগুলোতে লুয়ানা তোরেস
সেই ইচ্ছে পূরণ হলো কীভাবে? লুয়ানা বললেন, ‘২০১৪ সালে ব্রাজিলে কোর্স শুরু করে হেলিকপ্টার চালানোর লাইসেন্স পাই প্রথম। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে তালিম নিয়ে পাই দ্বিতীয় লাইসেন্স। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখানেই এ বছরের মার্চে পেয়েছি বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার চালানোর লাইসেন্স।’
২০১৫ সালে প্রথম ফ্লাইট চালানোর সময় লুয়ানা তোরেস
২০১৫ সালে প্রথম ফ্লাইট চালানোর সময় লুয়ানা তোরেস
প্রথম হেলিকপ্টার চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছান লুয়ানা। ভালোবাসার ককপিটে বসে দুর্গম সব জায়গায় উড়ে বেড়ান তিনি। বরফে ঢেকে থাকা পাহাড়-পর্বতের ওপর দিয়ে উড়ে বেড়ানোর রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য তার কাছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ওই জায়গার রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে ভোলেন না। তার সেইসব ছবিতে ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার লাইক পড়ে।
তবে ইনস্টাগ্রাম দিয়ে নয়, অন্যভাবে তারকা হতে চান লুয়ানা। দুর্গম এলাকায় বন্দি কিংবা কঠিন পরিস্থিতিতে বিপদে পড়া অসহায় মানুষদের উদ্ধার করা তার জীবনের এখন অন্যতম লক্ষ্য। এভাবে যদি মানুষের মন জয় করা যায়, তাহলেই আসল সন্তুষ্টি আসবে আকাশজয়ী এই ব্রাজিল-কন্যার মনে।
লুয়ানা তোরেস
লুয়ানা তোরেস
হেলিকপ্টার চালানো ছাড়াও ব্লগিং উপভোগ করেন লুয়ানা। নিজের ওয়েবসাইটে ফ্যাশন, সৌন্দর্য, ফিটনেস ও এভিয়েশন নিয়ে লেখালেখি করেন তিনি।
>>>সূত্র: ডেইলি মেইল

No comments

Powered by Blogger.