দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশিদের দোকান লুট, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ

বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তাদের দোকানপাট লুট হচ্ছে। গাড়ি, লরিতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এমন অস্থিরতায় এরই মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। তারা স্থানীয় নাকি বিদেশি তা জানা যায়নি। এমন অবস্থায় ‘বিদেশি বিরোধী সহিংসতার’ ভয়াবহতায় কড়া নিন্দা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামফোসা। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, অন্য দেশের নাগরিকদের ওপর দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো নাগরিক হামলা করবে এটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিদেশি বিরোধী ভয়াবহ এই সহিংসতার কারণে সোমবার জোহানেসবার্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক ডজন মানুষকে।
এ বিষয়ে নাগরিকদের সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে আফ্রিকার অন্য সরকারগুলো। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামফোসা টুইটারে একটি ভিডিওতে এ অবস্থার নিন্দা জানিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, বিদেশি নাগরিকরা পরিচালনা করেন এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা এটা হতে দিতে পারি না। আমি চাই অবিলম্বে এটা বন্ধ হোক। অন্যদিকে আলাদাভাবে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। এতে সহিংসতাকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সোমবার যখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে তখন তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও হাতবোমা ছুড়তে হয়েছে। এ সময় বিদেশিদের বিভিন্ন দোকানপাটে লুট হয়েছে। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জোহানেসবার্গের আলেকজান্দ্রা শহরে সহিংসতা অব্যাহত ছিল মঙ্গলবারও। বিবিসির সাংবাদিক নোমসা মাসেকো বলছেন, ওই শহরের কিছু উত্তেজিত অধিবাসী শহরটি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেয়ার দাবি তুলেছে।
নাইজেরিয়ার এক ব্যবসায়ীর দোকান লুট করা হয়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ ও মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাকে তিনি ক্রিমিনাল অ্যাটাক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বলেন, এটা হলো বিদেশিদের বিরুদ্ধে হামলা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, লেক্কি এলাকার লাগোস শহরে দক্ষিণ আফ্রিকান সুপার মার্কেট সোপরাইটে বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এই সুপার মার্কেটের বাইরে একটি রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে দুটি মৃতদেহ। কাছাকাছি ট্রাফিক পয়েন্টে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এর আরোহীরা পালিয়ে গেছেন। তবে হতাহতের বিষয়টি সরকার এখনও স্বীকার করেনি।
নিজ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে এমন ব্যবহারে নাইজেরিয়ার অসন্তোষ প্রকাশ করে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন দূত পাঠিয়েছেন নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশটির হাইকমিশন থেকে এ পরিস্থিতিকে নৈরাজ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে। নাইজেরিয়া সরকার অভিযোগ করেছে, জোহানেসবার্গে নাইজেরিয়ান মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়েছে। ফলে কি ঘটেছে তা রিপোর্ট করতে আহ্বান জানানো হয়েছে নাইজেরিয়ান হাইকমিশন থেকে।
অন্যদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে ইথিওপিয়ার দূতাবাস। যেকোনো রকম সংঘাত, লড়াই থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে। দামি গহনা পরে বাইরে বেরুতে বারণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা এড়িয়ে চলতে লরি চালকদের পরামর্শ দিয়েছে জাম্বিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে বিদেশি লরি চালকদের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদভিত্তিক সাইট আইওএল রিপোর্ট করেছে যে, বিপুল সংখ্যক যানবাহন লুট করা হয়েছে। এ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ বিষয়কমন্ত্রী বেকি সেলে সোমবার বলেছেন, বিদেশিভীতির চেয়ে ক্রিমিনালিটি বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন সহিংসতায়।

No comments

Powered by Blogger.